slider

বাউফলে তালেরশাঁস বিক্রির হিড়িক

মো.দুলাল হোসেন, বাউফল প্রতিনিধিঃ আবহামান কাল থেকেই বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধি করে তুলছে পুষ্টিগুনে ভরপুর বিভিন্ন গ্রামীণ ফলমূল। তালের শাঁস তার মধ‍্য অন‍্যতম একটি জনপ্রিয় খাবার। জ্যৈষ্ঠ মাসকে বলা হয় মধু মাস। আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, আনারস, তাল শাঁস ইত্যাদি ফল পাওয়া যায় এ মাসেই। অার এ মাসে প্রচণ্ড গরমে স্বস্তি মিলছে সুস্বাদু তাল শাঁসে। জ্যৈষ্ঠ মাসে বাহারি রকম ফল পাওয়া যায় বলে এ মাসে সাধারণ মানুষ তৃপ্তি ভরে ফল খায়। এ মৌসুমের বিশেষ একটি ফল হলো তালের শাঁস। অার এ সময় হাট-বাজারে তাল শাঁসের কদর বেড়েছে বেশ। ছোট-বড় সব বয়সী মানুষের পছন্দের তালশাঁস বিক্রি হচ্ছে ফেরি করেও।

সরেজমিনে এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বগা, কালাইয়া, ধূলিয়া, নিমদি ও নুরাইনপুর লঞ্চঘাট সহ উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার, লোকসমাগম স্থানে কিংবা রাস্তার পাশে তালের শাঁস বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। তালের শাঁস খেতে আসা কয়েক জন ক্রেতার সাথে কথা হয়। তারা বলেন, তাল শাঁস খেতে দারুন মজা। অার ওই তাল শাঁস খুব বেশি সময় থাকে না। কারণ শাঁস শক্ত হয়ে গেলে তা অার খাওয়ার উপযোগী থাকে না। তাই রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েই খাচ্ছি। এ সময় কেউবা পরিবারের জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতেও। এ ছাড়াও বাউফলের তাল সড়কে প্রায় সারা দিনই চলে দুরান্ত কিশোরদের গাছ থেকে তাল পাড়া এবং খাওয়ার ধূম।

বাউফল উপজেলা বিভিন্ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভ্যান গাড়িতে তাল শাঁস বিক্রেতারা জানান, এ মৌসুমে তাল শাঁসের চাহিদা সব সময়ই বাড়ে। এবার নজিরবিহীন গরমে চাহিদা বেড়েছে প্রচুর। গ্রাম ঘুরে তাল সংগ্রহ করে উপজেলা সদরে এনে বিক্রি করছেন। প্রতি পিস তাল আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকায়। এতে লাভ হচ্ছে ভালোই। প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ টি তাল বিক্রি হচ্ছে। তারা জানান, সারা বছরই বিভিন্ন পেশার সঙ্গে জড়িত। গ্রীষ্ম মৌসুমে বিভিন্ন ফল বিক্রির পাশাপাশি এ সময় প্রতি বছরই তাল শাঁস বিক্রি করেন। গ্রামাঞ্চলে ঘুরে ঘুরে তালগাছ কিনে বিক্রি করছেন। তবে তাল গাছ ক্রমেই কমে যাওয়ায় সংগ্রহ করতে বেগ পেতে হচ্ছে। তাল গাছের সাথে বড় বাঁশ বেধেঁ অনেক কষ্ট করে তাল পাড়তে হয়।

সদর ইউনিয়নের বিলবিলাসের নুরুল ইসলাম জানান, প্রত্যেক তালে ৩টি চোখ বা বিচি থাকে। সেই বিচিতে থাকে রস। তালের মিষ্টি রস খেতে শিশুরাসহ সবাই বেশ পছন্দ করে। ছোট তালের বিচিতে রস বেশি থাকে। বড় হলে শাঁস শক্ত হয়ে যায়। খেতে ভালো লাগে না। সাধারণত ছোট ও মাঝারি আকারের তাল ভালো চলে। সবাই ছোট অাকারের তাল বেশি পছন্দ করে। তাই ছোট তালের চাহিদাও অনেক বেশি।

তালশাঁস ক্রেতা রিপন সিকদার বলেন, পরিবারের সবাই তাল শাঁস খুব পছন্দ করেন। তাই সুযোগ পেলেই তাল শাঁস কিনে থাকি। সুমিষ্ট এ ফলটি অল্প সময়ের জন্য মেলে।

বাউফল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অাবাসিক চিকিৎসক ডা. আবদুর রউফ বলেন, তাপমাত্রার কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত ঘামে শরীর থেকে যে পানি বেরিয়ে যায় তা পূরণ করে তালশাঁস। গরমে শরীর ও পেট ঠান্ডা রাখে। বিভিন্ন শারীরিক সমস্যাও দূর করে। এতে রয়েছে আয়োডিন, মিনারেলস, পটাশিয়াম, জিঙ্ক ও ফসফরাস। তাছাড়া ভিটামিন ও খনিজ উপাদানে ভরপুর তাল শাঁস। এ ছাড়াও বজ্রপাত থেকে রেহাই পেতেও তাল গাছ বেশ ভূমিকা রাখে।

তাই আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও বজ্রপাত হতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করতে ব‍্যাপক পরিমাণ তাল গাছ রোপন করা উচিত।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button