sliderউপমহাদেশশিরোনাম

ফিল্মি কায়দায় গ্রেফতার ‘ডন’

গত বৃহস্পতিবার রাতে তাকে ধরতে গিয়ে আটজন পুলিশ নিহত হয়েছিলেন। এক সপ্তাহ বাদে সেই কুখ্যাত ডন বিকাশ দুবেকে গ্রেফতার করতে পারলো পুলিশ।
ফিল্মের নাম ‘ডন’। ডন চরিত্রে শাহরুখ খানের অন্যতম সেরা সংলাপ ছিল, ‘ডন কে ধরা কেবল কঠিন নয়, অসম্ভব।’ উত্তরপ্রদেশের ডন বিকাশ দুবেও প্রায় সে কথাই বলতে শুরু করেছিলেন। তাকে ধরা অসম্ভব। তবে শেষ রক্ষা হলো না। বৃহস্পতিবার সকালে মধ্যপ্রদেশের বিখ্যাত মহাকাল মন্দির থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তিনি সারেন্ডার করেছেন কি না, সে বিষয়ে অবশ্য এখনো কিছু বলতে চায়নি উত্তরপ্রদেশ পুলিশ।
উত্তরপ্রদেশের কানপুরের বাসিন্দা বিকাশ। চৌবেপুর এলাকায় তার গ্রামের বাড়ি। এখনও পর্যন্ত ৬০টি খুন, খুনের চেষ্টা, অপহরণ, লুঠের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু পুলিশ কখনওই তাঁকে ধরতে পারতো না। এতই তাঁর দাপট। গত বৃহস্পতিবার মাঝরাতে চৌবেপুরে অতর্কিতে হানা দিয়েছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। কিন্তু সে খবরও পৌঁছে যায় বিকাশের কাছে।
গ্রামের ভিতর পুলিশকে ঘিরে ধরে গুলি চালায় বিকাশের দলের কর্মীরা। ঘটনাস্থলেই আটজন পুলিশের মৃত্যু হয়। তার মধ্যে পুলিশ অফিসারও ছিলেন। চারজন গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হন। ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান বিকাশ। এরপর তিন দিন তাঁর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
মঙ্গলবার পুলিশ বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারে দিল্লি-হরিয়ানা সীমানার একটি হোটেলে আছেন বিকাশ। কিন্তু সেখানে পৌঁছেও বিকাশকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ পৌঁছনোর আগেই বিকাশ পালিয়ে যান।
এ দিকে বিকাশের খোঁজে মরিয়া হয়ে ঘুরছিল পুলিশ। হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশের সীমানায় লাগাতার রেড চলছিল। বৃহস্পতিবার সকালে তেমনই দুটি সফল রেড চালায় পুলিশ। একটি উত্তরপ্রদেশের ইটাওয়া জেলায়। অন্যটি কানপুরে। কানপুরে একটি ঠেকে হানা দিয়ে পুলিশ গ্রেফতার করে বিকাশের অন্যতম শাগরেদ প্রভাত মিশ্রকে।
অভিযোগ, তাকে গাড়িতে করে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ ভ্যানের টায়ার ফেটে যায়। চাকা সারাই করতে পুলিশ ভ্যান দাঁড় করালে পালানোর চেষ্টা করে প্রভাত। এক পুলিশ কনস্টেবলের কাছ থেকে সে একটি পিস্তল ছিনিয়ে নেয় বলেও অভিযোগ। পুলিশ বয়ান অনুযায়ী, প্রথমে প্রভাত গুলি চালায়। তাতে এক কনস্টেবল আহত হয়। পাল্টা গুলি চালায় পুলিশ। গুলি লাগে প্রভাতের পায়ে। সেখান থেকে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
অন্য দিকে প্রায় একই সময়ে ইটাওয়া থেকে ৫০ হাজার টাকার থলিসহ গ্রেফতার হয় বিকাশের আরেক শাগরেদ রণবীর। অভিযোগ, রণবীর এ দিন সকালে একটি কালো স্করপিও গাড়ি নিয়ে ইটাওয়া থেকে রওনা হয়েছিল। রাস্তায় পুলিশের সঙ্গে তার গুলির লড়াই হয়। আহত রণবীরকে গ্রেফতার করে কিন্তু পরে তারও মৃত্যু হয়।
পুলিশের সূত্র জানাচ্ছে, এই দুই শাগরেদের থেকেই বিকাশের বর্তমান অবস্থান জানতে পারে পুলিশ। জানা যায়, মধ্যপ্রদেশের মহাকাল মন্দিরে টিকিট কেটে ঢুকেছেন বিকাশ। মধ্যপ্রদেশ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেখানে পৌঁছয় উত্তরপ্রদেশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স। মন্দির থেকেই গ্রেফতার হন বিকাশ। যদিও উত্তরপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব সহ অনেকেই দাবি করছেন, বিকাশই পুলিশের কাছে সারেন্ডার করেছে। বিকাশ মন্দিরে ঢুকে নিজেই পুলিশকে সেই কথা জানায়। মধ্যপ্রদেশ পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, মন্দিরের একজন রক্ষী তাকে চিনতে পেরে পুলিশকে সতর্ক করে।
এ দিকে, বিকাশকে খবর পাচারের অভিযোগে চৌবেপুরের প্রাক্তন পুলিশ অফিসার বিনয় তিওয়ারি এবং সাব ইনস্পেক্টর কৃষ্ণকুমারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ রেডের কথাও এরাই জানিয়েছিলেন বিকাশকে।
বিকাশ দুবেকে গ্রেফতার করা নিঃসন্দেহে একটি বড় ঘটনা। পুরো অপারেশনও চলেছে সিনেমার মতোই। তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, বিকাশকে কতদিন জেলে ধরে রাখতে পারবে প্রশাসন? অনেকেরই বক্তব্য, বিকাশের রাজনৈতিক যোগাযোগ বিপুল। ফলে তাকে জেল থেকে বার করার জন্য যথেষ্ট চাপ থাকবে প্রশাসনের উপর।
সূত্র : ডয়চে ভেলে

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button