
বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল বান্দরবানের থানচি উপজেলায় দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ‘তীব্র খাদ্য সংকট’ চলছে বলে উল্লেখ করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং বেসরকারি সংস্থাগুলো।
গত বেশ কিছুদিন ধরেই এই সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে বলে জানা যাচ্ছে।
থানচি উপজেলার তিন্দু , রেমাক্রি, হৈয়ুকসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় এই খাদ্য সংকট চলছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন।
বান্দরবানের থানচি উপজেলার চেয়ারম্যান ক্যহ্লা চিং মারমা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন এ বছর সে এলাকায় জুম চাষ সফল না হওয়ায় এই খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছে।
বান্দরবন জেলা প্রশাসন জানিয়েছে এই এলাকাগুলোতে প্রায় দশ হাজার লোকের বসবাস। সে এলাকায় ত্রিপুরা, খিয়াং, মুরং এবং মরমা উপজাতিদের বসবাস।
এই এলাকার মানুষের জীবন সম্পূর্ণ জুমচাষের উপর নির্ভরশীল।
উপজেলা চেয়ারম্যানের ভাষ্য অনুযায়ী, জুম চাষ সফল না হওয়ায় চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
তখন থেকেই সেখানকার মানুষ পাহাড়ি জঙ্গলের আলু খেয়ে তাদের খাদ্যের চাহিদা মেটাচ্ছিলেন। কিন্তু এখন সেই পাহাড়ি আলুও নেই।
সে কারণে খাদ্য সংকট তীব্র হয়েছে বলে উল্লেখ করেন থানচি উপজেলার চেয়ারম্যান।

এখন নদীতে পানি কম থাকায় বান্দরবানের বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছানো বেশ কঠিন বলে উল্লেখ করেন বেসরকারী সংস্থা কারিতাসের একজন কর্মকর্তা।
থানচি এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার সবটুকুই প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। দুর্গম এ এলাকায় যাতায়াত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
বান্দরবানে কর্মরত বেসরকারি সংস্থা কারিতাসের ফুড সিকিউরিটি ইউনিটের কর্মকর্তা রূপানা দাস সে এলাকার পরিস্থিতিকে ‘মারাত্মক’ বলে বর্ণনা করেছেন।
তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এখন তারা খাদ্য হিসেবে যেটা নিচ্ছে সেটা এক ধরনের আলু। জংলী আলু বলে”।
তিনি বলেন একমাত্র নদীপথেই সে এলাকাগুলোতে যেতে হয়। এখন নদীতে পানি কম থাকায় সেসব এলাকায় পৌঁছানো বেশ কঠিন বলে উল্লেখ করেন রূপানা দাস।
তিনি বলেন, “সে এলাকায় কোন কিছু বহন করে নিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন কাজ”।
তবে এ পরিস্থিতিকে ‘খাদ্য সংকট’ বলে মনে করছে না জেলা প্রশাসন।
থানচি এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার সবটুকুই প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। দুর্গম এ এলাকায় যাতায়াত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন দুর্গম এলাকার ৮০০ পরিবারের জন্য জেলা প্রশাসন এরই মধ্যে চাল পাঠিয়েছে। প্রতিটি পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার জানান, এর বাইরে আরো ১৫০০ পরিবারের জন্য খাদ্য সহায়তা পাঠানো হবে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে ২৩০০ পরিবারের জন্য খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন , “এটা ঠিক খাদ্য সংকট না। খরাজনিত সমস্যা”।
খাদ্য সংকট না হলে জেলা প্রশাসন কেন চাল বিতরণ করছে?
এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, “ফুড (খাদ্য) দিতে হচ্ছে.. কারণ তারা চেয়েছে, আমরা দিচ্ছি। সংকট বলা চলে না আর কি”।
তিনি বলেন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দুর্গম সে এলাকায় সরকারের উদ্যোগে ফলের গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়েছে। যাতে করে সে এলাকার মানুষ সেখান থেকে তাদের খাদ্য চাহিদা মেটাতে পারে। সুত্র: বিবিসি