
বাঘাইছড়ি প্রতিনিধি: রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলায় “গ্রীন বাংলা এগ্রোভেট লিমিটেড” একটি কোম্পানির কৃষি পন্য (হেপ্টা হাইড্রেট)’ নামক অনুখাদ্য যার পণ্যের গুণগত মান পরীক্ষা করে সেটিকে ভেজাল ও নিম্নমানের হিসেবে ঘোষণা করেছে বাঘাইছড়ি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম বিভাগীয় গবেষণাগার কর্তৃক পরিচালিত এই পরীক্ষার ফলাফলে কৃষি উপকরণ হিসেবে পণ্যটির মানের গুরুতর ত্রুটি ধরা পড়ে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান কর্তৃক গত ১৫ জানুয়ারি, জারি করা এক নির্দেশনায় পণ্যটি বাজার থেকে ৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, গ্রীণ বাংলা এগ্রোভেট কোম্পানি লিমিটেডের সরবরাহকৃত এই পণ্য কৃষকদের জমির উৎপাদনশীলতার পরিবর্তে ক্ষতি করছে। মৃত্তিকা গবেষণাগার চট্টগ্রামের স্মারক নং: মৃত্তিকা/চট্ট/ফলাফল/সার-গবে।১/২০০৯/৫০.৩১/৩৭ অনুযায়ী, জিবি জিংক পণ্যে ঘোষিত মানের সঙ্গে প্রকৃত মানের মিল নেই।
উপজেলা কৃষি অফিসারের জারি করা চিঠি (স্মারক নং: মৃত্তিকা/চট্ট/ফলাফল/সার-গবে।১/২০০৯/৫০.৩১/৩৭) অনুযায়ী, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম একটি গবেষণায় দেখিয়েছে যে, জিবি জিংক পণ্যটি ঘোষিত মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই অনুখাদ্য সার ব্যবহারে জমির উর্বরতা হ্রাস পেতে পারে, যা কৃষকদের ফলন ও ফসলের উৎপাদনে বড় ধরণের ক্ষতি ডেকে আনবে।
এসময় গবেষণায় উঠে এসেছে কোম্পানির কিছু গুরুত্বপূর্ণ ত্রুটি যেখানে, পন্যের উপাদান ঘাটতি, গুনগত উপাাদান নিম্নমান, সার প্রয়োগের ফলে মাটির উর্ভরতা হ্রাস পেতে পারে।
এদিকে, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কোম্পানির প্রতিনিধিকে ৫ কর্ম দিবসেরে মধ্যে পন্য বাজার থেকে সরিয়ে নিতে হবে, পন্যের গুনগত মান কম হওয়া সপক্ষে সঠিক ও যোক্তিক ব্যাখা প্রদান। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্দেশনা পালনে ব্যর্থ হলে কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
স্থানীয় কৃষক আলতাফ হোসেন বলেন, ভেজাল ও নিম্নমানের কৃষি উপকরণ ব্যবহার কৃষকদের জন্য বড় ধরনের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এসব পণ্য জমির উর্বরতা কমিয়ে দেয়, ফলে ফসলের উৎপাদনশীলতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। এ ছাড়া এসব পণ্যের রাসায়নিক উপাদান মাটির গঠন ও পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে।
আমরা সার কেনার সময় কোম্পানির কথা বিশ্বাস করি। কিন্তু এই ধরনের ভেজাল সার ‘ফসল‘ নষ্ট করে আমাদের জীবনযাত্রা কঠিন করে তুলছে।
কোম্পানির মার্কেটিং অফিসার উত্তম চন্দ্র নাথ, দীঘিনালা, লংগদু ও বাঘাইছড়ি উপজেলায় এসব পন্যের সাপ্লাই দিয়ে থাকে বলেও জানা যায়।
জাতিসংঘের আহ্বানে সাড়া দিয়ে গত বছর বিষাক্ত কীটনাশক কার্বোফুরান নিষিদ্ধ করে সরকার। কিন্তু যথাযথ নজরদারির অভাবে এখনো সারাদেশে প্রকাশ্যেই এই কীটনাশক বিক্রি হচ্ছে।
কৃষি কাজে বহুল ব্যবহৃত কার্বোফুরান প্রথম নিষিদ্ধ করা হয় গত বছরের ৩০ জুন। এরপর আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।
সূত্রে জানা যায়, এছাড়াও বাঘাইছড়ি, দীঘিনালা ও লংগদু উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চোখ ফাঁকি দিয়ে বাজার বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ কার্বোফুরান নামক কীটনাশক। খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়ে হৃদরোগ ও স্ট্রোকে ঝুঁকি বাড়ায় এই কার্বোফুরান।
উল্লেখ্য যে, গত ২০২৩ সালের জুন মাসে এই কার্বোফুরান বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয় সারাদেশে। কিন্তু আইন না মেনেই পাহাড়ের এসব বাজারে বিক্রি হচ্ছে এই বিষাক্ত ওষুধ। জাতিসংঘের আহ্বানে কার্বোফুরানের বিষাক্ততা মানব স্বাস্থ্য ও আবাদযোগ্য জমির উর্বরতা উভয়ের জন্য ক্ষতিকর উল্লেখ করে ২০১৬ সালে তা নিষিদ্ধের আহ্বান জানায় জাতিসংঘ। কার্বোফুরান নিষিদ্ধ করা ৮৮তম দেশ হয় বাংলাদেশ।
কৃষি কৃষি কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা গ্রীন বাংলা এগ্রোভেট ভেজাল পণ্যটি সর্ম্পকে কোম্পানি প্রতিনিধিকে অফিসিয়ালি নোটিশ করেছি ভেজাল পন্যের ব্যাখা ও বাজার হতে পন্য সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছি।