sliderআন্তর্জাতিক সংবাদশিরোনাম

মিথ্যা প্রচারেই রাখাইনে উত্তেজনা, দাবি সু চি’র

মিয়ানমারের নেত্রী আং সান সু চি আজ রোহিঙ্গা সংকটকে পুরোপুরি ভুয়া খবর এবং মিথ্যে প্রচারণা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মিথ্যে প্রচারণা চালিয়ে রাখাইনে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টিতে উসকানি দেয়া হচ্ছে।
মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী যেভাবে নির্বিচারে রোহিঙ্গাদের হত্যা করছে এবং তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে, তা নিয়ে তীব্র আন্তর্জাতিক সমালোচনার পর আজ তার দফতর থেকে এই বিবৃতি দেয়া হয়।
মিয়ানমারের একজন মন্ত্রী দাবি করেছেন, রাখাইনে রোহিঙ্গা জঙ্গীরাই রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে যাতে সেখান থেকে বেসামরিক লোকজন পালিয়ে যায়।
সর্বসাম্প্রতিক রোহিঙ্গা সঙ্কট শুরু হবার পর মিস সু চি এই প্রথম এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন এবং বলেছেন অসত্য খবর প্রচার করে রাখাইনে উত্তেজনা ছড়ানো হচ্ছে।
জাতিসংঘ বলছে তাদের হিসাব অনুযায়ী এক লাখ ৪০ হাজারের ওপর রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরাও বলছেন সেনাবাহিনীর গণহারে হত্যার অভিযান থেকে বাঁচতেই রোহিঙ্গারা পালাচ্ছে।
কিন্তু মিয়ানমার সরকারের একজন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাউং তুন আজ নেপিডোতে এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ‘রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে সারা বিশ্বে যেভাবে মিথ্যা খবর প্রচার করা হচ্ছে তাতে আমরা গভীরভাবে হতাশ ও দু:খিত। জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে এসব খবর লেখা হচ্ছে যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়।’
সু চিও একই ধরনের মন্তব্য করে বলেছেন সন্ত্রাসীদের স্বার্থ উসকে দিতে ভুয়া খবর প্রচার করে উত্তেজনা ছড়ানো হচ্ছে।
তার দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইপ এরদোয়ানকে মিস সু চি টেলিফোনে একথা বলেছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে সু চিকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের সুরক্ষা না থাকার বিষয়টা তিনি অন্য অনেকের থেকে ভালোই বোঝেন।
তার ভাষায় মিয়ানমারের সব নাগরিকের রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার, সেই সাথে তাদের মানবাধিকার নিশ্চিত করতেই তার দেশ কাজ করছে।
তবে সু চি’র এই বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন তার জীবনীকার জাস্টিন উইন্টেল। তিনি সোজাসুজি বলছেন, ‘আমি তার এ মন্তব্যে হতবাক। তার এ মন্তব্য তো তাকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাতারে ফেলে দিচ্ছে! তিনি কার্যত দেশের নেতা হলেও আসলে তিনি এখন সেনা বাহিনীর পকেটে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সম্পর্কে তিনি সবসময়ই কিছুটা অস্পষ্ট – কারণ দেশটির সেনাবাহিনী গড়ে তুলেছিলেন তার বাবা। সু চি হাড়ে মজ্জায় বার্মিজ। আমার বলতে খারাপ লাগছে – কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে মিয়ানমারের পশ্চিমে রাখাইনে যা ঘটছে তা চরম জাতিবিদ্বেষী। সেখানে মুসলিম রোহিঙ্গাদের প্রতি সমন্বিত বিদ্বেষ রয়েছে।’
রোহিঙ্গাদের সমর্থনে বা তাদের দুদর্শা লাঘবে সু চি এগিয়ে না আসার কারণে তিনি আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন।
মিয়ানমারে সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত মার্ক ক্যানিং বিবিসিকে বলেছেন তিনি রাজনৈতিক চাপে রয়েছেন। বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদ সেদেশ যেভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে তাকে সমর্থন না করা তার জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে এবং তার ভাষায় ‘সু চি এখন মানবাধিকারের প্রতীক নন – তিনি পুরোপুরি একজন রাজনীতিক।’
তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী মেভলুত কাভুসঘলুও মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রতি আচরণের নিন্দা করেছেন। আজারবাইজান সফরে গিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন তিনি বাংলাদেশে যেতে চান এবং রাখাইন থেকে সেখানে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলতে চান।
তিনি বলেন, ‘এটা দু:খজনক যে বিশ্ববাসীর চোখের সামনে এই মর্মান্তিক অমানবিক ঘটনা ঘটছে। আমরা এখান থেকে বাংলাদেশ যাব ও সীমান্ত এলাকায় যাব। রাখাইনে আগেও এধরনের ঘটনা ঘটেছে। আমরা রোহিঙ্গা ভাইদের সাথে কথা বলব যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে।’
তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন রাখাইন সমস্যার একটা স্থায়ী সমাধান খোঁজা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button