রাজধানীর বুড়িগঙ্গা নদীতে দুর্ঘটনায় ডুবে যাওয়া ‘এমএল মর্নিং বার্ড’ ২৬ ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়েছে। বুড়িগঙ্গা নদীর শ্যামবাজার এলাকা থেকে লঞ্চটি এয়ার লিফটিং দিয়ে উপরে তোলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে লঞ্চটি উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার অভিযানে থাকা ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ডিউটি অফিসার রাসেল সিকদার এনটিভি অনলাইনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
এর আগে আজ সকাল ৮টা থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধার অভিযান উদ্ধার অভিযানে নামে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
গতকাল সোমবার সকালে ‘এমভি ময়ূর-২’ লঞ্চের ধাক্কায় মুহূর্তে ডুবে যায় যাত্রীবাহী ছোট লঞ্চ ‘এমএল মর্নিং বার্ড’। দুই চালকের অসতর্কতায় এ ঘটনা ঘটে। এতে পানিতে ডুবে প্রাণ হারান ৩২ জন নিরীহ যাত্রী।
নিহতদের মধ্যে ৯ জন নারী ও ৩ শিশু রয়েছে। তাদের বেশিরভাগই মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা।
রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (এসএসএমসি) হাসপাতাল থেকে গতকাল সন্ধ্যার মধ্যে সবকটি লাশ শনাক্ত করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
এ দুর্ঘটনায় দুটি লঞ্চের সার্ভে ও রেজিস্ট্রেশন সনদ স্থগিত করেছে নৌপরিবহন অধিদপ্তর। ময়ূর-২ লঞ্চটিকে আটক করা হয়েছে। তবে লঞ্চের চালক পালিয়ে গেছেন।
এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার নৌ-আদালতে মামলা দায়ের করা রয়েছে। এদিকে লঞ্চ চাপা দেওয়া এমভি ময়ূরের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ ছোয়াদসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকালে সদরঘাটের নৌ-থানায় উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শামছুল আলম বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
মামলায় সাত আসামি হলেন, এমভি ময়ূরের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ ছোয়াদ (৩৩), লঞ্চের দ্বিতীয় শ্রেণির মাস্টার কর্মচারি মো. আবুল বাশার মোল্লা (৬৫), লঞ্চের তৃতীয় শ্রেণির মাস্টার মো. জাকির হোসেন (৫৪), ইঞ্জিন চালক ড্রাইভার শিপন হালদার (৪৫), ড্রাইভার শাকিল হোসেন (২৮), কর্মচারি সুকানি নাসির মৃধা (৪০) ও মো. হৃদয় (২৪)।
সোমবার সকাল ৯টা ১৩ মিনিটের দিকে ঢাকা-চাঁদপুর রুটের ময়ূর-২ নামের একটি লঞ্চের সঙ্গে ধাক্কায় মর্নিং বার্ড নামের একটি লঞ্চ ভেঙে দু-টুকরো হয়ে নদীতে ডুবে যায়।
এর পরই ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, কোস্ট গার্ড ও নৌপুলিশের পক্ষ থেকে উদ্ধার তৎপরতা শুরু হয়। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তদরের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিল্লুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এই ঘটনায় আমরা এখনো পর্যন্ত ৩২ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছি। এর ভেতরে পুরুষ ২১ জন, নারী আটজন এবং তিনটি শিশু রয়েছে।’
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তদরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘মর্নিং বার্ড‘ লঞ্চটি মুন্সীগঞ্জ থেকে ছেড়ে এসে ঢাকার সদরঘাট টারমিনালের কাছাকাছি চলে এসেছিল। কিন্তু সে সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে যাচ্ছিল ঢাকা-চাঁদপুর রুটের ময়ূর-২ নামের আরেকটি লঞ্চ। লঞ্চটি মর্নিং বার্ডকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। এতে মনিং বার্ড ভেঙে দ্বি-খণ্ডিত হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে দ্বি-খণ্ডিত লঞ্চটি ডুবে যায় পানিতে। ভিডিওতে তেমনটিই দেখা যাচ্ছে।
নিহতদের পরিবার পাবে দেড় লাখ টাকা
বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চডুবির ঘটনায় মৃত প্রত্যেকের পরিবারকে দেড় লাখ টাকা এবং প্রতিটি লাশ দাফনের জন্য ১০ হাজার টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
সোমবার সদরঘাটে লঞ্চডুবির ঘটনা পরিদর্শনে এসে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘সিটিভি ফুটেজ দেখে বুঝা গেছে, এটি দুর্ঘটনা নয় হত্যাকাণ্ড।’
দুটি তদন্ত কমিটি গঠন
লঞ্চডুবিতে ৩২ জনের প্রাণহানির ঘটনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
সুত্র : এনটিভি।