
বাংলাদেশে নানা ধরনের দুর্যোগে গণমৃত্যু হয়ে থাকে। এ ব্যাপারটি তদন্তে বাংলাদেশে কোনো সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা নেই। এ পর্যন্ত কোনো বিশেষজ্ঞ দল তৈরি হয়নি। এমনকি কাউকে অথবা কোনো একটি দলকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করা হয়নি। প্রতি বছরই কোনো না কোনোভাবে নানা ধরনের দুর্যোগে মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে শিল্প কারখানায় যে অগ্নিকান্ড ঘটছে সেগুলো কিভাবে সংঘটিত হচ্ছে, মানুষ কিভাবে মারা যাচ্ছে তা সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরার কোনো ‘সেল’ দেশে নেই।
বিদেশে এ ধরনের সেল গড়ে তোলা হয়েছে যাদের কাজ হলো গণমৃত্যু সংঘটিত হলে তারা সেখানে যান এবং মৃত্যুগুলো নিরূপন করে সরকারকে রিপোর্ট প্রদান করেন। কিন্তু সিস্টেমেটিক ইনভেস্টিগেশনগুলো হচ্ছে না, দুর্ঘটনা স্থলে যে যেভাবে পারছে, আসছে-যাচ্ছে। সংগঠিত উপায়ে, বৈজ্ঞানীকভাবে কোনো তদন্ত হচ্ছে না। উপরন্তু আলামতগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক উপদেষ্টা পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণের অভাবে আমাদের তদন্ত রিপোর্টগুলো সঠিক হচ্ছে না। যেমন অগ্নিকান্ডে শুধু যে দগ্ধ হয়ে মারা যায় তা নয়। সেখানে ধোয়ার কারণে মারা যায়। চারদিকে প্রচন্ড ধোয়া ছড়িয়ে পড়লে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয়। আগুন ও ধোয়ার কারণে আক্সিজেন হ্রাস পেয়ে কার্বন মনোক্সাইড তৈরি হয়। এ বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড শ্বাসের মাধ্যমে ভেতরে গিয়ে শ্বাস কষ্ট হয়ে মানুষের মৃত্যু ঘটিয়ে থাকে।
এ বিষয়ে কোনো ট্রেনিং না থাকার কারণে যাচ্ছে-তাই একটা রিপোর্ট দেয়া হচ্ছে। বেশির ভাগ রিপোর্টের ‘কজ অব ডেথ’ সুনির্দিষ্ট করে তুলে ধরা সম্ভব হচ্ছে না। অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, গতকাল (২০ ফেব্রুয়ারি রাতে) চকবাজারের অগ্নিকান্ড ছাড়াও এর আগে ২০১০ সালে ঢাকার নিমতলীর ঘটনা, তাজরীন গার্মেন্টসের অগ্নিকান্ডের ঘটনা একই রকম ছিল। এসব ঘটনায় সকল মৃত্যুই আগুনে দগ্ধ হয়ে ঘটেনি। এর পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট হয়ে, ধোয়ার কারণে মরেছে তা সুনির্দিষ্টভাবে নিরূপন করার কোনো ব্যবস্থা বা টিম বাংলাদেশে নেই।
তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনা প্রায়ই ঘটে থাকে, ভবিষ্যতে যে ঘটবে না এমন নিশ্চয়তা নেই। এ কারণে সুনির্দিষ্টভাবে সকল দুর্ঘটনার কারণ জানতে দেশে গণমৃত্যু তদন্ত টিম গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন। তিনি জানান, এসব মৃত্যুর তদন্ত সুনির্দিষ্টভাবে প্রশিক্ষিত চিকিৎসকেরা করবেন। এখনতো ডুম দিয়ে এসব তদন্ত করা হচ্ছে, ডুমেরা লাশ কাটছে। এরা মানুষের দেহ সম্বন্ধে কিছুই জানে না।
অথচ এদের তথ্যের উপর ভিত্তি করেই ময়না তদন্ত রিপোর্ট তৈরি হয়ে যাচ্ছে যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। একজন অথবা পাঁচজন ডাক্তারতো একদিনে ৭০-৮০টি লাশের ময়না তদন্ত করতে পারবেন না। এ কারণে আগে থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে একটি টিম তৈরি করে রাখতে হবে যারা এমন দুর্যোগ কবলিত মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট তদন্ত রিপোর্ট দিতে পারবেন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন অধ্যাপক মোজাহেরুল হক। যেসব দুর্ঘটনা ঘটেছে আমরা সেখান থেকে কোনো শিক্ষা নেইনি। চকবাজারে যা ঘটল তা থেকে যেন আমরা শিক্ষা নেই এবং এ ধরনের ঘটনার চির অবসানে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা যেন নেয়া হয়। নয়া দিগন্ত