
নাটোর প্রতিনিধি : সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে ছিলেন হিমেলের পিতা আহসান হাবিব হেলাল। অসুস্থজনিত কারনে ছোট বয়সেই পিতাকে হারান মাহমুদ হাবিব হিমেল। মাও সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পক্ষাঘাতগ্রস্থ। নাটোর শহরের কাপুরিয়াপট্টি নানা বাড়িতেই বড় হন তিনি। নিজের পড়াশুনার খরচ চালিয়ে প্রতিমাসে তার মাকে তিনহাজার করে টাকা পাঠাতেন হিমেল। এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবারও মাকে টাকা পাঠিয়ে ছিলেন হিমেল।
হিমেলের শিক্ষক আরিফুর রহমান বলেন, তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। আঁকাআঁকি নিয়ে পড়াশোনা। তাই ছবি এঁকে, কাঠ দিয়ে নানা শিল্পকর্ম করে সেগুলো বিক্রি করতেন তিনি।
একই বিভাগে হিমেলের সহপাঠী তানভীর ইশতিয়াক বলেন, নিজের শিল্পকর্ম বিক্রি করে যে টাকা পেতেন, তা দিয়ে নিজের খরচ চালাতেন মাহমুদ।মাকেই খরচ পাঠাতেন ।
গতকাল মঙ্গলবারও হিমেল তাঁর মাকে টাকা পাঠিয়েছেন। চারুকলা অনুষদে মাহমুদের বন্ধু ছিলেন চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আতিক ইমরান। কয়েক দিন আগে তাঁকে হিমেল নক করেছিলেন ফেসবুক মেসেঞ্জারে।
সে বিষয়ে তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমার বন্ধু। সেই প্রথম বর্ষ থেকেই ওর অনেক কথা আমার সঙ্গে শেয়ার করত। দেখা হলেই হাসিমুখে বন্ধু বলে হাতটা বাড়ায়ে দিত। ওর বাবা মারা গেছে অনেক দিন আগেই। মাকে নিয়ে অনেক সংগ্রাম করেছে। শেষ যেদিন কথা হলো, উড কোলাজের কাজগুলো বিক্রির ক্রেতা খুঁজে দিতে বলল। আমি তারে বলেছিলাম, আমার টাকা থাকলে আমিই নিয়ে নিতাম বন্ধু। তোর একটা কাজ আমার কাছে থাকত।এখন হিমেলের মায়ের কী হবে, সেটা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করলেন তিনি।
গতকাল রাতে হিমেল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যা¤পাসের শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে মালবাহী ট্রাকের ধাক্কায় নিহত হন। বুধবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে তাঁর জানাজা হয়। এরপর বেলা ১১টার দিকে তাঁর মরদেহ নিয়ে নাটোরের উদ্দেশে রওনা হন মামা। সঙ্গে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, ছাত্র উপদেষ্টাসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ৮টি বাসে করে শিক্ষার্থীরা।