শিবালয় প্রতিনিধি: ৫২ বছর ধরে একটি টিনের ঘরে মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম চলে আসছিল। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। চার মাস পর সেটি নতুনভাবে সেজেছে। তবে সেটি রাজনৈতিক কার্যালয় হিসেবে নয়, বাণিজ্যিকভাবে তা ব্যবহৃত হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার উদ্বোধনের পর আজ বুধবার কার্যালয়টি মোবাইল ফোনের শো-রুম হিসেবে ব্যবহার করতে দেখা গেছে।
মালিক পক্ষের দাবি, জায়গাটি জেলা আওয়ামী লীগের নয়। ১৯৭২ সালে তারা ভাড়া নিয়েছিল। তবে আওয়ামী লীগের দাবি, জমি দখল মুক্ত করার বিনিময়ে জমির মালিক কার্যালয় করার জন্য ঘরটি জেলা আওয়ামী লীগকে দিয়েছিল।গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর ছাত্র-জনতা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি ভাঙচুর করে। এর পর জমির মালিকপক্ষ ভাঙা ঘরটি নতুন করে সংস্কার করে ভাড়ার জন্য নোটিশ টানিয়ে দেন।
সম্প্রতি দেখা গেছে, একটি মোবাইল ফোনের শো-রুমের জন্য ঘরটি নতুন করে মেরামত করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে তা শো-রুম হিসেবে উদ্বোধন করা হয়। আজ থেকে সেখানে শুরু হয় বাণিজ্যিক কার্যক্রম। এতে হারিয়ে যায় ৫২ বছর দখলে থাকা আওয়ামী লীগের কার্যালয়টি।
মোবাইল ফোন শো-রুমের মালিক ফজলে রাব্বি জানান, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়টির প্রকৃত মালিক দোকান ভাড়া দেওয়ার নোটিশ দেন। এর পর তিনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ৫ লাখ টাকা জামানত ও মাসিক ৩০ হাজার টাকা হিসেবে ভাড়া ঘরটি নিয়েছেন। বুধবার থেকে মোবাইল ফোনের শো-রুম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মফিজুল ইসলাম খান কামাল সমকালকে বলেন, ১৯৫৭ সালে ওই জায়গায় জেলা ছাত্রলীগ তাদের কার্যালয় করে। আর ১৯৭২ সাল থেকে তা নিজেদের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল জেলা আওয়ামী লীগ।
মাসিক ৬০ টাকা অফিস ভাড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কখনও ভাড়ার বিনিময়ে কার্যালয়টি নেওয়া হয়নি। তৎকালীন পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের এমপি আজাহার উদ্দিন জমির মালিক কলিম উদ্দিনের বাড়ির বেশ কিছু অংশ দখল করে নিয়েছিলেন। কলিম উদ্দিনের ছেলে আব্দুল আওয়াল ছাত্রলীগ করতেন। ১৯৭২ সালে আওয়ালের অনুরোধে আজাহার উদ্দিনের দখলে থাকা জমি উদ্ধার করে দেয় আওয়ামী লীগ। জমি উদ্ধারের বিনিময়ে মৌখিকভাবে তখন চুক্তি হয় যে, অফিসটি আওয়ামী লীগ ব্যবহার করতে পারবে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর ও বিএনপি ক্ষমতায় আসার পরও কার্যালয়টি আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ কার্যালয়টি ভাঙচুরের পর কলিম উদ্দিনের উত্তরসূরি তা দখল নিয়ে দোকান নির্মাণ করেছে।
এ বিষয়ে জমির মালিক কলিম উদ্দিনের নাতী শাহ্ আব্দুল রাজ্জাক টিপু বলেন, ১৯৭৬ সালে ৩ বছরের জন্য মাসে ৬০ টাকা হারে ভাড়া নিয়েছিলে আওয়ামী লীগ। প্রথম দুই-চার মাস ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। তার পর আর ভাড়া দেয়নি আওয়ামী লীগ। তিন বছর আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর একটা দরখাস্ত দেওয়া হয়েছিল জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য। ২০২৪ সালে মার্চ মাসে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে অফিসটি সরিয়ে নেওয়ার জন্য জেলা আওয়ামী লীগকে পরামর্শ দেওয়া হয়। এ বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মহিউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল সালাম জানতেন। তারা এক বছরের সময় নিয়েছিলেন। সরকার পতনের পর ছাত্ররা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভেঙে দেন। এর পর আমরা আমাদের জমিতে নতুন করে দোকান নির্মাণ করে তা ভাড়া দিয়েছি।
মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এস এ জিন্নাহ্ কবীর বলেন, আওয়ামী লীগ অন্যের জায়গা দখল করে তাদের কার্যালয় বানিয়েছিল। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর জমির প্রকৃত মালিকরা তা ফিরে পেয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম মহীউদ্দীন ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে থাকায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।