sliderস্থানীয়

বাংলাদেশে পাচারের জন্য ভারতের ত্রিপুরায় গাজার চাষ

দেশের পূর্বাঞ্চল সীমান্ত পথে ভারত থেকে বাংলাদেশে গাঁজা পাচার বেড়েছে। বিশেষ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাসহ বৃহত্তর কুমিল্লার বিভিন্ন সীমান্ত পথে দেদারছে ভারতের ত্রিপুরা থেকে দেশে আসছে গাঁজা। ২০২৪ সালে বিপুল পরিমাণ গাজাসহ ১৫০ কোটি টাকার ভারতীয় অবৈধ চোরাই পণ্য উদ্ধার করেছে ৬০ বিজিবি সদস্যরা। এছাড়াও অন্যান্য আইন শৃংখলা বাহিনী প্রতিদিন বিপুল পরিমান গাঁজা উদ্ধার করছে। ত্রিপুরার শত শত একর ভূমিতে চাষ করা হয় এসব গাজা। দুই দেশের কয়েকটি সিন্ডিকেট এই গাজা পাচার নিয়ন্ত্রণ করছে। ত্রিপুরার সংবাদ মাধ্যম ও বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে এসব জানা গেছে।

জাগরণ ত্রিপুরা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী পুরো ত্রিপুরা রাজ্যে গাঁজার চাষ হয়। অল্প পুজিতে অধিক মুনাফা লাভের আশায় সেখানকার বাড়ির উঠান হোক বা সংলগ্ন জমি, সর্বত্রই গাঁজা গাছের চাষ হয়। রাতারাতি বিলাসবহুল বাড়ি ও গাড়ির মালিক হওয়ার লোভে ত্রিপুরার কৃষকরা ফসল চাষের বদলে গাঁজা চাষে বেশি আগ্রহী। ত্রিপুরায় গাজা চাষ বেআইনী হলেও প্রতিরোধে তেমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় না। মাঝে মধ্যে কিছু গাছ ধ্বংস করা হয়। ডিসেম্বর মাসে তিনটি জমির দেড় লাখের মত গাঁজা গাছ ধ্বংস করেছে সেখানকার বিশালগর ও যাত্রাপুর থানা পুলিশ। সীমান্ত সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে পাচারের জন্য ত্রিপুরার কৃষকরা গাজার চাষ করছে।

সংবাদে আরো বলা হয়, ত্রিপুরা রাজ্যের বাংলাদেশ সীমান্তের কমলনগর, আনন্দপুর, ধনিরামপুর, ঘাটিঘর, দক্ষিণ কলম চৌড়া, উত্তর কলমচৌড়া,বাগবের, মানিকনগর, বেলারচর, বক্সনগর, পুঠিয়া, রহিমপুর, যাত্রাপুর, বিশালগরসহ ত্রিপুরা রাজ্যের সিপাহীজলা জেলা,পশ্চিম জেলা ও খোয়াই জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় গাজার চাষ হয় বেশি। সেখানে বেশির ভাগ সরকারি খাস জমিতে গাজার চাষ হয়। বড় বড় গাঁজা চাষীরা লাখ লাখ টাকা খরচ করে, খামার বাড়ি বানিয়ে বাগানের মধ্যে থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করে। বাংলাদেশ এবং ত্রিপুরা রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে শ্রমিক এনে গাঁজা চাষের কাজ করা হয় বলেও সংবাদ মাধ্যমটি খবর প্রকাশ করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ত্রিপুরা রাজ্যে চাষকৃত এসব গাঁজার বেশির ভাগ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাচার হয়। দেশের অন্যতম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আখাউড়া, বিজয়নগর, কসবা, কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া, কুমিল্লা আদর্শ উপজেলা, হবিগঞ্জ ও ফেনী জেলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে গাঁজা প্রবেশ করছে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। এসব সীমান্তে গাঁজা পাচার কাজে বাংলাদেশ ও ভারতের বেশ কয়েকটি যৌথ সিন্ডিকেট রয়েছে। বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) ২৫ ও ৬০ ব্যাটালিয়ন সদস্যরা প্রতিদিন সীমান্ত থেকে বিপুল পরিমাণ গাজা উদ্ধার করছে। নিয়মিত থানা ও রেল পুলিশের হাতে ধরা পড়ছে গাঁজা। ইতোমধ্যে বিজিবি ও পুলিশের হাতে কিছু শীর্ষ মাদক কারবারী আটক হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও ত্রিপুরার মধ্যে সীমান্ত আছে ৮৫৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৮৩১ কিলোমিটার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দিয়েছে ভারত সরকার। বাকি ২৬ কিলোমিটার পথে বেড়া নেই।

জানা গেছে, মাদক কারবারীরা একশ্রেণীর বিএসএফের সহযোগীতায় বেড়ার উপর দিয়ে ও গেট দিয়ে কৌশলে বাংলাদেশে গাজা নিয়ে আসছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের পর রেল ও সড়ক পথে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্ধারিত মাদকের আস্থানায় চলে যায় এসব গাজা। সম্প্রতি বিজিবির ব্যাপক তৎপরতায় নিয়মিত সীমান্তে গাজা ধরা পড়ছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সুলতান ৬০ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লে: কর্নেল এ এম জাবের বিন জব্বার জানান, আখাউড়া স্থলবন্দর থেকে কুমিল্লা আদর্শ সদর পর্যন্ত তাদের দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় মাদকসহ চোরাচালানের বিরুদ্ধে বিজিবির বিশেষ অভিযান চলছে। ২০২৪ সালে বিপুল পরিমান গাজাসহ ১৪৭ কোটি টাকার চোরাই পণ্য উদ্ধার করেছে ৬০ বিজিবি সদস্যরা।

নয়া দিগন্ত

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button