
মোঃ হাবীব আজম, রাঙ্গামাটি : রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলা দূর্গম বড়থলী ইউনিয়নের ভারত সীমান্ত এলাকায় ত্রিপুরা পাড়ায় তিনটি গ্রামবাসীর উপর সন্ত্রাসীরা এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে হত্যা করার হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে তিনজন গ্রামবাসী নিহত ও ৪জন গুরুতর আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এসময় ৪ জনই পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পেয়েছে। মঙ্গলবার (২১জুন) রাত ৮টার দিকে বিলাইছড়ি উপজেলা বড়থলি ইউনিয়নে সাইজাম নতুন পাড়ায় এই ঘটনা ঘটে। নিহত ব্যক্তিরা হলেন, বৃষচন্দ্র ত্রিপুরা, সুভাষ ত্রিপুরা এবং ধনরা ত্রিপুরা। এদের মধ্যে সুভাষ এবং ধনরা সম্পর্কে বাবা-ছেলে বলে জানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান আতুমং মারমা। হতাহতের ব্যাপারে ওই এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির ইউনিয়ন সভাপতি আতুমং মারমা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। একই দাবি করেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি মেম্বার ওয়েইবার ত্রিপুরা।
তবে হত্যাকান্ডের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আতুমং মারমার বলেন, মঙ্গলবার (২১ জুন) রাত ৮টার দিকে ‘কুকিচীন পার্টি’ নামের একটি নতুন সশস্ত্র সংগঠনের কর্মীরা বড়থলি ইউনিয়নের সাইজান নতুন পাড়ায় এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করলে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তবে ঘটনার ২২ ঘণ্টা পরও বুধবার (২২ জুন) বিকেল ৩টা পর্যন্ত কেউ ঘটনাস্থলে যাননি।’ ঠিক কী কারণে এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারেননি তিনি।
বিলাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান বলেন, বড়থলির ইউপি চেয়ারম্যান আমাকে বিষয়টি জানানোর পর আমি বিলাইছড়ি থানাকে জানিয়েছি। এলাকাটি এতই দুর্গম যে সেখানে বিলাইছড়ি থেকে তিনদিন, পার্শ্ববর্তী বান্দরবান রুমা উপজেলা থেকে যেতেও দুদিন সময় লাগে। পুরো বিষয়টি রুমা জোনকে জানানো হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখছেন।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মাহমুদা বেগম বলেন, বিষয়টি আমরাও শুনেছি। তবে দুর্গম এলাকা হওয়ায় সেখানে পৌঁঁছানো কঠিন এবং সময়সাপেক্ষ। তাই আমরা এখনো নিশ্চিত কিছু বলতে পারছি না।
এদিকে ‘কুকিচীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট-কেএনএফ’ নামের সংগঠনটি তাদের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেছে। কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট কেএনএফ’ এর ফেসবুক পেইজে কয়েকদিন আগেই এই ধরনের হামলা চালানোর ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়ে ষ্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছিলো। সংগঠনটির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, জেএসএস এর সন্ত্রাসীরা স্থানীয় গ্রামবাসীদের মধ্যে মিশে গেছে। আর স্থানীয় গ্রামবাসীরাও তাদের সহযোগিতা করছে। জেএসএস সন্ত্রাসীরা যাতে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়, সে বিষয়ে সতর্কবার্তাও উক্ত পেইজে দেওয়া হয়েছিলো। এর মাত্র কয়েকদিন পরেই মঙ্গলবার রাতে এই হামলা চালিয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী এই সংগঠনটি।
উল্লেখ্য, বিলাইছড়ি উপজেলার সবচেয়ে দুর্গম এই ইউনিয়নে সড়ক যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থা নেই। মোবাইল নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন এ ইউনিয়নে চাইলেই যোগাযোগ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। রাঙ্গামাটি-বান্দরবানের সীমান্তবর্তী এই ইউনিয়নটির মানুষের যাতায়াত মূলত বান্দরবানের রুমা উপজেলা হয়ে। যে কারণে রাঙ্গামাটির স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকেও তথ্য পেতে বেগ পেতে হচ্ছে। তাই প্রশাসন থেকে পুরো বিষয়টি রুমা জোনকে জানানো হয়েছে।