sliderস্থানীয়

বাংলাদেশে দ্বীন কায়েমের মাধ্যমেই আল্লামা সাঈদী হত‍্যার বদলা নেব 

পিরোজপুর প্রতিনিধি ঃ গত ১৭ আগষ্ট শনিবার পিরোজপুর আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশন ময়দানে “আল্লামা সাঈদী রাহিঃ এর জীবন ও কর্ম” শীর্ষক আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ও বরিশাল অঞ্চল পরিচালক অ্যাডভোকেট মুয়াযযম হোসাইন হেলাল। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাডঃ হেলাল বলেন, আল্লামা সাঈদী দ্বীন কায়েমের চেষ্টা করে গেছেন, তাকে মিথ্যা মামলা সাজিয়ে ফাঁসি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি দ্বীন কায়েমের ব্যাপারে কখনো আপোষ করেননি। তার দেখানো পথে আজ হাজারো তরুণ বক্তা তৈরি হয়ে গেছে, যারা আজ দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ করছে। তিনি তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য থেকে উপস্থিত জনতার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আসুন, এদেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমরা আল্লামা সাঈদীর দেখানো পথে এগিয়ে যাই ।

উল্লেখ্য, ১৪ আগস্ট ছিল আল্লামা সাঈদী রাহিমাহুল্লাহ মৃত্যুর এক বছর। তাকে গত বছর ১৪ আগস্ট চিকিৎসার নামে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে বলে মানুষ বিশ্বাস করে। 
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য ও অঞ্চল টিম সদস্য মাওলানা ফখরুদ্দিন খান রাযী। তিনি বলেন, আল্লামা সাঈদী এদেশের মানুষকে তাগুতের গোলামী থেকে আল্লাহর গোলামে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। মানুষ কখনো মানুষের গোলাম হতে পারে না। জাগতিকশক্তি মানুষকে আল্লাহর পরিবর্তে নিজেদের গোলামী পরিণত করে শাসন-শোষণ-নির্যাতন করে। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে আমাদেরকে আল্লাহর গোলামে পরিণত হতে হবে। 

বিকেল তিনটায় আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শামীম সাঈদীর সভাপতিত্বে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পিরোজপুর জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ জহিরুল হক এবং পৌর আমীর মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক এর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় কার্যকরী পরিষদ সদস্য শফিউল্লাহ, বিশিষ্ট মুফাসসির আল্লামা তারিক মুনাওয়ার, আব্দুল্লাহ আল আমিন, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুর রব, পিরোজপুর জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আকন, আব্দুস সালাম বাতেন, যুবদল নেতা রানা, বিশিষ্ট বক্তা সাদেক রহমান, ইসলামী আন্দোলন পিরোজপুরের জেলা আমীর মাওলানা ইয়াহিয়া এছাড়াও সকল উপজেলা আমীরবৃন্দ এতে বক্তব্য রাখেন।

লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, বাংলাদেশকে একটি হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য, জামায়াত ইসলামীর নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করে বিচারের নামে প্রহসন করে ফাঁসি দেয়া হয়েছে। আল্লামা সাঈদীকে ফাঁসি দিতে চেয়েছিল, কিন্তু আপনাদের জাগরনের কারণে তারা তা করতে পারেনি। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল এখনো বহাল আছে, আমরা বলতে চাই এর বিচার অব্যাহত থাকতে হবে। এই আদালতেই খুনি হাসিনার বিচার হবে। 

এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, ছরছিনার পীর আরিফ বিল্লা সিদ্দিকী, মিরসরাই দরবার শরীফের পীর আব্দুল মোমেন নাছেরি, টেকের হাট দরবার শরীফের মাওলানা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী, 

বক্তাদের বক্তব্যের ফাঁকে ফাঁকে উপস্থিত হাজার হাজার জনতা “ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, শেখ হাসিনার ফাঁসি চাই”, “পালিয়ে গেল পালিয়ে গেল, শেখ হাসিনা পালিয়ে গেল”, “পিরোজপুরের মাটি, আল্লামা সাঈদীর ঘাটি” আরো বিভিন্ন ধরনের স্লোগানে স্লোগানে প্রাঙ্গণ মুখরিত করে তোলে।

সভাপতির বক্তব্যে আলহাজ্ব শামীম সাঈদী বলেন, আজ অনেক কথাই বলতে ইচ্ছে করে, আল্লামা সাঈদীর জীবন সম্পর্কে আলোচনা করতে গেলে অনেক কথাই বলা যায়। এত ক্ষুদ্র পরিসরে আল্লামা সাঈদীর আলোচনা শেষ করা যাবে না। তিনি বলেন গত পনেরো বছরে জাতির বুকের উপরে জগদ্দল পাথরের মত জালিম সরকার থাকে কারণে ঘরে বসেও আমরা কোন কথা বলতে পারিনি। আল্লাহ অসীম দয়ায় আমাদেরকে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, হাসিনা তাকে বিচারের নামে ফাঁসি দিতে পারে নাই তাই চিকিৎসার নামে হাসপাতালের বদ্ধ রুমে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি উপস্থিত জনতাকে প্রশ্ন করেন,  আপনারা কি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চান? জনতা সমস্বরে “জি” বলে চিৎকার করে তার কথায় সায় দেন। তিনি বলেন, এই বাংলার মাটিতে তার বিচার হবে ইনশাআল্লাহ। অতঃপর তিনি সকলকে এই প্রোগ্রাম সফলভাবে করতে পারায় মহান রাব্বুল আলামিনের শুকরিয়া আদায় করেন, উপস্থিত জনতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

আল্লামা সাঈদী ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও ইন্দুরকানি উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মাসুদ সাঈদী বলেন, আমর বাবাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলার যথেষ্ট যৌক্তিক কারন রয়েছে। মাত্র ২৪ ঘন্টা আগে আমার বাবাকে বিশ্ববাসী হাসিমুখে দেখেছে, ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে মারা গেলেন আমরা তা জানতে চাই। তিনি কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি বারান্দায় বান্দা বারান্দায় দৌড়িয়েছি, আমার আব্বার সাথে আমাকে এক মিনিটের জন্য দেখা করতে দেওয়া হয় নাই। কেন এমনটা করা হয়েছিল অবশ্যই এর মধ্যে কারণ রয়েছে। তিনি উপস্থিত জনতাকে প্রশ্ন করেন, আপনারা কি এর সুষ্ঠু বিচার চান? হাজার জনতা “চাই” বলে চিৎকার দিয়ে জবাব দেন। এ সময় বিশাল জনতা মাসুদ সাঈদীর সাথে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তিনি আরও বলেন বাংলাদেশে দ্বীন কায়েমের মাধ‍্যমেই সাঈদী হত‍্যার বদলা নেব।

বিএনপি নেতা এডভোকেট আবুল কালাম আকন বলেন, আল্লামা সাঈদীর এমপি থাকাকালী পিরোজপুরের মানুষ ভালো ছিলেন, তিনি পিরোজপুরে মানুষের চাওয়া পাওয়া পূরণ করেছিলেন। 

বিএনপি নেতা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম বাতেনী বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, আপনারা মনে রাখবেন, আমি সাক্ষী দিচ্ছি আল্লামা সাঈদী কোন রাজাকার ছিলেন না।

হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের জেলা  বাবুল হালদার বলেন, আল্লামা সাঈদী এমপি থাকাকালীন হিন্দুরা ভালো ছিল। তিনি বলেন, তাকে বলা হয়েছিল হুজুর হিন্দুরা ভোট দেয়নি, হুজুর বলেছিলেন, কে আমাকে ভোট দেয় নি কে আমাকে ভোট দিয়েছে সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়, আমি এমপি হয়েছি এখন পিরোজপুরের সকল মানুষ আমাকে ভোট দিয়েছে। এখানকার সকল মানুষ আমার কাছে সমান। 

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক মুনান, আল্লামা সাঈদী যুদ্ধাপরাধী ছিলেন না। তিনি আরো বলেন, আল্লামা সাঈদী বলতেন, কোরআন ভিত্তিক, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবেনা।

অনুষ্ঠানে আল্লামা সাঈদীর পক্ষে সাক্ষী দিতে গিয়ে গুম হওয়া সুখ রঞ্জল বালি, উপস্থিত জনতার কাছে দোয়া চান।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button