সম্প্রতি ছত্তিশগড়ের বীজাপুরে সাবেক দুই পঞ্চায়েত প্রধানকে খুন করেছে মাওবাদীরা। এক সময় এই বীজাপুরের বিস্তীর্ণ এলাকায় দাপট ছিল মাওবাদীদের। ক্রমাগত ওই দাপট খর্ব হয়েছে যৌথ বাহিনীর অভিযানে। বর্তমানে ওই রাজ্যে ক্ষমতায় বিজেপির সরকার। এহেন পরিস্থিতিতে ছত্তিশগড়ে মাওবাদীরা নতুন হুমকি দিয়েছে, ‘বিজেপি ছাড়ো, নয়তো মরো’।
ছত্তিশগড়ের বীজাপুরে বিজেপিবিরোধী আওয়াজ তুলে লিফলেটে দেয়াল ভরিয়েছে মাওবাদীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বীজাপুরে একটি জায়গা থেকে উদ্ধার হয়েছে সুকলু ফারসা ও সুখরাম আভালামের লাশ। তারা ছিলেন এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান। এদের বুধবার অপহরণ করা হয়। গত রাতেই ফারসার কিশোরী মেয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন। ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তার বাবা নিজের প্রাণের ভিক্ষা করছেন। তবে শেষমেশ ওই কিশোরী তার বাবার লাশ দেখতে পান। ওই লাশের দৃশ্যে দেখা যায়, তার বাবার গলা কাটা ছিল। গত ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ জন বিজেপি কর্মী ও তিনজন কংগ্রেস কর্মী খুন হয়েছেন বস্তার এলাকায়। বিজেপি কর্মীদেরও সাফ হুমকি দিয়ে যাচ্ছে মাওবাদীরা। সেখানে বলা হচ্ছে, বিজেপি না ছাড়লে খুন হতে হবে। চলতি বছরের মার্চে এই পরিস্থিতির মাঝে সেখানের ৪৩ জন বিজেপি নেতাকে আলাদা করে পুলিশি নিরাপত্তা দেয়া হয়।
মাওবাদীদের হাতে নিহত ফারসা ছিলেন ছত্তিশগড়ের আদওয়ারা-বিরিয়াভূম গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান। ২০০৪ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি সেখানে ওই ভূমিকায় ছিলেন। তিনি বিজেপির কৃষক সংগঠনেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন। তিনি বৈমারগড়ে বিজেপির কৃষক সংগঠনের নেতা ছিলেন। যে বৈমারগড়ের কথা হচ্ছে, সেটি মাওবাদীদের আঁতুড়ঘর। এই এবাকা বীজাপুর ডেলা হেডকোয়ার্টারের থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে। সেটি রাইপুর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে।
কী লেখা ছিল লিফলেটে
বলা হচ্ছে, মঙ্গলবার বিকেলে আদওয়াড়া গ্রাম থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় মাওবাদীরা। এক অন্ত্যেষ্টীর অনুষ্ঠানে ফারসা যোগ দিতে যাওয়ার সময়ই তাকে অপহরণ করা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। জানা যাচ্ছে, ফারসার সাথে সেদিন ছিলেন তার স্ত্রী। তখনই বেশ কয়েকজন তাদের ঘিরে ধরে। এরপরই চলে অপহরণ। তারপর তাদের একটি জঙ্গল এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। তার পরিবার প্রথমে বুঝতে পারেনি যে অপহরণকারীরা মাওবাদী। পরে গোটা ঘটনা স্পষ্ট হয়।
যে লিফলেট এলাকায় ঘুরপাক খাচ্ছে দেয়ালে দেয়ালে, সেখানে সাফ লেখা রয়েছে, ‘ওনাকে ২ থেকে ৩ বার সাবধান করা হয়েছিল। তিনি পাত্তা দেননি, পরে চতুর্থবার পএলজিএ তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। আমরা বিজেপি কর্মীদের বলছি, পার্টি ছাড়তে, নয়তো তাদেরও নিশ্চিতভাবে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে। এটা হুঁশিয়ারি।’
অন্যদিকে, মৃত সুখারামের লাশ উদ্ধার হয় কাদের নামে এক গ্রামে। মাওবাদীরা লিফলেটে লিখছে, সুখারাম এলাকায় নিরাপত্তার ক্যাম্প করার জন্য একটি পেপারে স্বাক্ষর করেন। যে পঞ্চায়েত প্রধান জনতাকে প্রতারণা করে, পুলিশের হয়ে কাজ করে, তাকে পিএলজিএ মৃত্যুদণ্ড দেবে।’
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস