ভারতে লোকসভা ভোটের পর্ব শেষ হতে না হতেই পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপকভাবে শুরু হয়ে গেছে সহিংসতা। গত রোববার সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম তথা শেষ পর্বের ভোট সম্পন্ন হয়েছে। তার পর থেকেই এ রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস এবং কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, বাড়িঘর ভাঙচুরের ঘটনা রীতিমতো রণক্ষেত্রের আকার নিয়েছে। প্রতিদিনই তা অব্যাহত রয়েছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার ভারতের এই ভোটের ফল প্রকাশ করা হবে। তাতে জানা যাবে, দিল্লির মসনদে কে ক্ষমতায় বসছে।
গত রোববার থেকেই উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের ভাটপাড়ার কাঁকিনাড়া এলাকা। ভোটের দিন সেখানে ব্যাপক বোমাবাজির ঘটনার পর সোমবারও সেখানে দফায় দফায় চলেছে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে বোমাবাজি। ঘটেছে বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নির্বাচন কমিশন সেখানে জারি করেছে ১৪৪ ধারা।
গতকাল মঙ্গলবারও সেখানে বিজেপি-তৃণমূলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এখনো উত্তপ্ত ভাটপাড়া ও কাঁকিনাড়া এলাকা। গতকাল সকালেও কাঁকিনাড়া স্টেশনে রেলপথ অবরোধ করে চলে বিক্ষোভ। দুষ্কৃতকারীরা নৈহাটি লোকাল ট্রেনকে লক্ষ্য করে বোমা ও ইট নিক্ষেপ করে। আতঙ্কিত যাত্রীরা কোনোরকমে ট্রেন থেকে নেমে পালিয়ে বাঁচেন। প্ল্যাটফর্মে আতঙ্কিত যাত্রীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। এ অবস্থায় রাজ্যপাল যেন ভাটপাড়া এলাকা পরিদর্শন করেন, তার দাবি জানিয়েছেন ব্যারাকপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিং। তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনেরও দাবি করেছেন।
গতকাল মঙ্গলবারও ভাটপাড়া কাঁকিনাড়া এলাকায় চরম উত্তেজনা ও আতঙ্কের মধ্যে রাত কাটিয়েছেন বাসিন্দারা। ভাটপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মদন মিত্র হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, প্রশাসন যদি বিজেপির সন্ত্রাস বন্ধ করতে না পারে, তাহলে ভাটপাড়ার দখল নেবে জনতা।
ভাটপাড়ার পাশাপাশি বিক্ষিপ্তভাবে হিংসা ছড়িয়ে পড়েছে শ্চিমবঙ্গজুড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যেই ঘটছে হিংসা ও সংঘর্ষের ঘটনা।
সোমবার রাতে কোচবিহার জেলার সিতাইয়ের ব্রহ্মত্র চাতরা এলাকায় ভোট-পরবর্তী হিংসায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এক বিজেপিকর্মী। আহত হয়েছেন মোট তিনজন। গুলিবিদ্ধ বিজেপিকর্মীর নাম জয়দেব বর্মণ। তাঁর পেটে গুলি লেগেছে। এ জন্য বিজেপি রাজ্য শাসকদল তৃণমূলকে দায়ী করেছে। কোচবিহারের বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিকের অভিযোগ, সিতাই কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক জগদীশ বর্মা বসুনিয়া তাঁর একে-৪৭ রাইফেল নিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালান। সেই গুলিতে বেশ কয়েকজন বিজেপিকর্মী আহত হন। এখনো একজন বিজেপিকর্মী নিখোঁজ রয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেখানে পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
ভোট-পরবর্তী হিংসা ছড়িয়েছে কলকাতাসংলগ্ন দমদম লোকসভা কেন্দ্রের সল্টলেকেও। সেখানে এক বিজেপিকর্মীর বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন মোট আটজন, যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার রাতে সল্টলেকের ছয়নাভি এলাকায়। এদিন রাতে সল্টলেকের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের ছয়নাভি এলাকায় চারজন বিজেপি পোলিং এজেন্টের বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে। বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর চালানো হয়। মারধর করা হয় বেশ কয়েকজনকে।
ভোটকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বারাসাত লোকসভার হাবড়া বিধানসভা এলাকার ফুলতলা বাজারে। সেখানে বহিরাগত দুষ্কৃতকারীরা তাণ্ডব চালিয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। তাঁরা বলেন, সোমবার দুপুরে মোটরবাইকে করে বহিরাগত দুষ্কৃতকারীরা এসে হামলা চালায়। সে সময় একজনকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ হাতেনাতে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় বিজেপি ও তৃণমূল একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। ঘটনার জেরে তীব্র উত্তেজনা রয়েছে এলাকায়। ঘটনাস্থলে রয়েছে পুলিশ বাহিনী।
গত রোববার শেষ পর্বের ভোটের দিন দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বারুইপুরের মাদারিহাটের বিশ্বাসপাড়ায় এজেন্ট হওয়ায় এক বিজেপিকর্মীর বাড়িতে হামলা, দোকান ভাঙচুর ও পরিবারের লোকদের ভয় দেখানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দিকে। যদিও তৃণমূল সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।