sliderস্থানীয়

বদরগঞ্জ পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে আটটি দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে দুদকে ১১ কাউন্সিলরের অভিযোগ

রাহুল সরকার : রংপুরের বদরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র উত্তম কুমার সাহার বিরুদ্ধে আটটি দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে ১১ জন কাউন্সিলর দুদকে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগকারী পৌর কাউন্সিলররা হলেন- এক নং ওয়ার্ডের একরামুল হক, দুই নং ওয়ার্ডের ইউনুছ খান, তিন নং ওয়ার্ডের খায়রুল আনাম কহিনুর, চার নং ওয়ার্ডের নীলকান্ত পাইকাড়, পাঁচ নং ওয়ার্ডের খোকন কুমার দাস, ছয় নং ওয়ার্ডের মিজানুর রহমান, সাত নং ওয়ার্ডের তহিদুল ইসলাম বাবু, আট নং ওয়ার্ডের মোকছেদুর রহমান, নয় নং ওয়ার্ডের মোকছেদুল হক, নারী কাউন্সিলর আজিমা বেগম(১, ২, ৩ নং ওয়ার্ড) ও মিতু রাণী দাস(৪, ৫, ৬নং ওয়ার্ড)। তবে অভিযোগপত্রে শুধুমাত্র আরেক নারী কাউন্সিলর ফেরদৌসি আয়শা সিদ্দিকার সাক্ষর নেই। জানা গেছে- একমাত্র তিনিই এখন পর্যন্ত মেয়রের পক্ষেই অবস্থান করছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে- ২০১৭ সালের ২২ মার্চ বদরগঞ্জ পৌরসভায় তিনটি শূন্যপদে লোক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। যার মধ্যে ছিল- একজন হিসাব রক্ষক, একজন নকশাকারক ও একজন জীপ চালক। নিয়োগের শর্তাবলী ছিল- ২৩ মার্চ প্রার্থীর বয়স সীমা ১৮-৩০ বছর হতে হবে। সে অনুযায়ী নিয়োগ হওয়ার কথা থাকলেও জীপ চালক জিয়াদ আলীর ক্ষেত্রে তা’ মানা হয়নি। তার বয়স না থাকার কারণে তিনি মাধ্যমিক পাশ হয়েও অষ্টম শ্রেণি পাশ সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি পান। অথচ জাতীয় পরিচয়পত্রে তার জন্ম তারিখ দেখানো হয়েছে ১৯৮২ সালের ৩১ ডিসেম্বর। সে অনুযায়ী ২০১৭ সালের ২৩ মার্চ তার বয়স হয়েছিল ৩৪ বছর ৩ মাস ২২দিন।
২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর আরো একটি বিজ্ঞপ্তিতে ছয়জন লোক নিয়োগের ঘোষণা দেয়া হয়। সে অনুযায়ী ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে দারোয়ান পদে রকেট মিয়াকে নিয়োগ প্রদান করেন পৌর মেয়র। তার জন্ম তারিখ ১৯৮৭ সালের ২৮ আগস্ট। সে অনুযায়ী ওই সময় তার বয়স হয়েছিল ৩০ বছর পাঁচ মাস ২৫ দিন। তিনি ২০১৮ সালের ২৮ জুলাই বয়স সংশোধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছেন।
২০১৩-২০১৪ইং অর্থ বছরে বিদ্যুৎ মিস্ত্রী পদে নিয়োগ পান দুলাল সরকার দুলু। বর্তমান জাতীয় পরিচয়পত্রের জাবেদা কপি অনুযায়ী তার বয়স ৩৭ বছর। অথচ ২০১৬ সালের জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী তার বয়স ৫২ বছর এবং স্ত্রীর বয়স ৪৬ বছর। এছাড়া তার মেয়ের বয়স ২১ বছর। ২০১৬ সালের ১৪ জানুয়ারী এক আবেদনের প্রেক্ষিতে তিনি বয়স সংশোধন করে কমিয়ে আনলেও স্ত্রীর বয়স কমাতে ভুলে গেছেন। একই পথে হেঁটেছেন অফিস পিয়ন সুদাম চন্দ্র রায়। তিনিও বয়স সংশোধনের জন্য ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছেন।
এদিকে করোনা দুর্যোগকালে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় মানবিক সহায়তা হিসেবে অসহায় মানুষের মাঝে বিতরনের জন্য মোট সাত দফায় তিন লাখ ৬৫ হাজার টাকা পৌরসভায় বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু সেই টাকা কাউকে না জানিয়ে তা’ পুরোপুরি আত্মসাৎ করেছেন পৌর মেয়র। এর আগে পৌরসভার নিজ¯^ তহবিল থেকে ৭৫ হাজার টাকার বিনিময়ে পাঁচশ’ গরীব মানুষকে এক কেজি করে ডাল, একটি করে ছোট সাবান, দু’কেজি করে আলু, এক কেজি করে লবণ দেয়া হয়। অথচ পৌর
তহবিল থেকে পৌর মেয়র উত্তোলন করেছেন চার লাখ টাকা। বাকী তিন লাখ ৭৫ হাজার টাকা সম্পর্কে কাউন্সিলররা কিছুই জানেননা বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে। এছাড়া ২০১৮-২০১৯ইং অর্থবছরে ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আট লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও মাত্র একদিন পৌর এলাকার কিছু জায়গায় ধোঁয়া দিয়ে পুরো অর্থই উত্তম কুমার সাহা আত্মসাৎ করেছেন। এর পাশাপাশি তিনি চলতি অর্থবছরের জুন মাসে একদিনই দুপুরে লিখিত পরীক্ষা, বিকেলে মৌখিক পরীক্ষা ও সন্ধ্যায় মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে পৌরসভায় ছয়জন কর্মচারি নিয়োগ দিয়েছেন । এসবের প্রতিবাদ করায় পৌর কাউন্সিলর একরামুল হক ও খোকন কুমার দাসকে প্রকাশ্যে হুমকি দেন মেয়র উত্তম কুমার সাহা। একারণে এসব অভিযোগের
তদন্তসহ পৌর মেয়র উত্তম কুমার সাহার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে দুদক রংপুরের উপপরিচালকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন ১১ জন পৌর কাউন্সিলর।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে পৌর মেয়র উত্তম কুমার সাহার সাথে সেলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোনকল রিসিভ না করায় তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Back to top button