মহানবী সা.-কে কটূক্তি করার জের ধরে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে। বিভিন্ন দেশ ক্ষমতাসীন বিজেপির এক কর্মকর্তার করা ওই কটূক্তির প্রতিবাদে দিল্লির দূতকে তলব করছে, সরকারিভাবে ক্ষমা প্রার্থনার দাবি জানাচ্ছে। এমনকি ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র বিবেচিত সংযুক্ত আরব আমিরাতো নূপুর শর্মা ও নবীন জিন্দলের ওই বিষোদগারের নিন্দায় সামিল হয়েছে।
কূটনৈতিক পর্যায়ে ক্রোধ শুরু হওয়ার আগে অর্থাৎ রোববার পর্যন্ত বিজেপির ওই দুই নেতা নূপুর ও নবীনের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি নরেন্দ্র মোদির দলটি। মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিবাদ জানানোর কাজ শুরু করে কাতার ও কুয়েত। তারা ভারতীয় রাষ্ট্রদূতদের তলব করে প্রতিবাদ জানায়। এরপরপরই বিজেপি নূপুরের দলীয় সদস্যপদ স্থগিত করে, জিন্দলকে বহিষ্কার করে। এছাড়া যেকোনো ধর্মীয় ব্যক্তিকে অপমান করার ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার জানায়, বিজেপি কর্মকর্তারা নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধের পরিপন্থী কাজ করেছেন। দেশটি ধর্মীয় প্রতীকগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করার ওপর গুরুত্বারোপ করে।
এর আগে কুয়েত, কাতার, সৌদি আরব, ইরান, পাকিস্তান এবং আরো কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বিজেপি নেতাদের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে।
রোববার বিজেপি নেতাদের বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্যের জন্য ‘প্রকাশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা’ করার দাবি জানায় কাতার। ভারতের উপ-রাষ্ট্রপতি ভেনকাইয়া নাইডু বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানোর জন্য কাতার সফরের সময় দেশটি এই দাবি জানায়।
কায়রোভিত্তিক আলআজহার বিশ্ববিদ্যালয় বিজেপি নেতাদের ওই মন্তব্যকে ‘সত্যিকারের সন্ত্রাসবাদ’ হিসেবে অভিহিত করে বলে, এর ফলে ‘পুরো দুনিয়া ভয়াবহ সঙ্কট ও যুদ্ধে নিমজ্জিত হতে পারে।’
সৌদি আরবভিত্তিক মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগ জানায়, এ ধরনের মন্তব্য ‘বিদ্বেষ উস্কে’ দিতে পারে। জেদ্দাভিত্তিক ওআইসিও ভারতের ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ ও ‘সংকীর্ণমনা’ মন্তব্যের নিন্দা করে।
এছাড়া উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদ (জিসিসি) নূপুর শর্মার মন্তব্যের নিন্দা করে।
বাহরাইন, কুয়েত, ওমান, কাতার, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ জিসিসির সাথে ২০২০-২১ সময়কালে ভারতের বাণিজ্য ছিল প্রায় ৯০ বিলিয়ন ডলার।
ভারতের প্রবাসী শ্রমিকদের একটি প্রধান গন্তব্য হলো জিসিসিভুক্ত দেশগুলো। ভারতের এক কোটি ৩৫ লাখ প্রবাসী শ্রমিকের মধ্যে ৮৭ লাখই থাকে জিসিসিভুক্ত দেশগুলোতে।
তছাড়া কুয়েত তার মোট খাবারের ৯৫ ভাগই আমদানি করে ভারত থেকে। নূপুরের ওই মন্তব্যের পর কুয়েতের সুপারমার্কেট শ্রমিকেরা ভারতীয় চা ও অন্যান্য পণ্য জড়ো করে প্রতিবাদ জানায়।
সূত্র : আলজাজিরা
কুয়েতের সুপার স্টোর থেকে সরিয়ে ফেলা হলো ভারতীয় পণ্য
মহানবী সা.-কে নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি মুখপাত্র নূপুর শর্মার কটূক্তির প্রতিবাদে কুয়েতের সুপারমার্কেট থেকে সরিয়ে ফেলা হলো ভারতীয় পণ্যসামগ্রী। নূপুরের মন্তব্যকে ‘ইসলামভীতি’র উদাহরণ বলে আখ্যা দিয়েছেন কুয়েতের ওই সুপারমার্কেট কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে এ বিষয়ে সৌদি আরব, কাতার, কুয়েতের মতো উপসাগরীয় দেশসহ ইরানের ভারতীয় দূতকে ডেকে পাঠানো হয়েছে। নূপুরের মন্তব্যের জেরেই শুক্রবার উত্তরপ্রদেশের কানপুরে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
গত সপ্তাহে একটি টেলিভিশন চ্যানেলে এক বিতর্কসভায় ওই বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করেন বিজেপি নেত্রী। ওই ‘আপত্তিকর’ মন্তব্যের পর রোববার তাকে সাসপেন্ড করে বিজেপি। পাশাপাশি, নূপুরের মন্তব্যের সাথে বিজেপির আদর্শগত মিল নেই বলেও জানিয়েছেন দলীয় নেতৃত্ব। বিজেপির পক্ষ থেকে বিবৃতি জারি করে বলা হয়েছে, সমস্ত ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তারা। কোনো ধর্ম বা সম্প্রদায়কে অবমাননা করার আদর্শেও বিশ্বাসী নয়। নূপুর নিজে বলেছেন, ‘আমার মন্তব্যের জেরে যদি কারো ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত লাগে, তবে নিঃশর্তভাবে তা প্রত্যাহার করছি।’
নূপুরের নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনাতেও চিঁড়ে ভেজেনি। কুয়ের শহরের অদূরে ওই সুপারমার্কেটের তাকে প্যাকেটবন্দি চা, চাল, মরিচের গুঁড়ো বা মশলাপাতির মতো ভারতীয় পণ্য প্লাস্টিকে মুড়ে ফেলা হয়েছে। তাতে আরবি ভাষায় লেখা, ‘আমরা ভারতীয় পণ্য সরিয়ে ফেলেছি।’
এই প্রতিবাদ আন্দোলনের অংশ হিসেবে দেশজুড়ে ভারতীয় পণ্য বয়কটের কথাও চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে বলেও ওই সুপারমার্কেট চেন-এর তরফে জানানো হয়েছে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা