sliderউপমহাদেশশিরোনাম

ভারতে গরুর প্রতি নিষ্ঠুরতার দায়ে এবার বিজেপি নেতা গ্রেফতার

ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের এক বিজেপি নেতাকে পুলিশ গরুর সঙ্গে নিষ্ঠুরতার দায়ে গ্রেপ্তার করেছে। হরিশ ভার্মা নামের ওই নেতা একদিকে যেমন একটি পৌর নিগমের সহ সভাপতি, তেমনই সরকারী অনুদান নিয়ে গোশালাও চালাতেন।
সরকারী অনুদানের টাকার সম্পূর্ণ সদ্বব্যহারও তিনি করেন নি বলেও অভিযোগ জমা পড়েছে পুলিশের কাছে।
একদিকে যখন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি গো-রক্ষার জন্য আন্দোলন করছে, গো মাংস খাওয়া বা পরিবহনের গুজব তুলে মুসলমানদের পিটিয়ে মারা হচ্ছে, তখনই বিজেপি-র এক নেতা গো-মৃত্যুর দায়ে গ্রেপ্তার হলেন।
গোরক্ষক দলগুলি বলছে কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কাছে গোশালা তৈরী করে তার জন্য সরকারী অনুদান নেওয়াটা একটা নতুন আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ছত্তিশগড়ের পুলিশ বলছে, রাজ্য গো সেবা কমিশনই পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিল যে মি. ভার্মা দুর্গ জেলায় যে গোশালাটি পরিচালনা করেন, সেখানে গত কয়েকদিনে অন্তত তিরিশটি গরু মারা গেছে। সেই অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পরেই পশু নির্যাতন রোধ আইন, গবাদি পশু রক্ষা আইন ও ভারতীয় দন্ডবিধির বেশ কয়েকটি ধারা অনুযায়ী হরিশ ভার্মাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
দুর্গ জেলার পুলিশ সুপারিন্টেডেন্ট অমরেশ মিশ্র বিবিসি বাংলাকে জানাচ্ছিলেন, “রাজ্য গো সেবা কমিশন যে রিপোর্ট দিয়েছে আমাদের কাছে, তাতে এটা পরিষ্কার যে গোশালায় থাকা গরুগুলির সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা নেন নি তিনি। গো সেবা কমিশনের অভিযোগ অনুযায়ী অন্তত তিরিশটি গরু মারা গেছে মি. ভার্মার গোশালায়। এটা দন্ডনীয় অপরাধ। গরুগুলির ময়না তদন্ত হয়েছে, পশু চিকিৎসা দপ্তর সেই রিপোর্ট এখনও পাঠায় নি।”

ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার গরু রক্ষায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে

মি. ভার্মাকে জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
গো হত্যার অভিযোগ ছাড়াও ওই বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে গো সেবা কমিশন এটাও বলেছে, গোশালায় থাকা প্রায় ৫০০ টি গরুকে দেখভালের জন্য যে সরকারি অনুদান দেওয়া হয়েছিল মি. ভার্মাকে, তার একটা অংশ হয়তো তিনি সদ্ব্যবহার করেন নি।
পুলিশ সুপারের কথায়, “গো সেবা কমিশন যে খুব স্পষ্ট করে এটা বলেছে, তা নয়, কিন্তু তারা লিখিতভাবে জানিয়েছে যে, গরুগুলির সুরক্ষার জন্য গত তিন বছরে যে প্রায় ৯০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে, তার একটা অংশ তছরূপ করেও থাকতে পারেন মি. ভার্মা। তছরূপ যে হয়েইছে, সে ব্যাপারে নিশ্চিত নয়, একটা আশঙ্কা প্রকাশ করেছে তারা।”
ভারতে এখন প্রায় ২৫ হাজার গোশালা রয়েছে, যার একটা খুব ছোট অংশই সরকারি অনুদান পায়। বাকি প্রায় ৯৫% গোশালা হয় বেসরকারী কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বা স্থানীয় কৃষকরা মিলিতভাবে পরিচালনা করেন।
এগুলিতে যেমন নানা ধরণের গরু প্রজনন ও বিক্রির ব্যবস্থা থাকে, তেমনই বয়স হয়ে যাওয়া যেসব গরুকে পালন করতে অপারগ হন কৃষকরা, তাদের এই গোশালাগুলিতে রেখে আসা হয়।
ভারতীয় গোরক্ষা দলের প্রধান পওয়ন পন্ডিত বলছিলেন বি জে পি ক্ষমতায় আসার পরে গত তিন চার বছরে প্রায় ৫ হাজার নতুন গোশালা তৈরি হয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে।
“গত কয়েক বছরে নতুন যে গোশালাগুলি তৈরি হয়েছে, সেখানে গড়ে ২০০টি করে গরু থাকলে প্রায় দশ লাখ গরুকে সুরক্ষা দেওয়া হচ্ছে। রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো বা দুর্ঘটনায় আহত গরুগুলিকেই এইসব নতুন গোশালাগুলিতে রাখা হয়,” জানাচ্ছিলেন মি. পন্ডিত।
“তবে যদি খোঁজখবর করা হয়, তাহলে দেখা যাবে এই নতুন গোশালাগুলি তদারকির দায়িত্ব যারা পেয়েছেন, তারা কোনও না কোনও ভাবে আর এস এস বা বিশ্ব হিন্দুপরিষদ বা বি জে পি-র সঙ্গে যুক্ত,” অভিযোগ পওয়ান পন্ডিতের।
তিনি আরও বলছেন, শুধু গোশালার ক্ষেত্রে নয়, বিভিন্ন রাজ্যে যেসব গো সেবা কমিশন তৈরি হয়েছে, সেগুলিতেও রাখা হয়েছে ওই ধরণের রাজনৈতিক ব্যক্তিদেরই – যাদের গোরক্ষার কাজে কোনও অভিজ্ঞতাই নেই। এমনও ব্যক্তি আছেন, যিনি গরু আর মোষের পার্থক্যই হয়তো বুঝতে পারবেন না। তাঁদেরও সরকারি সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে গোরক্ষার নামে।
তবে ছত্তিশগড়ের গোশালায় গরু-মৃত্যু নিয়ে মি. পন্ডিত বলছেন দেশের হাজার হাজার গোশালার মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটিতেই এরকম ঘটনা হয়ে থাকে – এটা ব্যতিক্রম – সার্বিক চিত্র নয়।
সুত্র: বিবিসি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Back to top button