মো.নজরুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : কীর্তিমানের মৃত্যু নেই,মানিকগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী তেরশ্রী অঞ্চলের কৃতি সন্তান ভারত প্রবাসী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান ভাষা সংগ্রামী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড মন্তোষ কুমার পাল গতকাল ১৮.ফেব্রুয়ারী ২০২২ খ্রি: কবি ও লেখক পংকজ কুমার পালের জেঠু মন্তোষ কুমার পাল প্রায় নব্বই বছর বয়সে ভারতে তার নিজ বাসভবনে পরলোকগমন করেন। (দিব্যান লোকান স্ব: গচ্ছতু)। তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. আজাহারুল ইসলাম আরজু, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও বিজ্ঞ পিপি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. আব্দুস সালাম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের জেলা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আফজাল হোসেন খান জকি, সিপিবি মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক আবুল ইসলাম সিকদার ও সাধারন সম্পাদক কমরেড মুজিবুর রহমান মাস্টার, বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক কমরেড মো. নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
তিনি তেরশ্রীর (বাহাদুরপুর) স্বর্গীয় গজেন্দ্র কুমার পাল এর বড়ছেলে মন্তোষ কুমার পাল শিক্ষকতাকে ভালোবেসে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন ৷ তিনি ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ তেরশ্রী কে. এন. ইনস্টিটিউশনের শিক্ষক ছিলেন এবং বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্নিপুরুষ কমরেড প্রমথ নাথ নন্দীর অনুপ্রেরণায় আজীবন বাম প্রগতিশীল সংগঠন ছাত্র ইউনিয়ন ও কমিউনিস্ট পার্টির সার্বক্ষণিক রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। এছারাও তিনি পরোপকারী, দক্ষ সংগঠক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তি হিসেবে এলাকাসহ মানিকগঞ্জ জেলায় তিনি ছিলেন পরিচিত মুখ ৷ সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ, শিশুকিশোরদের ব্যক্তিত্ব ও মেধাবিকাশে অবদান রেখেছেন সব সময় ৷
তেরশ্রীর সকল প্রগতিশীল কর্মকান্ড, আন্দোলন ও সংগ্রামের সাথে তিনি নিজেকে সর্বদা সম্পৃক্ত রেখেছিলেন ওতপ্রোতভাবে ৷ কমিউনিস্ট পার্টির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন আজীবন। ডা: এম এন নন্দী, প্রমথনাথ নন্দীর যোগ্য উত্তরসুরী ছিলেন তিনি ৷ ভাষা সৈনিক আঃ হাকিম, ভাষা সৈনিক ওয়াজ উদ্দিন আহমেদ, আব্দুর রহমান ঠাকুর, ডা: মোবারক আলী, বিজয় চন্দ্র শীলসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল ব্যক্তির সাথে ছিল তাঁর আত্মার সম্পর্ক ৷ দিনের পর দিন এদের নিয়ে সাধারণ মানুষের মুক্তির সংগ্রামের এবং উন্নয়নের কথা ভাবতেন সবসময়৷
প্রমিত বাংলা উচ্চারণের জন্য তাঁর খ্যাতি ছিলো বেশ।
তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি বিনামূল্যে ডাক্তারি সেবা দিয়ে গেছেন জনসাধারণকে ৷ এর জন্য বিভিন্ন কোর্সও করেছিলেন তিনি ৷ তরুনদের সৃজনশীল কাজে উদ্ধুদ্ধ করতেন ৷ নিয়মিত বই ও পত্রিকা পড়তেন এবং অন্যদের পড়তে উৎসাহিত করতেন ৷ তেরশ্রী গণকেন্দ্র পাঠাগার স্থাপনেও অগ্রণী ভূমিকা ছিলেন। তিনি ক্রীড়ানুরাগী ছিলেন ৷ ছিলেন খেলাধুলার পৃষ্ঠপোষক ৷ দীর্ঘদিন ফুটবল খেলার রেফারি ছিলেন ৷ নাট্যমোদীও ছিলেন ৷ সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে তিনি মঞ্চ নাটক পরিচালনার পাশাপাশি অভিনয়ও করতেন ৷ শিশুদের নিয়ে খেলাঘর আসরেও সময় দিতেন।
তেরশ্রীর খেলাধুলার বিকাশে বিভিন্ন ক্লাবেও যুক্ত ছিলেন।
এগুলো ছারাও বিভিন্ন সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন ৷ তেরশ্রী গণহত্যায় নিহত শহীদের স্মরণে প্রথম “তেরশ্রী শহীদ স্মরণ কমিটি”র কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। তেরশ্রী গণকেন্দ্র পাঠাগার পরিচালনা কমিটির সভাপতি, শেষ জীবনে এলাকাবাসীর অনুরোধে তেরশ্রী সার্বজনীন হরিসভা কমিটির সভাপতিও ছিলেন ৷ শিক্ষকতার পেশা থেকে অবসরের পর দীর্ঘদিন বাংলাদেশে অবস্থানের পর সন্তানদের অনুরোধে তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করছিলেন ৷ তিনি বার্ধক্যজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন ৷ মৃত্যুর সময় তিনি স্রী,পুত্র ও কন্যাসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন ৷ কবি পংকজ কুমার পাল বলেন আমরা নতুন প্রজন্ম তার কাছে অনেককিছু শিখেছি এবং আরো শেখার অনেক ছিল। বই পড়া ও লেখালিখির অভ্যাস তার কাছেই অনুপ্রেরণা পেয়েছি। অসীম মায়া আর স্নেহে আগলে রেখেছেন সবসময় আমাদের। হাজারও মধুময় স্মৃতি আছে তাঁকে ঘিরে। যতদিন বেঁচে আছি, সেসব দিনের জন্য মনের কোনে একটা অদৃশ্য ক্ষত রয়ে যাবে।
পরম করুণাময় ঈশ্বর তাঁকে মোক্ষলাভ করান, এই প্রার্থনাই করি। আপনারাও তাঁর আত্মার শান্তি কামনায় প্রার্থনা করবেন ৷