sliderজাতীয়শিরোনাম

“মার্চ ফর গাজা” ঢাকায় গণজাগরণ ও সংহতির অভূতপূর্ব প্রকাশ


আমির হোসেন সজিব: বর্তমান বিশ্বে ফিলিস্তিনের জনগণের উপর ইসরাইলি বর্বরতা ও গণহত্যার বিরুদ্ধে যে আন্তর্জাতিক প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে, তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশেও ব্যাপক গণজাগরণের প্রস্তুতি চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় ১২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ঢাকার রাজপথে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে “মার্চ ফর গাজা”—একটি বিশাল শান্তিপূর্ণ মিছিল ও মানবতার সমাবেশ।

প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ-এর ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচিটি শাহবাগ থেকে শুরু হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে শেষ হবে। আয়োজকদের দাবী অনুযায়ী, এটি হবে ঢাকার ইতিহাসে ফিলিস্তিনের পক্ষে সর্ববৃহৎ সমাবেশ। এতে অংশ নেবেন দেশের খ্যাতিমান ইসলামি স্কলার, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিবিদ, ক্রীড়াবিদ ও সাধারণ জনগণ।
কর্মসূচির পটভূমিঃ
ফিলিস্তিনে চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনে হাজার হাজার নিরীহ নারী, শিশু ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। গাজা পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে। এর বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্ব এবং মানবতাবাদী শক্তির মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। বাংলাদেশের জনগণও বরাবরই ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এসেছে। “মার্চ ফর গাজা” তারই প্রমাণ।
মার্চের উদ্দেশ্য ও বার্তা
১. ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সমর্থন জানানো।
২. ইসরাইলের দখলদারিত্ব ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা জানানো।
৩. বাংলাদেশ সরকারের প্রতি শক্ত অবস্থান গ্রহণের আহ্বান।
৪. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো।
৫. দেশের জনগণের মধ্যে মানবিক চেতনা জাগানো ও ফিলিস্তিন বিষয়ে সচেতনতা তৈরি।
উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গঃ
এই মার্চে যাঁরা উপস্থিত থাকবেন বা সমর্থন জানিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দেশের খ্যাতিমান ইসলামি চিন্তাবিদ, জনপ্রিয় বক্তা, রাজনীতিবিদ ও ক্রীড়াজগতের তারকারা।
ইসলামি স্কলার ও বক্তারাঃ
ড. মিজানুর রহমান আজহারি: আন্তর্জাতিক মানের ইসলামিক চিন্তাবিদ ও বক্তা, যিনি তার বক্তব্যে সবসময় মানবিকতা ও বিশ্বশান্তির পক্ষে থাকেন।
শায়খ আহমাদুল্লাহ: জনসচেতনতা তৈরিতে অবদান রাখা এক প্রভাবশালী ইসলামিক বক্তা, যিনি তাঁর ফেসবুক ও ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে ফিলিস্তিন ইস্যুতে বারবার সরব হয়েছেন।
মুফতি রেজাউল করিম আবরার: জাতীয় উলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদের সেক্রেটারি ও বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ।
মাওলানা মামুনুল হক: বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের আমির এবং দীর্ঘদিন ধরে ফিলিস্তিনের পক্ষে সোচ্চার।
মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজী: ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব, যিনি আগেও মানবিক ইস্যুতে সোচ্চার ভূমিকা রেখেছেন।
রাজনীতিবিদ ও সিভিল সোসাইটি প্রতিনিধিঃ
মাহমুদুর রহমান: ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক এবং রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে এক দৃঢ় কণ্ঠ।
সালাহউদ্দিন আহমদ: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, যিনি দীর্ঘদিন থেকে আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও ফিলিস্তিন ইস্যু নিয়ে কথা বলে আসছেন।
হাসনাত আব্দুল্লাহ: জাতীয় নাগরিক পার্টির (দক্ষিণাঞ্চল) সংগঠক।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ: বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক। তিনি ফিলিস্তিন ইস্যুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই বার্তা দিয়েছেন।
মো. আবু সাদিক (কায়েম): বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক।
সমাবেশের প্রস্তুতি ও কর্মপন্থাঃ
সমাবেশের আয়োজনকারীরা জানিয়েছেন, এদিন দুপুর ৩টায় শাহবাগে সমবেত হয়ে মিছিল শুরু হবে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে বক্তব্য ও দোয়ার মাধ্যমে কর্মসূচির সমাপ্তি হবে।
শান্তিপূর্ণ মিছিলঃ কোন ধরণের সহিংসতা পরিহার করে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।
ফিলিস্তিনি পতাকা, প্ল্যাকার্ড ও পোস্টারঃ মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা ফিলিস্তিনের পতাকা, ব্যানার ও বিভিন্ন মানবিক বার্তা সংবলিত পোস্টার বহন করবেন।
বক্তব্য ও দোয়া মাহফিলঃ ইসলামি চিন্তাবিদরা গাজা পরিস্থিতি নিয়ে বক্তব্য দেবেন এবং শহীদদের জন্য দোয়া করবেন।
লাইভ সম্প্রচার: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
জনমত ও অংশগ্রহণকারীদের অনুভূতিঃ
অনেকেই জানিয়েছেন, তারা এই সমাবেশে অংশ নেবেন শুধু মুসলিম হিসেবে নয়, বরং একজন মানুষ হিসেবে, একজন মানবতাবাদী হিসেবে।
রিজওয়ান হোসেন, ঢাকার এক শিক্ষার্থী বলেন,
“আমি এই মার্চে যাচ্ছি, কারণ আমি দেখতে পারছি, ফিলিস্তিনের শিশুরা আজ স্কুলে যেতে পারে না, খাবার পায় না। তাদের জন্য দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
সালমা আক্তার, একজন শিক্ষিকা বলেন,
“ইসলাম শান্তির ধর্ম। আর এই শান্তির ধর্মের অনুসারীরা যদি নির্যাতিত মানুষের পাশে না দাঁড়ায়, তবে শান্তির দাবি করাই বৃথা।”
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়াঃ
বাংলাদেশের মিডিয়ায় বিষয়টি ইতিমধ্যে আলোচিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবেও অনেকে বাংলাদেশের এই অবস্থানকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো মনে করছে, এধরনের গণপ্রতিক্রিয়া ইসরাইলের আগ্রাসন ঠেকাতে বিশ্বমতের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
সমালোচনার জবাবঃ
কিছু মহল থেকে দাবি করা হচ্ছে, এধরনের কর্মসূচি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তবে আয়োজকরা স্পষ্ট করে বলেছেন, এই মার্চ কোনো রাজনৈতিক দলের নয়, বরং এটি একটি মানবতার ডাক।
মুফতি রেজাউল করিম আবরার বলেন,
“এই সমাবেশ কোনো দলের, গোষ্ঠীর নয়। এটি গাজার নিষ্পেষিত, নির্যাতিত মানুষদের জন্য। মানুষ হিসেবে আমাদের এ দায়িত্ব আছে।”
সমাপ্তিঃ একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের অপেক্ষায় বাংলাদেশ।
১২ এপ্রিল ২০২৫ – এদিন বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বকে দেখাবে, তারা নির্যাতনের বিরুদ্ধে, মানবতার পক্ষে। গাজার মানুষের কান্না বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে পৌঁছেছে, আর তাই এই মিছিল। শুধু একটি প্রতিবাদ নয়, এটি হবে এক ঐতিহাসিক বার্তা—“We stand with Gaza!”
এই সমাবেশ শুধু ঢাকার রাজপথে নয়, পৌঁছে যাবে বিশ্ব বিবেকের দরজায়।
সংক্ষিপ্ত তথ্যঃ
তারিখ: ১২ এপ্রিল ২০২৫ (শনিবার)
সময়: বিকেল ৩টা
স্থান: শাহবাগ থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান
আয়োজক: প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ
মূল বার্তা: “Stand for Gaza, Stand for Humanity”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button