বিবিধশিরোনাম

বাল্য বন্ধুর টানে জো মিলেনের বাংলাদেশ অভিযান

জন্ম থেকে বধির জো মিলেন জীবনে প্রথম কোন কিছু শুনতে পান ৩৯ বছর বয়সে। তার কানে ফিট করা হয়ে এক যন্ত্র, যার নাম ককলিয়ার। একজন নার্স জো মিলেনকে কিছু পড়ে শোনাচ্ছিলেন, সেটা শুনে তার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়াতে থাকে। লক্ষ লক্ষ মানুষ ইন্টারনেটে সেই ভিডিও দেখেছেন।
জো যেভাবে যন্ত্রের সাহায্যে তার শ্রবণশক্তি ফিরে পেয়েছেন, বাংলাদেশের শত শত বধির শিশুকেও সেভাবে শ্রবণশক্তি ফিরে পেতে সাহায্য করতে চান। সেজন্যে তিনি গিয়েছিলেন বাংলাদেশে। আর বাংলাদেশকে বেছে নেয়ার কারণ, সেখানেই থাকেন তার শৈশবের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু।
জো মিলেন এবং আমিনা খান, দুজনের বন্ধুত্বের শুরু যখন তাদের বয়স ১১. উত্তর পূর্ব ইংল্যান্ডের গেটসহেডের এক এলাকায় থাকতেন তারা।
দুজনেই আলাদা। একজন বধির। অন্যজন পুরো এস্টেটের মধ্যে একমাত্র এশিয়ান। তাই স্কুলে, খেলার মাঠে তাদের অন্য বন্ধুদের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ সইতে হতো। তার মধ্যে এই দুজনের মধ্যে গড়ে উঠলো বন্ধুত্ব।
কিন্তু ১৬ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে গেল আমিনার। চলে গেলেন বাংলাদেশে।

 শৈশব-কৈশোরের প্রিয় বান্ধবী আমিনার সঙ্গে জো
শৈশব-কৈশোরের প্রিয় বান্ধবী আমিনার সঙ্গে জো

দুজনের আবার দেখা বহু বছর পর, যখন জো ফিরে পেলেন তার শ্রবণশক্তি।
“যখন আমরা বেড়ে উঠছিলাম, তখন আমরা ঠিক করেছিলাম, বড় হয়ে আমরা বাংলাদেশের গরীব ছেলে-মেয়েদের সাহায্য করার চেষ্টা করবো,” বলছিলেন আমিনা।
বাংলাদেশে পাঁচ শতাংশ শিশু বধির। এদের অন্তত পাঁচশো জনের কানে ‘হিয়ারিং এইড’ ফিট করার পরিকল্পনা নিয়েছেন জো। একাজে তার সহযোগী একটি মার্কিন ব্যান্ড দল ‘দ্য অসমন্ডস’।
যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ অঙ্গরাজ্যের এই মার্কিন ব্যান্ডদলটি ছয় ভাইকে নিয়ে গড়া। তাদের বড় ভাইও বধির। তাই যখন তারা ইন্টারনেটে জো মিলেনের শ্রবণশক্তি ফিরে পাওয়ার ভিডিও দেখলো, তারা ঠিক করলো, অন্য বধিরদের সাহায্য করতে তারা কিছু একটা করবে। সেখান থেকেই বাংলাদেশ প্রজেক্টের যাত্রা শুরু।
হিয়ারিং এইড লাগানোর পর শ্রবণ শক্তি ফিরে পাওয়া শিশুদের কয়েকজন
হিয়ারিং এইড লাগানোর পর শ্রবণ শক্তি ফিরে পাওয়া শিশুদের কয়েকজন

জো বাংলাদেশে গেলেন। বহু বছর পর সাক্ষাত হলো বাল্য বন্ধু আমিনা খানের সঙ্গে।
ঢাকায় বধির শিশুদের জন্য ক্লিনিক বসলো্, যেখানে পাঁচশো শিশুর কানে ফিট করা হবে ‘হিয়ারিং এইড’।
সেখানে দুই ছেলে এবং এক মেয়েকে নিয়ে এসেছিলেন রোকেয়া বেগম। তাদের সবার কানে ফিট করা হয়েছে হিয়ারিং এইড। ওরা এখন আমার কথা শুনতে পায়, জানালেন তিনি।
১৬ বছরের মরিয়মও এসেছিলেন সেখানে। ‘আমি এখন কবুতরের ডাকও শুনতে পাই’ বললেন তিনি।
বহু বছর পর ঢাকায় আমিনার সঙ্গে জো
বহু বছর পর ঢাকায় আমিনার সঙ্গে জো

জো মিলেন যা ফিরে পেয়েছেন, অন্য শিশুদেরও ফিরে পেতে সাহায্য করতে পেরে আনন্দিত।
জো মিলেনের কানে যে যন্ত্রটি লাগানো আছে তার নাম ককলিয়ার। এটি খুবই অত্যাধুনিক একটি যন্ত্র। পৃথিবীর যাবতীয় শব্দ, কথা, সুর থেকে প্রায় পুরো জীবন বঞ্চিত থাকার পর, এখন দুকান ভরে তিনি এসব শুনতে পারেন। তবে এখন তিনি চান, তার মতো বধির মানুষদের সাহায্য করতে।
সুত্র: বিবিসি

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button