এম এ কাইয়ুম চৌধুরী, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতাল গেটের পাশেই ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। এই ময়লার দুর্গন্ধে স্থানীয় বাসিন্দাসহ হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজনদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে বার বার আলোচনা করা হলেও পৌরসভা থেকে স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, একাধিকবার প্রতিকার চেয়েও কোনো সুফল মিলছে না। সমস্যাটি ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে শহরে যাওয়ার রাস্তার পাশে সদর হাসপাতাল গেট। সেখান থেকে ১৫ থেকে ২০ ফুট দূরেই এই ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। আশপাশের খাবার হোটেল, বাসাবাড়ি ও পৌর কাঁচাবাজারের আবর্জনা এখানে ফেলে রাখা হয়েছে। প্রতিনিয়ত ময়লা, খাবারের উচ্ছিষ্টসহ যাবতীয় আবর্জনা ফেলায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে পুরো এলাকায়। দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
মানিকগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানে সেবার মানোন্নয়ন ও পরিধি বৃদ্ধি করতে জেলার উন্নয়ন সভায় আলোচনা করা হয়। ওই সভায় হাসপাতালের পাশের ময়লা-আবর্জনার স্তূপ থাকার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘পৌরসভা হচ্ছে একটি জেলার বেডরুমের মতো। বেডরুম যদি অপরিচ্ছন্ন কিংবা অগোছালো থাকে তাহলে তার সৌন্দর্য যেমন থাকে না, ঠিক তেমনি পৌরসভার প্রাণকেন্দ্রে এমন আবর্জনার স্তূপ শোভা পায় না। এ বিষয়ে তিনি দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেন।’
বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার রহমান জানান, হাসপাতাল একটি জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের পাশেই দীর্ঘদিন ধরে আশপাশের হোটেল, বাসাবাড়ি ও পৌর কাঁচাবাজারের আবর্জনা ফেলে রাখা হয়। আগে অল্প অল্প আবর্জনা ফেলা হলেও এখন এর পরিমাণ অনেক বেশি বেড়ে গেছে। যে যেভাবে পারছেন ময়লা ফেলে যাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সিয়াম আহমেদ জানান, হাসপাতালের পাশের ময়লার স্তূপ থেকে দুর্গন্ধ ও রোগ জীবাণু ছড়াচ্ছে। পাশের রাস্তা দিয়েও চলাচল করার সময় বিকট গন্ধ আসে। যদিও প্রতিদিন পৌরসভার ট্রাক দিয়ে বেলা ১১টা কিংবা ১২টার দিকে ওই ময়লা নিয়ে ভাগাড়ে ফেলে। তারপরও এমন জনগুরুত্বপূর্ণ জায়গা থেকে এটি স্থায়ীভাবে সরানো উচিত।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজন হাফিজুর রহমান বলেন, ফার্মেসি থেকে ওষুধ কেনার জন্য বের হয়েছি। পাশের ময়লার স্তূপ থেকে বিকট গন্ধ বের হচ্ছে। রীতিমতো বমি হওয়ার অবস্থা। এ ব্যাপারে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানিয়েছেন তিনি।
মানিকগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মামুন ও রিফাত। তারা জয়রা এলাকার বাসিন্দা। প্রতিদিন সকালে তাদের এই ময়লার স্তূপের সামনে দিয়ে কোচিং করতে যেতে হয়। তারা জানান, এদিক দিয়ে যাওয়ার সময় প্রচণ্ড দুর্গন্ধে বমি চলে আসে। তখন আর কিছু ভালো লাগে না।
মানিকগঞ্জ সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম লিটন বলেন, মানিকগঞ্জ পৌরসভা প্রথম শ্রেণির পৌরসভা। সে হিসেবে পৌর শহরে নাগরিক সুবিধা নেই বললেই চলে। শহরে পরিচ্ছন্নতা চোখে পড়ে না। এ অবস্থায় বাড়তি দুর্ভোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে আবর্জনার এই ভাগাড়। লোকজন হাসপাতালে সেবা নিতে এসে প্রবেশপথেই দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নীরব ভূমিকায় থাকাটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) কাজী এ কে এম রাসেল জানান, বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর পৌর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। উন্মুক্তস্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় আশেপাশের পুরো এলাকাজুড়ে ব্যাপক পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। আর আবর্জনাগুলোকে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করা না হলে নানা রকমের রোগ বৃদ্ধির সম্ভাবনা থেকে যায়। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা না হলে ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তা ছাড়া জেলার প্রাণকেন্দ্রে থাকা জায়গাটি দেখতে দৃষ্টিকটু দেখায়।
এ ব্যাপারে পৌরকতৃপখ্য বলেন ‘হাসপাতালের পাশে অস্থায়ীভাবে যে ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয় সেই সমস্যা সমাধানের জন্য আমরা কাজ করছি। আমাদের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে সদর উপজেলার দীঘি ইউনিয়নের ভাটবাউর এলাকায় পৌরসভার ডাম্পিং স্টেশনের কাজটি সম্পন্ন হলে এই সমস্যা আর থাকবে না। তারপরও এখানে যেন মানুষ যত্রতত্র ময়লা ফেলতে না পারে শিগগির সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’