
আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর, মানিকগঞ্জ : ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি প্রাপ্তির সংবাদে দুদিন আগে এলাকাবাসী, আতœীয় স্বজনদের মিষ্টি মুখ করিয়েছন, কিন্তু সংশোধিত ফলাফলে নেই তাদের নাম। বৃত্তির আনন্দ পরিণত হয় বিষাদে। ছোট্ট মন ভরে ওঠে দীর্ঘশ্বাসে। ১০ শিক্ষার্থী বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না লজ্জায়। অভিভাবকরাও পড়েছেন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। প্রথম প্রকাশিত ফলে বৃত্তি পেয়েও সংশোধিত ফলে বাদ পড়া শিশুদের মন ভার, অঝোরে কেঁদেছেও তারা। অভিভাবকরা নানাভাবে সান্ত¡না দিচ্ছেন। তবে তারা ক্ষুব্ধ। হতাশ এসব শিশুর শিক্ষকরাও।
শনিবার দুপুরে সরজমিন মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার গোয়ালডাঙ্গী গ্রামে দেখা যায়, ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিল মো: ছিয়াম মিয়া (১১)। সংশোধিত ফলাফলে নেই তার নাম। কষ্ট আর লজ্জায় গত তিন দিন ধরে বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না কৃষক আব্দুল জলিলের ছেলে ছিয়াম।
অভিভাবকরা কথা বলার এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পরেন। ছিয়াম উপজেলার বানিয়াজুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। তার বৃত্তি পরীক্ষার রোল ছিল ৩৬৫। বর্তমানে সে বানিয়াজুরী সরকারী স্কুল এন্ড কলেজে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ফলাফলে উপজেলার রাহাত হাঁটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তানহা মাহমুদ সাধারন গ্রেডে, ছাবিতা বিশ্বাস, ঈশিতা আক্তার, মীম আক্তার, হাফজা আক্তার ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায়। কিন্তু ১ মার্চ প্রকাশিত ফলাফলে এই ৫ জনের মধ্যে শুধু ছাবিতা বিশ্বাস বৃত্তি পায় সাধারন গ্রেডে। তরা বিদ্যালয়ে একজন, উত্তর তরা বিদ্যালয়ে একজন, পাঁচুরিয়া বিদ্যালয়ে দুই জনের নাম বাদ পরেছে। একযুগ পর ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায় পাঁচুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩ ছাত্রী। এই খুশিতে প্রতিবেশীদের মিষ্টিও খাওয়ান, কিন্তু এখন হতাশা নেমে আসে পরিবারগুলোতে। কারণ দ্বিতীয়বার প্রকাশিত ফলাফলে বৃত্তি পায়নি তারা। এ কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে এই শিশু শিক্ষার্থী ও অভিভাবক।
শিক্ষার্থী ছিয়াম জানায়, স্যার আমাকে বলেছিল ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছি। মোবাইলে সেই রেজাল্ট বের করে দেখেছি। সবাইকে মিষ্টিও খাইয়েছি। কিন্তু পরে জানতে পারি আমার বৃত্তি আসেনি।
ছিয়ামের মা বিথী বেগম বলেন, আমার ছেলে বৃত্তি পাওয়ায় অনেক খুশি হয়েছিলাম। ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। যদি সে বৃত্তি নাই পেত, তাহলে আগে কেন দিল! কেন আমার ছেলের মনটা ভেঙে দিল! তিন দিন ধরে ছেলেটি বাড়ির বাইরে যায় না। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করে না। ঘরে বসে কাঁদে। ওর মুখের দিকে তাকালে আমারও কান্না আসে। আমার ছেলের কোনো ক্ষতি হলে দায়ভার কে নেবে?
অপর শিক্ষার্থী মীম আক্তার জানায়, আমি এটা মানতে পারিনি। আমাদের সাথে কেন এমন করা হলো। সবাই জিজ্ঞাসা করে বৃত্তির খবর কি? কোন উত্তর দিতে পারি না। সরকারের কাছে আবেদন, আবার ফলাফল সংশোধন করা হোক।
বানিয়াজুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ বাবুল মিয়া বলেন, ত্রুটির কারনে আগের ফলাফল বাতিল করে সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করেছে। যারা বাদ পরেছে তাদের মনে কষ্ট লাগা স্বাভাবিক। বাদ পড়া শিশু শিক্ষার্থী, তাদের অভিভাবকদের আমরা বোঝানোর চেষ্টা করছি।
বিষয়টি নিয়ে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কমপক্ষে ২০ জন শিক্ষকের সাথে কথা হলে তাঁরা বলেন, সংশোধিত ফলাফলে সন্তানদের রোল নম্বর না থাকার ঘটনায় অভিভাবকরা শিক্ষকদের দায়ী করছেন। নানাভাবে বোঝালেও বিষয়টি বুঝতে চাইছেন না গ্রামাঞ্চলের অভিভাবকরা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হাসিনা আক্তার পারভীন বলেন, প্রথম প্রকাশিত তালিকায় ত্রুটি ছিল বলেই সংশোধন করা হয়েছে। এতে কেউ বাদ পড়েছে, কেউ পেয়েছে। উপজেলায় ৩৩ জন ট্যালেন্টপুলে ও ৪৩ শিক্ষার্থী সাধারন গ্রেডে বৃত্তি পেয়েছে। পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ রয়েছে। ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করতে পারবে তারা।