
মোঃ মাসুদ,কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধি : ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার আওতাধীন মোট ৫ টি ইউনিয়ন সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে ৪ টায় কেরাণীগঞ্জের সেমন্তী কনভেনশন হলে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন ঢাকা ৩ আসনের সংসদ সদস্য,বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।
ঢাকা জেলা পুলিশের উদ্যোগে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার সকল ইউনিয়নে মোট ২০০ টি সিসি ক্যামেরা স্থাপনে পৃষ্ঠপোষকতা করছে দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ।
অনুষ্ঠানে বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের পক্ষে তাঁর সেক্রেটারী, বসুন্ধরা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক মাকসুদুর রহমান ১০ কোটি টাকার চেক হস্তান্তর করেন,এসময় চেক টি গ্রহণ করেন ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান,পিপিএম (বার)।
এই সিসি ক্যামেরা স্থাপনের মধ্য দিয়ে ঢাকার উপকণ্ঠ কেরাণীগঞ্জের বিশাল একটি জনপদ নিরাপত্তার চাদরে চলে আসছে। বিশেষ করে রাজধানীর পাশ্ববর্তী উপজেলা হওয়ায় বিভিন্ন সময় এখানে নানা অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে। সিসিটিভি নজরদারির আওতায় এলে অপরাধ প্রবণতা অনেকাংশেই লাঘব হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেরাণীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান,উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহবায়ক, দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহীন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম মামুন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কেরাণীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবির। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহজামান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সেক্রেটারী ও বসুন্ধরা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক মাকসুদুর রহমান, চিফ প্রটোকল অফিসার মেজর (অব.) মোহসীনুল হাকিম, একান্ত সচিব (এমডি) আমিনুল ইসলাম, ফেরদৌস বিন সিদ্দিক, বসুন্ধরা অয়েল অ্যান্ড গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের ডিজিএম মোঃ শ্যামল, কালের কণ্ঠ’র উপ-সম্পাদক হায়দার আলী, নিউজটোয়েন্টিফোর টেলিভিশনের ডেপুটি সিএনই আশিকুর রহমান শ্রাবণ, বসুন্ধরা গ্রুপের এমডির সেক্রেটারিয়েট টিমের সদস্য রণিত সেন, মারুফ কাজী, সোহেল।
অনুষ্ঠানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা শাহজাহান,জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী সাকুর হোসেন সাকু,আগানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর শাহ খুশী,কোন্ডা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান চৌধুরী ফারুক,তেঘরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মোঃ লাট মিয়া সহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ীরা এসময় উপস্থিত ছিলেন ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বক্তব্যের শুরুতে তিনি এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পৃষ্ঠপোষকতাকারী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জানান। তিনি আরো বলেন, কেরাণীগঞ্জকে নিরাপত্তার চাঁদরে ঢেকে দিতে বসুন্ধরা গ্রুপ এগিয়ে এসেছে। শুধু তাই নয়, কেরাণীগঞ্জের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বসুন্ধরা গ্রুপকে আমরা পাশে পেয়েছি।
এসময় প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের যে অঙ্গীকার সেটি বাস্তবায়নে পুলিশ বাহিনী অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। কেরাণীগঞ্জের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঢাকা জেলা পুলিশের এই উদ্যোগ তারই অংশ। পুলিশ বাহিনী নিজের জীবন বিপন্ন করে মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত শান্তি সমাবেশের নামে ঢাকাসহ সারা দেশে যে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে, সেখানেও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা বজায় রাখতে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা আত্মাহুতি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, একসময় কেরাণীগঞ্জ সন্ত্রাসের রাজত্ব ছিল। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যে কেরাণীগঞ্জে কেউ ব্যবসা বাণিজ্য করতে পারত না। সব শ্রেণি পেশার মানুষ সারাক্ষণ আতংকে থাকত,সেই অবস্থা এখন আর নেই। আমরা কেরাণীগঞ্জকে শান্তির জনপদে পরিণত করেছি। এতে পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকার কথা না বললেই নয়, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের নাগরিক অধিকার ও নিরাপত্তা জোরদারে আরও একধাপ এগিয়ে গেল। এই ধরনের সিসিটিভি দেশের আধুনিক এলাকা ছাড়া আর কোথাও নেই। কেরাণীগঞ্জে যে সিসিটিভি ক্যামেরা বসতে যাচ্ছে, সেগুলো খুবই অত্যাধুনিক। প্রতিটি অলি-গলিতে আমরা ক্যামেরা স্থাপন করব। এর মধ্য দিয়ে কেরাণীগঞ্জের মানুষকে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা দিয়ে যাবে, ২০২৪ সালের মধ্যে আমরা কেরাণীগঞ্জকে শতভাগ অপরাধমুক্ত ঘোষণা করব ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, ১৯০৫ সালে ঢাকার নবাববাড়িতে প্রথম বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপিত হয়। ২০০৮ সাল পর্যন্ত ৯৭ বছরে পাকিস্তান শাসনামলসহ সব সরকারের নেতৃত্বে মাত্র ৪৭ শতাংশ বিদ্যুতায়ন হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৩ বছরে আমরা সারা দেশে শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পেরেছি। এখন সমগ্র বাংলাদেশ বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত।
উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক সৈয়দ নুরুল ইসলাম বিপিএম (বার), পিপিএম তাঁর বক্তব্যে বলেন, সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের যে সুফল কেরাণীগঞ্জের মানুষ পাবে, তার সঙ্গে অন্য কিছুর তুলনা হয় না। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, গাজীপুর থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত সড়কে ব্যাপক ডাকাতির ঘটনা ঘটতো। আমি দায়বদ্ধতা থেকে প্রায় ৬৫ কিলোমিটারজুড়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করে দিয়েছিলাম। এরপর থেকে ডাকাতি, অতিরিক্ত গতিতে গাড়িচালনা থেকে শুরু করে অপরাধ কর্মকাণ্ড অনেকাংশেই লাঘব হয়ে গেছে। কোনও এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলে যে কোন অপরাধী অপরাধ সংঘটনের আগে চিন্তাভাবনা করবে। কেরাণীগঞ্জে যে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে, সেটি হবে দেশের সবচেয়ে উন্নত প্রযুক্তির। এ কাজে এগিয়ে এসে বসুন্ধরা গ্রুপ সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা জোরদারে বড় অবদান রাখল।