
মো: নজরুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ : তুর্য্য বাদকের মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রেম বিদ্রোহ সাম্য ও আলোর বাণী নিয়ে এসেছিলেন এই ধরাতে। মাথায় ঝাকড়া বাররি আর বিদ্রোহের স্ফুলিঙ্গ নিয়ে ভারতবর্ষের পশ্চিম বঙ্গে কলকাতা শহরের অদূরে বর্ধমান জেলার আসানসোল মহুকুমায় চুরুলিয়া গ্রামে দরিদ্র মুসলিম পরিবারে (২৫ মে ১৮৯৯-বাঙলা ১৩০৬ বঙ্গাব্ধে ১১ জৈষ্ঠ্য) জন্ম গ্রহন করেন। পিতা কাজী ফকির আহমদ মাতা জাহেদা খাতুনের ষষ্ঠ সন্তার তিনি। বাল্য কালে তার ডাক নাম ছিল দুখু মিয়া। কবির বাবা ছিলেন স্থানীয় এক মসজিদের ইমাম তাই মক্তবের শিক্ষাই তার হাতে খড়ি। ৯ বছর বয়সে ১৯০৮ সালে কবির পিতার মৃত্যু হয়। তারপর শুরু হয় জীবন যুদ্ধের সংগ্রাম। যতদূর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়েছেন আর স্কুল পালিয়েছেন আলো ছরিয়েছেন তার কয়েক হাজারগুন। যে কিশোর মক্তব ছেড়ে স্কুল জীবনে লেটো গানের দলে যোগ দিয়ে লোকশিল্পের প্রতি কেবল আকৃষ্টই নয় প্রতিভার ছাপ রাখেন তিনিই আমাদের প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। উল্লেখ্য তার চাচা কাজী বজলে করিম বিশিষ্ঠ লেটো শিল্পি ছিলেন এবং বাংলা র্ঊদ্দূ,আরবী,ফারসি ভাষা জানতেন। জানা যায় চাচার প্রভবেই কবি ভাষা চর্চা করেন এবং লেটো দলে কাজ করেন। নিজ কর্ম ও অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বাংলা -সংস্কৃত ভাষা চর্চা করেন এবং হিন্দু পুরান,বেদ ও গীতা শাস্ত্র অধ্যায়ন করেন। অল্প বয়সেই তার নাট্য দলের জন্য বেশ কিছু লোক সঙ্গীত রচনা করেন। যেমন- চাষার সঙ,শুকুনিবধ,রাজা যুধিষ্ঠির সঙ ইত্যাদি। একদিকে মসজিদ মাজার ও মক্তব জীবন ও অন্যদিকে লেটো দলের বৈচিত্র্যময় অভিজ্ঞতা কবির সাহিত্যিক জীবনের অনেক উপাদান সরবারহ করেছে।
১৯১০ সালে কবি লেটো দল ছেরে আবার ছাত্র জীবনে ফিরে আসেন। ভর্তি হয়েছিলেন রাণীগঞ্জ সিয়ালসোল রাজ স্কুলে। নিয়মিত স্কুল করতে পারেননি ছিল আর্থিক অনটন ফলে বেশিদিন এখানে টিকেনি তার শিক্ষাজীবন। ষষ্ট শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর আবার তিনি কাজে যোগ দেন। আসানসোলের চা-রুটির দোকানে। এভাবে বেশ কষ্টের মাঝেই তার বাল্যজীবন অতিবাহিত হতে থাকে। দোকানে কাজের সময় আসানসোলে দারগা রফিকউল্লাহর সাথে তার পরিচয় হয় তারপর তিনি কবিকে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালে দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি করে দেন। কিছুদিন পর আবার তিনি রাণীগঞ্জে ফিরে আসেন এবং সিয়ারসোল রাজ স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে ভর্তি হন। প্রিটেস্ট পরিক্ষা না দিয়েই তিনি ১৯১৭ সালে সৈনিকে ভর্তি হন। শিক্ষা জীবনে তিনি চরজন শিক্ষক দ্বারা বেশী প্রভাবিত হয়েছিলেন তারা হলেন- উচ্চঙ্গসংগীতের সতীশ চন্দ্র কাঞ্জিলাল, বিপ্লবী চেতনায় দিক্ষিত কমরেড নিবারন চন্দ্র ঘটক, ফরাসী সাহিত্যের হফিজ নুরুন্নবী, এবং সাহিত্য চর্চার নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। সৈনিক জীবনে তিনি প্রায় আড়াই বছর কাটান। সেখানে ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক থেকে হাবিলদার পর্যন্ত হয়েছিলেন। করাচি সেনানিবাসে বসে কবি যে রচনাগুলো সম্পন্ন করেছেন তার মধ্যে অন্যতম হলো-বাউন্ডুলের আতœকাহিনী (প্রথম গদ্য রচনা), মুক্তি (প্রথম কাব্য রচনা),গল্প; হেনা,ব্যাথার দান,মেহের নেগার,ঘুমের ঘোরে ইত্যাদি।
কবি যুদ্ধ শেষে কলকাতা এসে ৩২ নং কলেজ স্টীটে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে বসবাস শুরু করেন। তার সাথে থাকতেন এই সমিতির উপদ্রেষ্টা নিখিল ভারতের কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা কমরেড মুজাফফর আহমদ। মুজাফফর আহমেদের সংস্পর্শে থাকতে পেরে সে উজ্জিবিত হন এবং গোপনে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ গ্রহন করেন। পার্টির বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রাম তাকে আরো বিচলিত করেন। এখান থেকেই তিনি সাহিত্য ও সাংবাদিকতা জীবনের মূলকাজ শুরু করেন। ইতেমধ্যে মোসলেম ভারত,বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা,উপাসনা প্রভিতি পত্রিকায় তার কিছু লেখা প্রকাশিত হতে থাকে। উক্ত সাহিত্য অফিসে তার সাথে আরো ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ব্যি পায় কাজী মোতাহের হোসেন, মোজাম্মেল হক,কাজী আব্দুল ওদুদ, প্রমুখ। এছারাও কলকাতায় নিয়মিত সাহিত্যিক আড্ডায় তার সাথে আরো পরিচয় হয় অতুল প্রসাদ সেন, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর,সতেন্দ্রনাথ দত্ত, শরতচন্দ্র চæপাধ্যায়, কমরেড নির্মলেন্দু লাহিড়ী,কমরেড হেমন্দ্র কুমার চারুচন্দ্র চæপাধ্যায়,প্রমুখের সাথে। ১৯২১ সালে তিনি নিজে শান্তিনিকেতনে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে দেখা করেন এবং সমকালিন রাজনঅীতি ও বাংলা সাহিত্যেও বিভিন্ন দিক নিয়ে সংলাপ করেন।
১৯২১ সালে কবি বঙগীয় সাহিত্য সমিতির প্রকাশক আলী আকবর সাহেবের সাথে কুমিল্লার বিজয় সুন্দুরীর বাড়ীতে বেরাতে আসেন। এখানেই প্রথম পরিচয় হয় প্রমিলা দেবীর সাথে এবং একে অপরকে আকৃস্ট করে প্রথমে পরিনয় এবং পরবর্তীতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তবে এর আগে কবির জীবনে আরেকটি ঘটনা আছে যেটি পাঠকের জানা থাকা ভাল আলী আকবর খান এমনিতেই কবিকে সময় দেননি সে তার ভাগনি নার্গিস খানমের সাথে বিয়ের মনস্থীর করেন। নার্গিসকে দেখে কবি লিখলেন ভেঙ্গেছে পিঞ্জর বাহির হইছে পথ ফুঠচে গোলাপ নার্গিস ফুল। আলী আকবর খান কবির সাথে তার ভাগনির বিয়ে সম্মন্ন করেন। নাগিংস কবিকে কাবিনের পর বাসর ঘরে বসেই শর্ত জুড়ে দেন যে কবিকে ঘরজামাই থাকতে হবে। কবির সাহিত্য চর্চা ও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করায় বাসর ঘরেই তার সাথে বিরোধ বাঁধে। কবি ঘরজামাই থাকতে অস্বীকার করেন এবং সে আবার চলে আসেন বিজয়সুন্দরীর বাড়ীতে প্রমিলাকে দেখতে কিন্তু প্রমীলা সেখানে নেই খোজ নিয়ে জানতে পারে সে এসেছে মানিকগঞ্জের তেওতা জমিদার বাড়ীর সন্নিকটে তাদের বাড়ীতে। বিজয় সুন্দরী হলো প্রমীলার মাসিমা আর প্রমিলার মায়ের নাম হলো গীরিজাবালা দেবী। কবি জল ও স্থল উভয় পথেই প্রমীলা দেবীর পিতা বসন্ত সেনের ভাতৃষপুত্র বিরেন সেনের সঙ্গে কবির পরিচয়ের সুত্র ধরেই মাঝে মাঝেই আসতে থাকে তেওতা জমিদার বাড়ীর আঙিনা প্রমীলার বাড়ীতে এবং সেখানে গড়ে ওঠে প্রমীলাকে নিয়ে প্রেমের আড্ডা। বেশিরভাগ নজরুল গবেষকরাই মনে করেন ”তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি সেকি মোর অপরাধ” এই গানটি তেওতা জমিদার বাড়ীর পুকুর পারে যখন প্রমীলা গোসল করতেন তখন তাকে দেখেই গানটি রচনা করেছেন। প্রমীলা নজরুলকে কবিদা বলে ডাকতেন। পরবর্তীতে কবি প্রমীলাকে বিয়ে করেন এবং কবি একসময় খুব অসুস্থ্য হয়ে পরলে প্রমীলা ও তার শাশ্বুরী গিরীজাবালা দেবী তাকে সেবা করতে একটুও কার্পণ্য করেননি। কবি প্রমীলাকে নিয়েই সংসার করেন। কবি প্রমীলাকে নিয়ে বেশিরভাগ সময় কুমিল্লাতে কাটালেও দেশ বিদেশে ঘুরে বেরান ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন যখন তীপ্র রুপ ধারন করে তখন তিনি ঘর ছেরে পথে ঘাটে জীবন কাটান এবং তার কবিতায় ফুটে ওঠে বিদ্রোহের দাবানল।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন সত্যিকারের সাম্যবাদের অগ্রদূত। তিনি জন্মগতভাবে মুসলমানের ঘরে জন্ম গ্রহন করলেও নিজেকে কখনোই মুসলমান মুসলমান বলে চিৎকার করেননি তিনি জগতবাসীকে জাতি ধর্ম বর্ণ ভেদ ভুলে নিজেকে একজন মানুষে হিসেবে পরিচিত করার চেষ্টা করেছেন। তিনি হিন্দু মুসলমানকে হ্যান্ডসেক করানোর জন্য একটি হিন্দু পরিবারে বিয়ে করেন এবং তার চার সন্তানের নাম রাখেন বাংলা ,আরবী ও ফারসী উভয় ভাষাতেই। যেমন কৃষ্ণ মুহাম্মদ,অরিন্দম খালেদ(বুলবুল),কাজী সব্যসাচী এবং কাজী অনিরুদ্ধ।
তার জীবনের স্মৃতি বিজরিত অধ্যায়ের সবচেয়ে বেশি দাগ কেটেছে উপমহাদেশের প্রখ্যাত মার্কিস্ট ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা কমরেড মুজাফফর আহমেদের সাথে। পৃথিবী যখন দুইভাগে বিভক্ত শোষক আর শোষিত কবি তখন শোষিতের পক্ষে সাম্যের কবিতা রচনা করতে থাকেন আর কমিউনিস্টরা সাম্যেবাদী সমাজ বাস্তবে রুপায়ন করার জন্য লড়াই করে আসছেন কবি এই লড়াইয়ে সামিল হয়ে পশ্চতপদ শ্রেণীকে উজ্জিবিত করার জন্য কবিতা ও গান রচনা করতে থাকেন। ১৯১৭ সালে রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব তাকে নানানভাবে প্রভাবিত করে ও ভাবিয়ে তুলে। তিনি লাঙ্গল ও গণবাণী পত্রিকায় প্রকাশ করতে থাকেন সাম্যবাদী ও সর্বহারা কবিতা গুচ্ছ। এরই মধ্যে তিনি কমিউনিস্ট ইন্টরন্যাশনাল এর বাংলা অনুবাদ ”জাগো অনশন বন্দি ওঠো রে যত” করে কমিউনিস্টদের হৃদয়ে স্থান করলেন এবং সারা বাংলায় তাকে নিয়ে আরো আলোড়ন সৃষ্টি হলো। তার পত্রিকায় আরো প্রকাশিত হয় রেড ফ্লাগ এর অবলম্ভনে রচিত রক্তপতাকার গান।
উল্লেখ্য ১৯২১ সালে কমরেড মুজাফফর আহমদ ও নজরুল যে তালতলা লেনের বাসায় থাকতেন সেখান থেকেই প্রথম ভারতীয় সমাজতান্ত্রিক দল গঠিত হয়। তিনি এই দলের গোপন সদস্য ছিলেন প্রকাশ্যে কখনই নিজেকে পরিচিত করেননি। ১৯২০ এর দশকে জাতীয় পরিষদের নির্বাচনের আগ্রহ প্রকাশ করলেও দল তাকে অনুমতি দেয়নি। পরবর্তীতে কংগ্রেসের সমর্থন পাওয়ার জন্য কলকাতায় যান কিন্তু কংগ্রেসের কাছ থেকেও তেমন সারা না পেয়ে নিজেই নির্বাচনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। নির্বাচনে অংশগ্রহন করলেও তেমন সাফল্য পেলেন না। পরবর্তীতে সাহিত্যের মাধ্যমে রাজনীতির বহি:প্রকাশ ঘটলেও রাজনীতিতে তার সক্রিয়তা কমে যায়।
প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে সাফল্য না পেলেও তিনি হতাশ হননি তিনি অনররত ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লিখতে থাকতেন। ”এ দেশ ছারবি যদি বল নইলে কিলের চোটে হার করিব জল এ দেশ ছারবি যদি বল” এই কবিতাটি লিখে তিনি ব্রিটিশদের রোষানলে পরেন এবং ঐ বছরেই তিনি জেলে যান। জেলখানায় বসেই কবি বিদ্রোহী কবিতা লিখতে থাকেন। ১৯২২ সালে প্রকাশিত হয় ভারতের সারা জাগানো কবিতা বিদ্রোহী” ১৪৭ লাইনের দীর্ঘ এই কবিতায় কবি নিজেকে বিদ্রোহী হিসেবে প্রকাশ করেন। ১৯২২ সালে ১২ আগষ্ট কবির সম্পাদিত ধুমকেতু পত্রিকায় এটি প্রকাশিত হয়।ধুমকেতু সপ্তাহে দুই দিন প্রকাশিত হত। ধুমকেতু ছিল ঐ সময়ের তরুণ প্রজন্মের আনন্দের বার্তা রাজনৈতিক ও সাহিত্য কর্মীদের জন্য ছিল জ্ঞ্যনের প্রকৃত আধার। অসহযোগ আন্দোলন ও বিপ্লবী আন্দোলনে ধুমকেুুর বিশেষ অবদান ছিল। ১৯২২ সালে ২৬ সেপ্টেম্বর সংখ্যায় নজরুলের কবিতা আনন্দময়ী আগমনে প্রকাশিত হয়। এই রাজনৈতিক কবিতা প্রকাশিত হওয়ায় ৮ নভেম্বর এর সংখ্যাটি বাজেয়াপ্ত ঘোষনা ও ধুমকেতু পত্রিকাকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়। একই বছর ২৩ নভেম্বর তার যুগবাণী প্রবন্ধ গন্থ্য বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং একই দিনে তাকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর কুমিল্লা থেকে কলকাতা নিয়ে আসা হয়। ১৯২৩ সালের ৭ জানুয়ারী কবি নজরুল ইসলাম বিচারের জন্য বিচারাধীন বন্দী হিসেবে আতœপক্ষ সমর্থন করে একটি জবানবন্দি প্রদান করেন। চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যজিট্্েরট সুইনহোর আদালতে এই জবানবন্দি দিয়েছিলেন তার এই জবানবন্দি বাংলা সাহিত্যে রাজবন্দির জবানবন্দী নামে বিশেষ সাহিত্যিক মর্যাদা লাভ করেছে। এই জবানবন্দীতে কবি নজরুল বলেছেন-
আমার উপর অভিযোগ আমি রাজবিদ্রোহী। তাই আমি আজ রাজকারাগারে বন্দী এবং রাজদ্বারে অভিযুক্ত—আমি কবি, আমি অপ্রকাশ সত্যকে প্রকাশ করার জন্য,অমূর্ত্য সুষ্টিকে মূর্ত্যদিানের জন্য ভগবান কর্তৃক প্রেরিত। কবির কন্ঠে ভগবান সাড়া দেন,আমার বাণী সত্যের প্রকাশিত ভগবাণের বাণী। সে বাণী রাজবিচারে রাজদ্রোহী হতে পারে কিন্তু ন্যয় বিচারে সে বাণী ন্যায়দ্রোহী নয়, সত্যদ্রোহী নয়। সত্যের প্রকাশ নিরুদ্ধ হবে না। আমার হাতের ধুমকেতু এবার ভগবানের হাতের অগ্নি-মশাল হয়ে অন্যায় অত্যাচার দগ্ধ করবে। ১৬ জানুয়ারী বিচারের পর নজরুলকে ১ বছরের সশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়। কবি নজরুলকে আলীপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে নিযে যাওয়া হয়। এখানে যখন বন্দিজীবন কাটাচ্ছিলেন তখন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার বসন্ত গীতিনাট্য গন্থ্যটি নজরুলকে উৎসর্গ করেন। এতে নজরুল বিশেষ উল্লাসিত হন। এই আনন্দে জেলে বসে তিনি ”সৃষ্টি সুখের উল্লাসে” কবিতাটি রচনা করেন।
১৯৭১ সালে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানিদের নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তাানিদের বিজয় হয় এবং বাংলাদেশ নামে একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রর রাষ্টপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেক মুজিবুর রহমান তিনি বিশেষ করে দেশ পরিচালনার জন্য দেশের কবি সাহ্যিতিক, অর্থণীতিবিদসহ সকল বুদ্বিজীবিদেরকে খুবই কদর করতেন এবং তাদেরকে ডাকতেন ও পরামর্শ গ্রহন করতেন। তিনি তার প্রথম মন্ত্রিপরিষদ সভায় নজরুলের কথা আলোচনা করেন এবং বিদ্রোহী কবির শারিরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন হন এবং সাংস্কৃতিক মন্ত্রানালয়কে দায়িত্ব দেয়া হয় প্রয়োজনে কলকাতা গিয়ে তার খোজ খবর রাখার জন্য।
তারপর ১৯৭২ সালের ২৪ মে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে অসুস্থ্য কবি নজরুল ও তার স্বপরিবারকে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে নিয়ে আসা হয়। কবির বাকী জীবন বাংলাদেশেই কাটে। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের জন্য স্বীকৃতি স্বরুপ ১৯৭৪ সালে ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসুচক ডি.লিট উপাধিতে ভুষিত করেন। ১৯৭৬ সালের জানুয়ারী মাসে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন। একই বছরের ২১ ফেব্রæয়ারীতে তাকে ২১ শে পদকে ভুষিত করা হয়।
এরপর যতেষ্ট চিকিৎসার পরও কবিকে পুরোপুরি সুস্থ্য করা সম্ভব হয়নি। ১৯৭৪ সালে কবির সবচেয়ে ছোট ছেলে বিখ্যাত গিটারবাদক কাজী অনিরুদ্ধ্য মৃত্যুবরন করেন। ১৯৭৬ সালে কবির স্বাস্থ্যের আরো অবনতি ঘটতে থাকে এবং জীবনের শেষ দিনগুলি কাটে ঢাকার পিজি হাসপাতাল (বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতাল) ১৯৭৬ সালের ২৯ আগষ্ট তারিখে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
তিনি আমাদের চেতনার বুদ্ববুদ,সাম্যবাদের অগ্রদুত। আমরা তার নীতি আদর্শকে অনুসরন কওে মানিকগঞ্জ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদের ব্যানাওে কবিকে নতুন কওে এই প্রজন্মের মাঝে ছরিয়ে দিতে চাই দুর্বার গতিতে। আসুন জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে আমাদের এই কাফেলায় সামিল হয়ে সমাজ প্রগতির লড়াইকে আরো বেগবান করি। [
সাধারণ সম্পাদক,বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ,মানিকগঞ্জ জেলা শাখা,