
বাংলাদেশ ও ভারতের ঐতিহ্য ও সংগ্রামের ইতিহাস প্রায় একই। দু’দেশের মানুষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনও চমৎকার। এই বন্ধন, বিশ্বাস, ভ্রাতৃত্ব আরও সুদৃঢ় করতে আচার-কৃষ্টি ও সংস্কৃতির আদান-প্রদানে ২০১২ সালে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ইচ্ছায় শুরু হয় ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন টু ইন্ডিয়া’। এর আওতায় প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন অঙ্গনের ১০০ জন তরুণ-তরুণীকে ভারত সফরে নিয়ে যায় ঢাকায় দেশটির হাইকমিশন। ভারতের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এবারও যাচ্ছেন এমন শতযুবা। এ আয়োজনে সাত দিনের সফরে আগামী বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) বিকেলে ঢাকা ছাড়বে তারুণ্যের দলটি।
বুধবার (২৭ মার্চ) সকালে ঢাকার বারিধারায় ভারতীয় হাইকমিশনের হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়েছে ভ্রমণের ‘ফ্ল্যাগিং অফ’ অনুষ্ঠান। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। ডেলিগেশন টিমকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাশ। বরাবরের মতোই দীর্ঘ বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শত শত তরুণ-তরুণীর মধ্য থেকে নির্বাচিত হয়েছেন একশ জন। এদের মধ্যে যেমন রয়েছেন সংস্কৃতিকর্মী ও সাহিত্যিক, তেমনি আছেন চিকিৎসক, প্রকৌশলী, উদ্যোক্তা; আছেন খেলোয়াড়, ক্রীড়াবিদ, সাংবাদিক এবং শিক্ষার্থীও।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় ওয়ানডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ও সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজা। ২০১২ সালে ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ ডেলিগেশন টু ইন্ডিয়া’ শুরু হয়। এবার যাচ্ছে সপ্তম ব্যাচ। এই ব্যাচে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও পেশার ৪০ জন নারী ও ৬০ জন পুরুষ রয়েছেন। তাদের মধ্যে যেমন আছেন শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী; তেমনি আছেন সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী, ক্রীড়াবিদ, মডেল, রেডিও জকি; আছেন মানবিক ও বিজ্ঞান ছাত্র, সমাজকর্মীও। ডেলিগেশন টিমটি নয়াদিল্লি, আগ্রা ও হায়দ্রাবাদ ভ্রমণ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রীভা গাঙ্গুলী দাশ তার স্বাগত বক্তৃতায় বলেন, এই ভ্রমণের মাধ্যমে ডেলিগেটরা ভারতের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং সেখানকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র বোঝার ও অনুধাবনের সুযোগ পাবেন। তারা এদেশীয় সংস্কৃতি-ঐতিহ্যও সেখানে তুলে ধরতে পারবেন। যাতে দু’দেশের জনগণের পারস্পরিক বোঝাপড়া আরও সুদৃঢ় হবে। তিনি বলেন, আমরা প্রায় ৩ হাজার আবেদন পেয়েছি এই অনন্য সুযোগের জন্য। বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বিচিত্র অঙ্গনের নেতৃস্থানীয়রা এই ১০০ জনের টিমের সদস্য হয়ে ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছেন।
এরপর বক্তব্য রাখেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তিনি ডেলিগেশন টিমকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, দেশকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে তারুণ্যের ভূমিকাই থাকে অগ্রগণ্য। আপনাদের এই সফর দুই ভ্রাতৃপ্রতীম দেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তৃতার শুরুতেই শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ভারতে তার শিক্ষাজীবনের স্মৃতিচারণ করেন। তিনি বলেন, ভারতে পড়তে যাওয়ার দু’একমাস বাদে বাবা (প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী) বলেছিলেন, শুধু ভ্রমণ করতে। কারণ তিনি বলতেন, ভারত ভ্রমণ মানেই পুরো বিশ্ব ভ্রমণ। এখানে যেমন মরুভূমি আছে, তেমনি আছে বরফের রাজ্য কাশ্মীর, হিমালয়ের পাদদেশ, পাহাড়-পর্বত এবং সমুদ্র সৈকতও।
মুক্তিযুদ্ধে ভারত ও এর জনগণের অবদানের কথা স্মরণ করেন মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, একটি দেশের স্বাধীনতার জন্য দু’দেশের জনগণ ও সেনারা রক্ত দিয়েছে, প্রাণ দিয়েছে, এমন ঘটনা খুবই বিরল। ভারত আমাদের সেই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে জড়ানো দেশ। তাই বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী নয়, আমি বলি বাংলাদেশ-ভারত পারিবারিক বন্ধন চিরজীবী হোক।
ডেলিগেশন টিমের উদ্দেশে উপমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার অন্যতম মাধ্যম হলো ভ্রমণ। আপনারা এই শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ পেয়ে যা অর্জন করবেন, তা দু’দেশকে এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।
প্রধান অতিথির বক্তৃতার পর ফ্লাগ হস্তান্তর হয়। ইয়ুথ ডেলিগেশন টু ইন্ডিয়া-২০১৮ এর টিম লিডার ফ্লাগ তুলে দেন নতুন ডেলিগেশন টিমের লিডার ও কো-লিডারদের হাতে।
বক্তৃতা পর্বের ফাঁকে নাচ, গানসহ সাংস্কৃতিক আয়োজন করতালির ঢেউ ফেলে হলরুমে।
ডেলিগেটস টিমের সঙ্গে থেকে সমন্বয় করবেন ফার্স্ট সেক্রেটারি (পলিটিক্যাল) নবনীতা চক্রবর্তী ও কো-অর্ডিনেটর (মিডিয়া অ্যান্ড কালচার) কল্যাণ কান্তি দাশ।