
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে ফুলকপি। বিক্রি না হওয়ায় এসব ফুলকপি এখন গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। ফলে লোকসানের মুখে পড়েছেন কৃষকরা।
কৃষকরা বলেন, প্রতিবছর শীতকালীন সবজি হিসেবে ফুলকপির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চাহিদা থাকায় দামও ভালো পান তারা। লাভের আশায় চলতি মৌসুমে ফুলকপির চাষাবাদ করেন কৃষকরা। কিন্তু এ বছর নানা জাতের সবজিতে বাজার ভরে গেছে। পাশাপাশি ফুলকপির উৎপাদনও ভালো হয়েছে। তবে মুনাফার অংক পড়ে আছে শূন্যের ঘরে। প্রতিপিস কপির উৎপাদন খরচ যেখানে ১০-১৩ টাকা। সেখানে বর্তমান বাজারে চাষিদের প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩-৫ টাকায়। ফলে উৎপাদন খরচের অর্ধেকও উঠছে না।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে সাটুরিয়া উপজেলায় ২৪৯ হেক্টর জমিতে ফুলকপি ও ৫৫ হেক্টর জমিতে বাঁধাকপির আবাদ করেছিলেন কৃষকরা। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রতিবছরের মতো এবারও সবজির ভালো আবাদ হয়েছে।
কৃষক ছালাম হোসেন বলেন, আমি সাতবছর ধরে সবজি চাষ করি। গেল বছর ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর দুবিঘা জমি বাড়িয়ে ৬ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছি। এ বছর শুরুর দিকে দাম ভালোই ছিল। তখন আমাদের এলাকায় কপি বিক্রির সময় হয়নি। যখন বিক্রির সময় আসলো দাম কমে গেলো। এখনতো কেউ ফুলকপি কিনতে চায় না। বাজারে নিয়ে ৩-৪ টাকায় বিক্রি করতে হয়। যাতায়াত ভাড়া উঠানোর কষ্ট। তাই খাওয়াচ্ছি এসব ফুলকপি।
মজিবর নামের আরেক কৃষক বলেন, একবিঘা জমিতে ফুলকপির চাষ করেছি। এ জমিতে রোপণ করা পাঁচ হাজার চারায় উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রতি পিস ১০-১৩ টাকা। এখন ফুলকপির দাম প্রতিপিস ক্ষেতে বিক্রি করতে হচ্ছে ৩-৫ টাকা দামে। এটা এমন ফসল, পরিপক্ব হলে আর ক্ষেতে রাখা যায় না। রাখলে ক্ষেতেই নষ্ট হয়। উৎপাদন খরচই পাচ্ছি না। ঋণ কিভাবে পরিশোধ করবো চিন্তায় আছি।
কান্দাপাড়া গ্রামের কৃষক বাদশা মিয়া জানান, তার নিজের কোনো জমিজমা নেই। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে তাতে বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ফসলাদি উৎপাদন করে এবং সেগুলো বিক্রি করে সংসার খরচ চালায়। এ বছরও তিনি চলতি মৌসুমে ১২০ শতাংশ জমি বর্গাচাষে নিয়ে তাতে হোয়াইট স্টোন জাতের ফুলকপির আবাদ করেছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ বলেন, জেলায় তিনবার ফুলকপি আবাদ হয়ে থাকে। আগাম ফুলকপি যখন বাজারে চলে আসল ১০০-১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখে কৃষকরা ফাঁকা জমিতে ফুলকপি চাষ শুরু করে দিবেন। এখন সব ফুলকপি একযোগে বাজারে আসায় দাম কমে গেল।