
পতাকা ডেস্ক: বৃটিশ ভারতের গোলামীর জিঞ্জির পায়ে জন্ম নেয়া টাঙ্গাইলের সন্তোষ গ্রামের সন্তান আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। রাজনীতিতে যিনি লাল মাওলানা নামে সমধিক পরিচিত। আজকে যে তৃণমূল রাজনীতির কথা বলা হয় তার গোড়াপত্তন করেছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। বৃটিশ শাসকদের জন্য মূর্তিমান আতঙ্ক ভাসানী কিন্তু বাংলার মানুষের কাছে পরিচিত ছিলেন মজলুম জননেতা হিসাবে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা যে কয়েকজন নেতার ছিল তার মধ্যে অন্যতম ছিলেন তিনি। মাওপন্থী কমিউনিস্ট হিসাবে বাম ধারার রাজনীতিতে যুক্ত থেকে এদেশের মেহনতি মানুষের মুক্তি আন্দোলন করেছেন। স্বাধীনতার আজন্ম লালিত স্বপ্নকে প্রকাশ্যে জানান দিতেন। শাসকশ্রেণির রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে গেছেন। নানাবিধ নির্যাতন নিপীড়ন জেল জুলুমকে তোয়াক্কা করতেন না। ভাসানীর অনুসারীদের কাছে ‘লাল মাওলানা’ হিসাবে পরিচিত নেতা পূর্ব পাকিস্তান কৃষক পার্টি করে দেশব্যাপী ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। রাজনৈতিক দূরদর্শিতা তাকে মানুষের মনের মণিকোঠায় স্থান দিয়েছে। ১৯৫৭ সালের কাগমারি সন্মেলনে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের তিনি ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে সর্বপ্রথম পূর্বপাকিস্তানকে স্বাধীন করার ঘণ্টা বাজিয়েছিলেন।
রাজনীতিতে মাস্টার মাইন্ড হিসাবে পরিচিত মাওলানা সাহেব কখনো ক্ষমতা লিপ্সু ছিলেন না। বৃটিশ কবল থেকে স্বাধীন পাকিস্তান, আবার অত্যাচারী পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে কখনোই তিনি সঠিক মর্যাদা পাননি। ১৯৭৬ সনের ১৭ নভেম্বর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তেমন কোন খেতাব তাকে অলংকৃত করতে পারেনি। তিনি আজীবন মজলুম জননেতা হিসাবে মানুষের মনের মণিকোঠায় ছিলেন, আছেন ভবিষ্যতেও থাকবেন। মাওলানা ভাসানীর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের বর্ণনা মেদবহুল। ১৯৪৯ সনের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম রাজনৈতিক দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ ঘটে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের। সর্ব সম্মতিতে দলের প্রধান নির্বাচিত হন মাওলানা ভাসানী। ১৯৫২ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকা জেলা বার লাইব্রেরি হলে তার সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ গঠিত হয়। পরবর্তীকালে আরো অনেক আন্দোলন সংগ্রাম ও জেল জুলুম তাঁকে নিবৃত করতে পারেনি। ১৯৭২ সনের ২৫ ফেব্রুয়ারি সাপ্তাহিক ‘হক কথা’ তিনি প্রকাশ করেন। তিনি বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী চুক্তির বিরোধিতা করেন। ১৯৭২ এর সংবিধান সমর্থন করে বলেছিলেন – আসাম আমার, পশ্চিম বঙ্গ আমার, ত্রিপুরাও আমার। এগুলো ভারতের কবল থেকে ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মানচিত্র পূর্ণতা পাবেনা।
১৯৭৪ এর জুনে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করলে টাঙ্গাইলের সন্তোষে তিনি গৃহবন্দী হন। ১৯৭৬ এর ১৬ মে ভারত কর্তৃক ফারাক্কা বাঁধ চালুর প্রতিবাদে ঐতিহাসিক ফারাক্কা লং মার্চের নেতৃত্ব দেন। অশীতিপর বৃদ্ধ হয়েও জাতির প্রয়োজনে নেতৃত্ব দিতে তিনি কখনো পিছপা হননি। ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজে এ মজলুম নেতা মৃত্যুবরণ করেন। টাঙ্গাইলের সন্তোষে পীর শাহজামান দীঘির পাশে উনাকে সমাধিস্থ করা হয়।
মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এবি পার্টি এই জমিনের জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের ঐতিহাসিক লড়াই এ তার অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছে ও তার রুহের মাগফেরাত কামনা করছে।