sliderঅর্থনৈতিক সংবাদশিরোনাম

বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর ব্যয় বাড়লো ৭০৪৬ কোটি টাকা

চলমান ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতু নির্মাণ’ প্রকল্পে ব্যয় বেড়েছে। আগে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। ব্যয় ৭ হাজার ৪৬ কোটি টাকা বাড়িয়ে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার।
মঙ্গলবার (৩ মার্চ) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলনকক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় এ প্রকল্পের বাড়তি ব্যয়সহ আট প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।
সভা শেষে এ প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
ব্যয় বাড়ানো প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, জাইকা নতুন করে প্রকল্প পর্যালোচনা করে দেখেছে ব্যয় বাড়বে। এ কারণেই প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হচ্ছে।
রেলসেতু নির্মাণে ব্যয় বাড়ছে ৭ হাজার ৪৬ কোটি টাকা। বাড়তি ব্যয়ের ৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা ঋণ দিতে সম্মত হয়েছে জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা (জাইকা)।
২০১৬ সালে প্রকল্পটি যখন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন হয়, তখন এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। তখন জাইকার ঋণ ছিল ৭ হাজার ৭২৪ কোটি ৩২ লাখ টাকা। নানা কারণে প্রকল্পের মোট ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা।
নির্মাণ কাজের মূল্য বৃদ্ধি, নতুন কাজ হিসেবে ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি ও অন্যান্য ফ্যাসিলিটি ভাড়ার সংস্থান, একটি জাদুঘর ও পরিদর্শন বাংলো নির্মাণ, ব্যাংক চার্জ বাড়ছে প্রকল্পে। এছাড়া সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনেকেশন ওয়ার্কস এবং প্যাকেজ-৩ এর কাজের ব্যয় বাড়ার বিষয়ে জাইকাকে জানানো হয়েছে। তাই বাড়তি ঋণ দেবে জাইকা।
সংশোধিত প্রকল্পে ডিজাইন ও সুপারভিশন পরামর্শক খাতে সরকারি তহবিল থেকে ২১২ কোটি টাকাসহ মোট ৮১৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা বাড়ছে। আবার সরকারি অর্থে ম্যানেজমেন্ট সাপোর্ট পরামর্শক বাবদ ৫২ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাবে জমি অধিগ্রহণ, জমি ব্যবহার ও আনুষঙ্গিক ব্যয় বাবদ মোট ৩৪৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি অনুমোদিত মূল প্রকল্প প্রস্তাবে ছিল না।
প্রকল্পের কাজের বেশিরভাগ আইটেমের বিশদ নকশা প্রণীত হয়েছে। এ অবস্থায় প্রাইস ও ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি বাবদ ১২২ কোটি টাকা অতিরিক্ত প্রয়োজন হচ্ছে। সার্বিকভাবে পরামর্শক খাতে ২৮ কোটি ৪১ লাখ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, এর কারণ ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। এছাড়া চাকরিজীবীদের সম্মানী বাবদ ১ কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাতে ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা প্রয়োজন।
প্রকল্পটি ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে বাস্তবায়নের সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে এর অগ্রগতি মাত্র ৯ শতাংশ। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু দেশের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে দুই অংশকে একত্রিত করেছে। সড়কের পাশাপাশি সেতুটিতে রেল সংযোগও রয়েছে। তবে কচ্ছপগতিতে এগিয়ে চলে ট্রেন। কারণ, ট্রেনের আউটার সিগন্যালিং খাঁচা ভেঙে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। এর আগে কয়েকবার সেতুতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছেন যাত্রীরা।
এসব কারণে এবার বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুতে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটারের স্টিল রেলসেতু নির্মাণ করবে রেলপথ মন্ত্রণালয়। বিদ্যমান বঙ্গবন্ধু রেলসেতুর সমান্তরাল ৩০০ মিটার উজানে নির্মিত হবে সেটি। পদ্মানদীতে ১ দশমিক ৮ কিমি দৈর্ঘ্যের লালন শাহ সড়ক সেতু ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজ রেলসেতু যেভাবে পাশাপাশি অবস্থান করছে, একইভাবে যমুনায়ও বঙ্গবন্ধু সেতু ও রেলসেতু স্থাপন করা হবে।
যমুনায় রেলসেতু নির্মাণ প্রকল্পের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধার সমন্বয়ে নির্মিত হবে রেলসেতুটি। বঙ্গবন্ধু সেতু ইস্ট (বিবিই) স্টেশন ও বঙ্গবন্ধু সেতু ওয়েস্ট (বিবিডব্লিউ) স্টেশনে স্বয়ংক্রিয় কম্পিউটার বেজড ইন্টারলিংকিং (সিবিআই) সিগন্যালিং সিস্টেম থাকবে। সেতু বরাবর গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপলাইনও থাকবে। সেতুটি সম্পূর্ণভাবে নির্মিত হলে উত্তরবঙ্গ, পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের কাছে আশীর্বাদে পরিণত হবে বলেও মনে করছে সরকার।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Back to top button