sliderস্থানীয়

মানিকগঞ্জে ত্রিপল হত্যা মামলার রহস্য উৎঘাটন, অভিযোগ পত্র দাখিল, আসামী গ্রেফতার

মুহাম্মদ আব্দুল জলীল, মাকিগঞ্জ : ভালোবেসে বিয়ের ২০ বছর পর স্ত্রী ও দুই কন্যা সন্তানকে গলা কেটে হত্যার অভিযোগে মানিকগঞ্জের ঘিওরের বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের আঙ্গার পাড়া গ্রামের ঘাতক আসাদুজ্জামান রুবেলকে (৪০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার ভোরে নির্মম এ হত্যার ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন রুবেলের স্ত্রী লাভলী আক্তার (৩৫), বড় মেয়ে বানিয়াজুরী সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছোঁয়া আক্তার (১৬) ও ছোট মেয়ে বানিয়াজুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী কথা আক্তার (১২)। ঘটনার পর রুবেল আত্মহত্যার জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে শুয়ে পড়লে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পুলিশে সোপর্দ করেন। এ ঘটনায় লাভলীর বাবা সাইজুদ্দিন বাদী হয়ে রুবেলকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন।
লাভলীর ভাই মো. আলম জানান, তাদের মধ্যে পারিবারিক কহল চলছিল। কলহের পরিণতি এভাবে হবে তা তিনি কল্পনাও করেননি।
এদিকে হত্যার দায় স্বীকার করে পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বর্ণনা দিয়ে রুবেল জানান, লাখ লাখ টাকা ঋণগ্রস্ত হওয়ায় ও মানসিক হতাশা থেকে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনি। ঘটনার রাতে কথা কাটাকাটির পর ঘুমিয়ে পড়েন স্ত্রী লাভলী। রাত আনুমানিক ৩টার দিকে প্রথমে ঘুমন্ত স্ত্রীর মাথায় লাঠি দিয়ে সজোরে আঘাত করতেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তখন স্ত্রীর কপালে চুমু দিয়ে মনে মনে মাফ চেয়ে নেয়। এরপর বালিশ দিয়ে মুখ চেপে ধরে মৃত্যু নিশ্চিত করতে ছুরি দিয়ে গলা কাটে। পরে ছোট মেয়ে কথা ও ছোঁয়াকে একইভাবে শ্বাসরোধ করে গলা কেটে হত্যা করে।
জানা গেছে, বিয়ের ২০ বছর হলেও নিজ বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে ১৫ বছর ধরে রুবেল একই গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে বসবাস করছিলেন। এর মধ্যে বিভিন্ন সময় নানা ব্যবসা করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন। এরপর দন্ত চিকিৎসার ওপর কোর্স করে পাশের বানিয়াজুরী বাসস্ট্যান্ডে দোকান নেন। দীর্ঘদিন সেখানে দন্ত চিকিৎসা করতে থাকেন।
সম্প্রতি ঈদের ৫দিন আগে এক রোগী শিরিন আক্তার(১৯)কে ভুল চিকিৎসা দিয়ে ১টি দাঁত উঠাতে দিয়ে সামনের পাটির ৫টি দাঁত তুলে ফেলে। ভুল চিকিৎসা দেওয়ায় স্থানীয় ৩নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদসহ কয়েকজন মিলে তাকে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করেন এবং ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন। এর পর থেকে রুবেল মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। মানুষজন তার কাছে সব মিলিয়ে প্রায় ১০থেকে ১২লাখ টাকা টাকার উপরে পান বলে পুলিশের কাছে জানান রুবেল। তবে দেড় লাখ টাকা জরিমানা করার কথা অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম। তিনি জানান, কোনো বিচার-সালিশ কিংবা জরিমানার সঙ্গে তিনি জড়িত নন।
লাভলীর ভাতিজা সাইফুল ইসলাম জানান, ওই জরিমানার টাকা রোববার দেওয়ার কথা ছিল।
আসাদুজ্জামান রুবেলের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান কথা ডেন্টাল কেয়ার এবং ছোঁয়া মেডিসিণ কর্নার পাশের ব্যাবসায়ী আনোয়ার আবুল কালাম আজাদসহ কয়েক জন ব্যাবসঅয়ী বলেন.রুবেল মানুষ হিসেবে খারাপ ছিলোনা খুব ভালো মানুষ ছিলেন।
স্বজনরা জানান, রুবেল তার বড় মেয়ে ছোঁয়াকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। ভালো পোশাক, ভালো খাবার প্রথমে তার হাতেই তুলে দিতেন। অভাব অনটনের সংসারেও কোনো কিছুর অভাব তাকে টের পেতে দেননি। দন্ত চিকিৎসাও শেখাচ্ছিলেন তাকে। লেখাপড়ায় ভালো ছিল বলে শিক্ষকরাও তাকে আদর করতেন। বাবা-মায়ের আশা ছিল লেখাপড়া শিখে ছোঁয়া একদিন অনেক বড় হবে। কিন্তু সেই মেয়ের স্বপ্নকে নিজ হাতেই শেষ করে দিলেন রুবেল। চঞ্চল প্রকৃতির ছোট মেয়ে কথা হাসিমাখা কথায় আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীকে মাতিয়ে রাখত। তাকে বেশি ভালোবাসতেন মা লাভলী। কথাকেও পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হলো মায়ের সঙ্গেই।
মেয়ে আর দুই নাতনি হারানো শোকে বিহ্বল হালিমা বেগম বলেন, সকালে হাঁটা শেষে মেয়ের ঘরে যাই। ডাকাডাকি করেও কারও সাড়াশব্দ না পেয়ে ঘরের শিকল খুলে দেখি রক্ত। খাটে শুয়ে আছে লাভলী ও দুই নাতনি। ডাক দিয়েও কোনো সাড়া না দেওয়ায় ধাক্কা দিয়ে দেখি, তাদের গলা কাটা। ঘরের মেঝেতে থোক থোক রক্ত।
স্থানীয় বালিয়াখোড়া ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আওয়াল খান ও স্থানীয়রা জানান, রুবেল অনেক টাকা ঋণগ্রস্ত ছিলো তার পর আবার ভুল চিকিৎসায় জরিমানর চাপ সব মিলিয়েই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। হতাশা থেকে এমন ঘটনা ঘটাতে পারেন বলে ধারণা করছেন তারা।
ঘিওর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) খালিদ মনসুর জানান, রুবেল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ময়না তদন্তের জন্য লাশ মানিকগঞ্জ হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্ত শেষে গ্রামের বাড়ীতে দাফন করা হয়েছে।
এক প্রেস বিঞ্জপ্তির মাধ্যমে জানান মানিকগঞ্জ জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার, জনাব মোহাম্মাদ গোলাম আজাদ খান পিপিএম-বার মহোদয় এবং শিবালয় সার্কেল অফিসারের প্রত্যক্ষ তদারকী ও দিক নির্দেশনায় ঘটনাস্থল হতে হত্যার কাজে ব্যবহৃত অস্ত্র (ধারালো দা) সহ রক্তমাখা জামা কাপড় উদ্ধার পূর্বক জব্দ করে। তাৎক্ষনিক ঘিওর থানা পুলিশ কর্তৃক অভিযান পরিচালনা করে হত্যার সাথে জড়িত সন্দেহে আসাদুজ্জামান ওরফে রুবেল (৪২)কে গ্রেফতার করা হয়।এরপর হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে ঘিওর থানার মামলা নং- ০২, তারিখ ০৮/০৫/২০২২ ইং, ধারা- ৩০২ পিসি রুজু করা হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button