sliderশিরোনামশ্রমিক

বিরোধীদের কর্মসূচিতে বোমা মারতেন যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতারাই, দাবি শ্রমিক ফেডারেশনের

বিরোধী দলের কর্মসূচিতে পরিবহনে যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতারা পেট্রোলবোমা মেরে তারাই আবার বিরোধী মতের মানুষকে আসামি করে মামলা করতেন বলে অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন।
ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিরোধী দলের হরতাল, অবরোধসহ বিভিন্ন আন্দোলনে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগের নেতাকর্মীরা চলমান গাড়িতে পেট্রোল বোমা মেরে ড্রাইভার ও যাত্রীদেরকে হতাহত করে আবার তারাই ওই ঘটনায় বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দের নামে মামলা করতো।

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন। ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি ও সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান গ্রেপ্তার হন গত বৃহস্পতিবার। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলের অন্যান্য নেতাদের মতো শাজাহান খানও আত্মগোপনে ছিলেন। একইসঙ্গে তার নেতৃত্বাধীন শ্রমিক ফেডারেশনের শীর্ষ কর্তারাও আত্মগোপনে চলে যান।

এই অবস্থায় গত মঙ্গলবার এক জরুরি সভা শেষে সংগঠনের কার্যকরী সভাপতি আব্দুর রহিম বক্স দুদু ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির খান ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শ্রমিক ফেডারেশনের দায়িত্ব নেন।
দায়িত্ব নেওয়ার পর তারা এই প্রথম সংবাদ সম্মেলনে আসেন। এতে শাজাহান খানসহ শ্রমিক নেতাদের বিরুদ্ধে গুরুতর এই অভিযোগ তোলেন পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নতুন নেতারা। হামলা-মামলা ছাড়াও সাবেক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী চাঁদাবাজি ও হত্যাকাণ্ড-দুর্ঘটনার পর নানাভাবে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও তোলেন নতুন নেতারা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত লিখিত বক্তব্যে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান বলেন, ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এদেশের ৭০ লক্ষ শ্রমিকের প্রাণপ্রিয় সংগঠন। এ সংগঠন অরাজনৈতিকভাবে পরিচালিত হওয়ার কথা। আমাদের ফেডারেশনের একটি স্লোগান রয়েছে ‘‘যার যার দল তার তার, পরিবহন শ্রমিক এক কাতার’’। কিন্তু বিগত সরকারের আমলে সংগঠনের নিয়ম ভঙ্গ করে একটি রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় পরিচালনা করে আসছিল।’

ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ফেডারেশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক শ্রমিক কর্মচারী পেশাজীবী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ গঠন করে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন অফিসকে দলীয় কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করেন। শাজাহান খান ও ওসমান আলীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের অধিকাংশ জেলার টার্মিনালগুলোতে শ্রমিক স্বার্থের পরিবর্তে বিরোধী দলের গণতান্ত্রিক আন্দোলন নস্যাৎ করার জন্য পেশাজীবী শ্রমিক সংগঠনের পক্ষে কাজ করাতে তৎকালীন নেতৃবৃন্দ বাধ্য করতেন।
তাদের নির্দেশনা কেউ অমান্য করলে তাদের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় হয়রানি করা হয়।’

তিনি বলেন, বিরোধী দলের আন্দোলন হরতাল অবরোধে পরিবহন শ্রমিকদের গাড়ি চালাতে বাধ্য করা হতো। আবার যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিকলীগ সন্ত্রাসীরা চলমান গাড়িতে পেট্রোল বোমা মেরে ড্রাইভার ও যাত্রীদেরকে হত্যা ও আহত করে। পরে ওইসব ঘটনায় বিরোধী দলের নেতৃবৃন্দের নামে মামলা করা হতো। যার পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে ছিলেন শাজাহান খান, ওসমান আলী ও খন্দকার এনায়েত উল্লাহ।

হুমায়ুন কবির খান আরও বলেন, ‘জ্বালাও, পোড়াও অগ্নিসন্ত্রাস প্রতিরোধের নামে নিজেরাই ক্ষেত্র তৈরি করে আহত এবং নিহত ব্যক্তিদের আর্থিক সহযোগিতার নামে পরিবহন খাত থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় এবং সরকারি ফান্ড থেকেও সাহায্যের নামে কোটি কোটি টাকা গ্রহণ করে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে দু-একটি পরিবারকে আর্থিক সহযোগতা করে মিডিয়াতে প্রচার করে শাজাহান খান, ওসমান আলী ও খন্দকার এনায়েত উল্লাহ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।’

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বিগত আওয়ামী সরকারের সময় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন ব্যবহার করে এবং শ্রমিক কর্মচারী, পেশাজীবী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের ব্যানারে সরকারের সকল অপকর্ম সমর্থন করে কাজ করে। শ্রমিক ও মালিকের স্বার্থে কোনো কাজ করেনি। যার ফলে সারাদেশের পরিবহন শ্রমিক মালিকদের মধ্যে প্রচণ্ড অসন্তোষ ছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলন প্রতিহত করা জন্য শাজাহান ও ওসমান আলী সরাসরি নেতৃত্ব দেয়।

তাদের নেতৃত্বে ফেডারেশন ও পেশাজীবী পরিষদের ব্যনারে ঢাকা, সায়েদাবাদ, মহাখালী, গুলিস্তান, মাদারীপুর, নরসিংদীসহ অন্তত ৫০টি টার্মিনালে ছাত্র জনতার আন্দোলন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়ে সমাবেশ করা হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণে কোনো শ্রমিক ও মালিক মুখ খুলতে পারেননি। ছাত্র জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতন ঘটলে শাজাহান খান ও ওসমান আলী গং আত্মগোপনে চলে যায়।

বিগত দিনে তাদের ভুল নেতৃত্বের কারণে সারাদেশে পরিবহন শ্রমিকদের ভাবমূর্তি মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যে করণে সারাদেশে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা শাজাহান খান ও ওসমান আলী গংদের প্রত্যাখান করে।

এখানে উল্লেখ্য, এখনো বর্তমান দেশের শিল্প কারখানা, পরিবহনসহ বিভিন্ন সেক্টরে শ্রমিক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নামে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি করে ছাত্র জনতার এ বিজয়কে নস্যাৎ করা জন্য ওসমান আলীর নেতৃত্ব রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। আশুলিয়া, সাভার, ইপিজেড, গাজিপুর, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা ভাঙচুর সহ বহু ঘটনার নায়ক এই ওসমান।
ধানমন্ডির জিগাতলায় এক কিশোরকে হত্যার মামলায় গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার হয়েছেন সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সদ্য সাবেক সভাপতি ও সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। এরপর ৪ অাগস্ট তাকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button