sliderস্থানীয়

মানিকগঞ্জের ৩ উপজেলার ১৫০ জনপ্রতিনিধি লাপাত্তা, নাগরিক সেবা ব্যাহত

মানিকগঞ্জ: মানিকগঞ্জের ঘিওর, দৌলতপুর ও শিবালয় উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, জেলা পরিষদ সদস্য ও তিন উপজেলার ২২টি ইউনিয়ন পরিষদের মোট জনপ্রতিনিধির সংখ্যা ২৯৮ জন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন অন্তত ১৫০ জন জনপ্রতিনিধি।

কার্যালয় ছাড়ার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তারা এখনো কার্যালয়ে ফেরেননি। ফলে কাঙ্খিত সব সেবা না পেয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন নাগরিকেরা। সংশ্লিষ্ট দফতরের সচিবরা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সরকার পতনের দিন থেকে ঘিওর উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জনি, শিবালয় উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম খান, দৌলতপুর উপজেলা চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম তাদের দফতরে বসছেন না। এই তিন উপজেলার ৪ জন ভাইস চেয়ারম্যানও লাপাত্তা। তারা কোথায় রয়েছেন, কেউ বলতে পারছেন না। এদিকে কার্যালয়ে না বসার কারণে উপজেলা পরিষদের সব কাজ কার্যত বন্ধ রয়েছে। বঞ্চিত হচ্ছেন সব ধরনের নাগরিকসেবা থেকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘিওর উপজেলার ৭টি ইউপির মধ্যে- পয়লা ইউপির চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ, বড়টিয়া ইউপি’র শামসুল হক মোল্লা রওশন, সিংজুরী ইউপি’র চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান মিঠু ও নালী ইউপির আব্দুল কুদ্দুস মধু, এ চারটি ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ সমর্থিত। ঘিওর সদর ইউপি চেয়ারম্যান অহিদুল ইসলাম টুটুল যুবলীগের সাবেক নেতা ও মানিকগঞ্জ-১ আসনের সাবেক এমপি সালাউদ্দিন মাহমুদের ভাগিনা হওয়ায় সরকারের পদত্যাগের পর থেকেই গা-ঢাকা দেন। এছাড়াও বালিয়াখোড়া ইউপির আব্দুল আওয়াল খান ও বানিয়াজুরী ইউপির এস আর আনসারী বিল্টু বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান হওয়ায় তারা প্রকাশ্যে রয়েছেন এবং ইউনিয়ন পরিষদের কার্য্যক্রম সচল রেখেছেন।

দৌলতপুর উপজেলার আটটি ইউপির মধ্যে কলিয়া, চকমিরপুর, চরকাটারী, ধামশ্বর, বাঁচামারা, জিয়নপুর ইউপি’র চেয়ারম্যান আত্মগোপনে রয়েছেন। বিএনপি সমর্থিত খলসী ও বাঘুটিয়া ইউপি চেয়ারম্যানরা পরিষদে কার্যক্রম চালু রেখেছেন।

শিবালয় উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে তেওতা, আরুয়া, উথলী, শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যারিা রয়েছেন আত্মগোপনে। কার্যালয়ে বসে সেবা প্রদান করছেন উলাইল, শিবালয় ও মহাদেবপুর ইউপি চেয়ারম্যানরা।

এছাড়াও এই ২২ ইউনিয়নেরই অন্তত ১৩০ জন ইউপি সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য, ৩ উপজেলার ৬ জনের মধ্যে ৪ জন ভাইস চেয়ারম্যান, ৩ জন জেলা পরিষদ সদস্য রয়েছেন আত্মগোপনে। তারা সবাই আওয়ামী সমর্থিত ছিলেন। এসব প্রতিনিধিদের বেশিরভাগেরই ছিল দলীয় পদ পদবী। সেইসঙ্গে বন্ধ রয়েছে অনেকের মোবাইল ফোন।

নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা পরিষদে না থাকায় ব্যাহত হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দেয়া বিভিন্ন সনদ ও জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধনের মতো নাগরিক সেবা কার্যক্রম। সেবা নিতে আসা সাধারণ জনগণ পড়েছেন বিপাকে।

এসব ইউনিয়ন পরিষদের একাধিক সেবা প্রার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, পরিষদে চেয়ারম্যান-মেম্বার না থাকায় তারা দুর্ভোগে পড়েছেন। চেয়্যারম্যান অনুপস্থিত থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করে তিনি যেখানে বলছেন সেখানে গিয়ে কাঙ্খিত সেবা নিতে হচ্ছে। এতে ভোগান্তি যেমন বেড়েছে, সেইসঙ্গে খরচ হচ্ছে বাড়তি অর্থ ও সময়।

ঘিওর ইউনিয়নের মাইলাগী গ্রামের বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম জানান, বোনের মৃত্যুনিবন্ধনের জন্য ইউপি কার্যালয়ে যান তিনি। পরিষদ থেকে অনলাইনে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করলেও চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর প্রয়োজন। চেয়ারম্যান কার্যালয়ে না থাকায় তিন দিন যাবত ঘুরছি। জনদুর্ভোগ নিরসনে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যদের দ্রুত কার্যালয়ে ফেরার দাবি জানান তিনি।

বড়টিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম রওশন বলেন, পরিষদে উপস্থিত থাকতে না পেরে কার্যক্রম কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তবে, বাড়ি থেকেই যতদ‚র সম্ভব সেবা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। থানা পুলিশের কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হলে পরিস্থিতি বুঝে পরিষদে উপস্থিত হবেন বলেন জানান তিনি।

ইউপি সদস্য, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত সদস্যদের মধ্যে অন্তত ১৫ জনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে অনেকেরই মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে। যাদের সাথে কথা হয়েছে-তারা জানান, হামলা-আতঙ্কে এখনো পরিষদে আসতে পারছেন না।

ঘিওরের বানিয়াজুরী ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারন সম্পাদক এস আর আনসারী বিল্টু, শিবালয়ের মহাদেবপুর ইউপি চিয়ারম্যান মো: সাহজাহান এবং দৌলতপুরের খলসী ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর হমান বলেন, পরিষদে বসেই সাধ্যমতো নাগরিকদের সব সেবা প্রদান করে আসছি।

ঘিওর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান জনি ও শিবালয় উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম খানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাদের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, নাগরিক সেবা প্রদানে আমরা পুরোদমে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। রাজনৈতিক কারণে হয়তো অনেক জনপ্রতিনিধিরা কার্যালয়ে যাচ্ছেন না। নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে চেয়ারম্যান, সচিব, মেম্বার সবাইকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
নয়াদিগন্ত

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button