slider

মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে সাবেক যুব মহিলা লীগ নেত্রীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ

সোহেল রানা,সাভার: ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার খেতাবপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ঢাকার আশুলিয়া থানা বিএনপির সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম ওরফে পিয়ার আলী ও তার পরিবারের সদস্যরা। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আশুলিয়া থানা আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতাদের বাদ দিয়ে নিরপরাধ সাধারণ মানুষকে আসামি করাচ্ছেন তাঁরা। এছাড়াও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, নেতাকর্মীদের নির্যাতনসহ টাকার বিনিময়ে ওয়ার্ড কমিটিতে পদ বিক্রি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ রয়েছে আমিনুল ইসলাম ওরফে পিয়ার আলীর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয় বিএনপি নেতা-কর্মীদেরও গণহত্যার মামলায় ফাঁসাচ্ছেন তিনি।

এবার মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে যুব মহিলা লীগের সাবেক এক নেত্রীকে (৩৫) জোরপূর্বক ধর্ষনের অভিযোগ উঠেছে আমিনুল ইসলাম ওরফে পিয়ার আলীর বিরুদ্ধে। গত ১৬ সেপ্টেম্বর আশুলিয়া থানায় ধর্ষনের অভিযোগ দায়ের করেন ওই ভুক্তভোগী নারী। তবে অভিযোগ দায়েরের ১১ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো তদন্ত শেষ করতে পারেনি পুলিশ।

ভুক্তভোগী নারী অভিযোগ করে বলেন, অভিযুক্ত বিএনপি নেতা পিয়ার আলী প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তাকে বাঁচাতে আমাকে মেডিকেলে পরীক্ষার জন্য না পঠিয়ে মামলা নেওয়ার কথা বলে সকাল-বিকাল ঘুরাতে থাকে পুলিশ। পরে আমি জানতে পারলাম, বাহাত্তর ঘন্টা পেরিয়ে গেলে ধর্ষনের প্রধান আলামত নষ্ট হয়ে যায়। আলামত নষ্ট করার জন্যই মামলা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে আমাকে ঘোরানো হয়েছে।

অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম পিয়ার আলী (৫৭) আশুলিয়া থানার ধামসোনা ইউনিয়নের পবনারটেক এলাকার মৃত কাশেম আলীর ছেলে। বর্তমানে সে বিএনপির আশুলিয়া থানা কমিটির সহ-সভাপতি ও সভাপতি প্রার্থী।

থানায় দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট দেশে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পরিবর্তন হয়, এরপর থেকে ভুক্তভোগী ওই নারী নেত্রীকে নানা ভাবে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে বিএনপি নেতা পিয়ার আলী। এসময় ওই যুব মহিলা লীগ নেত্রীসহ তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা মামলায় নাম দেওয়ার হুমকী দেয়। হুমকির মুখে স্বপরিবারে বাসা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয় ভুক্তভোগী পরিবার। কিন্ত ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার ও মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে তার সাথে দেখা করতে বলেন। এসময় দেখা না করায় যুব মহিলা লীগের ওই নেত্রীসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের হুমকী দিতে থাকেন পিয়ার আলী। পরে বাধ্য হয়ে ১৬ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে দশটার দিকে দেখা করার জন্য ভাদাইল পিয়ার আলী স্কুলের ভিতরে বিএনপি নেতা পিয়ার আলীর ব্যক্তিগত অফিসে যান ওই যুব মহিলা লীগ নেত্রীকে। এসময় সাড়ে এগারোটার দিকে কৌশলে মুখ চেপে ধরে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পূর্বক ধর্ষন করে পিয়ার আলী। হুমকি দেয় ঘটনার বিষয়ে কাউকে না জানাতে।

ভুক্তভোগী যুব মহিলা লীগের নেত্রী বলেন, আমি আগে আওয়ামী যুব মহিলা লীগের একটি পদে ছিলাম। দীর্ঘদিন ধরে আমি রাজনীতির বাইরে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেশে সরকার পতনের পর সবার নামে মামলা হচ্ছে, বাড়ি ঘরে হামলা হচ্ছে। আমি এলাকায় মোটামোটি পরিচিত। আমার কোন কর্মকান্ড ছাত্র জনতার বিপক্ষে না থাকায় আমাকে কেউ কিছু বলেনি। ৫ আগস্টের পর মামলা দেওয়া শুরু হলে আমার প্রতিবেশী বিএনপি নেতা পিয়ার আলী আমাকে দেখা করতে খবর পাঠান। কিন্ত আমি যাই নাই। এরপর নানা ভাবে আমাকে তার কাছে নিতে চেষ্টা করেন। পরে পরিবারের সদস্যদের মানুষিক নির্যাতন ও হয়রানি শুরু করেন। তাই বাধ্য হয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র বাসা ভাড়া নিয়ে পরিবারের সঙ্গে বসবাস শুরু করি।

তিনি আরও বলেন, যখন এলাকা থেকে চলে আসি তখন কোন ভাবে আমার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে যোগাযোগ করেন। সেসময় আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের নামে হত্যা মামলা দায়ের হচ্ছে। তাই দ্রুত দেখা করতে হবে বলে জানায়। এজন্য তার কথা মত একটি স্কুলের নিজ ব্যক্তিগত অফিসে দেখা করি। সেখানে প্রথমে অনেকে ছিল। পরে তাদের বের করে দিয়ে মুখ চেপে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। এই বিষয়ে কাউকে জানালে প্রাননাশের হুমকি দেন পিয়ার আলী। যদি জানাই তাহলে আমি এবং আমার ছেলে ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নাম গণহত্যার মামলায় ঢুকিয়ে দিবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। ওই অফিসে সিসি ক্যামেরা রয়েছে, ফুটেজ দেখলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে।

মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি সেদিন থানায় মামলার জন্য যাই কিন্ত ওসি স্যার তদন্ত করে মামলা নেওয়ার কথা বলেন। তিন দিন পার হলেও তদন্ত করতে ঘটনাস্থলে যায়নি কেউ। আমি থানায় বার বার আসায় তিনদিন পর ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। এমনকি একদিন রাত বারোটার সময় মামলা নেওয়ার কথা বলে আমাকে থানায় ডেকে আনা হয়। আমি থানায় গিয়ে দেখি পিয়ার আলীর লোক ইদ্রিস থানায় বসে আছেন। পরে অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মজিবর রহমান আমাকে জানায় পিয়ার আলী ৩ লাখ টাকা পাঠিয়েছে এটা নিয়ে ঝামেলা শেষ করে ফেলো। আমি টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানাই এবং মামলা নিতে অনুরোধ করি। কিন্তু ওই রাতেও মামলা নেয়নি পুলিশ। পরে আমি বাসায় চলে আসি। এরপর থেকে এসআই মজিবর আমার কল রিসিভ করেন না। থানায় মামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে আমার সাথে কেউ কথা বলেন না।

অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আমিনুল ইসলাম ওরফে পিয়ার আলী বলেন, “আমি তাকে ডেকে আনি নাই। সে নিজে থেকে আমার অফিসে এসেছে। সে তো আওয়ামীলীগের সাথে জড়িত। মামলা হচ্ছে বিভিন্ন জায়গায়। তাই মামলা থেকে বাঁচতে আমার কাছে আসছিল।

তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অসুস্থ মানুষ। দীর্ঘ সময় ধরে আশুলিয়া এলাকায় ছিলাম না। তার সাথে এতো ভাল পরিচয় নেই। তবে তাকে চিনি। তাকে পরামর্শ দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। এছাড়া আর কিছু হয়নি।

ধর্ষনের ঘটনাটি মীমাংসার বিষয়ে তিনি বলেন, সে এসেছিল। আমার কাছে তিন লাখ টাকা চেয়েছে। কিন্ত আমি দেইনি, আমি কাউকে ধর্ষণ করি নাই।”

১২ দিন পেরিয়ে গেলেও ভুক্তভোগীর অভিযোগের তদন্ত শেষ হয়নি। তবে ঘটনার দিন দুপুরে থানায় একটি অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক মজিবুর রহমান। তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে তার সাথে বলে জানা যায়, ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক মামলা হওয়া উচিত তবে এই মামলার ক্ষেত্রে একটু ভিন্নতা রয়েছে। এখানে যে ভিকটিম রয়েছে সে যে বক্তব্য দিয়েছে তার সাথে অভিযুক্ত ঘটনার সময় নিয়ে একটু সন্দেহ রয়েছে। তাই অভিযোগ পাওয়ার পর পর দুজনের মোবাইল নম্বর প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

মামলা নিতে আর কত দিন লাগবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা নেওয়ার এখতিয়ার ওসি স্যারের। আমার কিছুই করার নেই। আমরা কোন আলামত নষ্ট করিনি। উল্টো সে মিমাংসার কথা বলে আমাদের কাছে সময় নিয়েছে।

এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের পর অবশ্যই অভিযুক্তকে আইনের আওতায় আনা হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button