sliderস্থানীয়

বীরমুক্তিযোদ্ধা আয়নাল হোসেন ফকিরের প্রয়াণ দিবস আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক : মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সৈনিক আয়নাল হোসেন ফকিরের প্রয়াণ দিবস আজ। ১৯৯৬ সালের ২০ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আয়নাল হোসেন ফকির উপজেলা পর্যায়ে ১৯৭২ সাল থেকেই ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে হরিরামপুর থানা ছাত্রলীগের খন্দকার লিয়াকত- আয়নাল হোসেন ফকির পরিষদ গঠিত হয়। আমেরিকা প্রবাসী খন্দকার লিয়াকত ছাত্রলীগের সভাপতি ও বর্তমান মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দীন সহ-সভাপতি এবং আয়নাল হোসেন ফকির ছিলেন সাধারণ সম্পাদক।

পরবর্তীতে ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর শেখ ফজলুল হক মনির নেতৃত্বে বাংলাদেশে প্রথম যুব সংগঠন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৭৩ সালে এই বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ সংগঠনটিরও পুনরায় হরিরামপুর থানা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এই আয়নাল হোসেন ফকির। এছাড়াও ১৯৮০ থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত হরিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন এই বীর সৈনিক আয়নাল হোসেন ফকির।

পারিবারিকভাবে জানা যায়, তিনি তদানিন্তন ঢাকা জেলার মানিকগঞ্জ মহকুমায় হরিরামপুরের ভাটি বয়রা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মতি ফকির। পারিবারিক ঐতিহ্যের বলয়ে তিনি ছিলেন আধ্যাত্বিক জগতের কান্ডারী, একজন সূফী সাধক। তিন ভাই, চার বোনের মধ্যে আইনাল হোসেন ফকির ছিলেন বাবা-মায়ের তৃতীয় সন্তান।
ইব্রাহিমপুর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে যখন তিনি কলেজ জীবনে পর্দাপণ করেন, তখন ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৬ দফা দাবি পেশ করেন। ওই সময় জাতির জনকের ছয় দফা আন্দোলনের অন্যতম কর্মী ছিলেন এই আয়নাল হোসেন ফকির। পরবর্তীতে ৭০’র নির্বাচনেও সরাসরি মাঠ পর্যায়ে একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে দলীয় কর্মকান্ডের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন তিনি।

আরও জানা যায়, ৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ২নং সেক্টরের আওতাধীন হরিরামপুর ও তদানিন্তন মানিকগঞ্জ মহকুমায় মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় সংগঠকদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম একজন সংগঠক। মহান মুক্তিযুদ্ধে হরিরামপুরের রনাঙ্গণে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রতিরোধের জন্য তার বাসভবন বয়রা ইউনিয়নের ভাটি বয়রা গ্রামে প্রথম প্রতিরোধ মিটিংয়ের ডাক দেন। এটিই ছিল ওই সময় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে হরিরামপুরের প্রথম মিটিং।
মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য হরিরামপুরের সকল তরুণ-যুবকদের সু-সংগঠিত করেন তিনি। যার ফলশ্রুতিতে দক্ষিণ চাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বাঁশের লাঠি দিয়ে ডামি রাইফেল বানিয়ে প্রতিরোধ ট্রেনিংয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে প্রশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধারা রণাঙ্গনের বিভিন্ন স্থানে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। মুক্তিযোদ্ধাদের রিক্রুটিং অস্ত্র সংগ্রহ, ট্রেনিং রসদ এবং গেরিলা তৈরিতেও তিনি ঐতিহাসিক অবদান রাখেন।

পারিবারিক জীবন :
১৯৭৭ সালে হরিরামপুর উপজেলার বলড়া ইউনিয়নের কুইস্তারা গ্রামের জনাব আলী দেওয়ানের মেয়ে জাহানারা বেগমের সাথে আয়নাল হোসেন ফকির বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বৈবাহিক জীবনে তিনি তিন সন্তানের জনক ছিলেন। আয়নাল হোসেন ফকির পারিবারিকভাবেই সূফী মতাদর্শে বিশ্বাসী।

১৯৯৪ সালে পদ্মা নদীতে ভিটে বাড়ি গ্রাস করলে তিনি ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার হাট কৃষ্ণপুর গ্রামে আল হোসেনী মঞ্জিলের পূণঃপ্রতিষ্ঠা করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তাঁর সাহিত্যাঙ্গণ ও নাট্যাঙ্গণের সাথে ছিল নিবিড় সম্পর্ক। তিনি একজন লেখক, গবেষক, নাট্যকার, গীতিকার, অভিনেতা, রাজনীতিক, বক্তা এবং সমাজ সংস্কারকও ছিলেন। তিনি দীর্ঘ সময় এলাকায় নাটক ও যাত্রাপালায় কমেডি চরিত্রে অভিনয় করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি আশির দশকের গোড়ার দিকে বাংলাদেশ বেতারের গীতিকারও ছিলেন।
আয়নাল হোসেন ফকিরের বড় ছেলে ফকির মেহেদী হাসান ও ছোট ছেলে এম এইচ টিপু জানান, “পারিবারিকভাবে দোয়া মাহফিল হয়েছে। তবে আমার বাবা একজন বীরমুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি ৭২ থেকে ৮৭ পর্যন্ত ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি তৎকালিন সময়ে যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। অথচ আজ তিনি দলীয়ভাবেই অবহেলিত। বাবার মৃত্যুর পরে দলীয়ভাবে তিনবার স্মরণ সভা করলেও তারপরে আর দলীয়ভাবে আর কোনো কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়নি।”

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button