sliderস্থানীয়

ফসলের ক্ষেতে কৃষকের বন্ধু কাকতাড়ুয়া

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি: কাকতাড়ুয়া একটি প্রাচীন ও কার্যকর পদ্ধতি যা কৃষকের ফসল রক্ষা করতে সাহায্য করে। বাংলার মাঠ-ঘাট, শস্যক্ষেত আর ফসলের সুরক্ষায় কাকতাড়ুয়ার ঐতিহ্য এখনও অটুট। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতির ব্যাপক প্রচলন সত্ত্বেও পাখির আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষায় কাকতাড়ুয়া আজও অনেক কৃষকদের নির্ভরযোগ্য সঙ্গী।

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, ক্ষেতের মাঝে বাঁশ, খড়, পুরাতন জামা এবং মাটির হাঁড়ি দিয়ে তৈরি কাকতাড়ুয়া দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন একজন মানুষ দু-হাত প্রসারিত করে ফসল পাহারা দিচ্ছে। তবে, এমন কাকতাড়ুয়ার সংখ্যা খুব একটা বেশি না।

কৃষি বিজ্ঞানের মতে, ফসলি জমিতে পাখির উপদ্রব নতুন কিছু নয়। বিশেষ করে ফসলের ক্ষেতে শস্য খেতে এবং নষ্ট করতে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি এসে ভিড় জমায়। কাকতাড়ুয়া সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। কোনো বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার ছাড়াই ফসল রক্ষা করা সম্ভব হয়। এতে পাখির মৃত্যু ঘটে না, পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্যও অক্ষুণ্ন থাকে। এটি কৃষকদের জন্য সাশ্রয়ী ও কার্যকর একটি সমাধান।

সাটুরিয়া উপজেলার ফুকুরহাটি ইউনিয়নের জান্না এলাকার কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, বীজ বপন বা চারা লাগানোর পর পাখির আক্রমণ বেড়ে যায়। তাই শখ করেই আমি আর ছেলে একটি কাকতাড়ুয়া বানিয়ে শিম ক্ষেতে বসিয়েছি। তুলনামূলকভাবে এখন ক্ষেতে পাখি কম বসে।

একই ইউনিয়নের চামারখাই এলাকার কৃষক রজ্জব মুন্সী জানান, আমার পুরান একটা জামা আর মাটির একটা পাতিল দিয়ে কাকতাড়ুয়া বানাই দিছি। আগে অনেক পাখি ফসলের ক্ষতি করত। কাকতাড়ুয়া লাগানোর পর পাখির উৎপাত অনেক কমে গেছে। এটা কম খরচে ভালো ফল দেয়।

অন্যদিকে কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, অনেক সময় আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেও পুরোপুরি পাখির হাত থেকে ফসল রক্ষা করা যায় না। কিন্তু কাকতাড়ুয়া বেশ কার্যকর।

বর্তমানে কাকতাড়ুয়ার প্রচলন কিছুটা কমে এসেছে। কৃষি প্রযুক্তির আধুনিকায়নের কারণে অনেক কৃষক এই পদ্ধতি অবহেলা করছেন। তবে কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, কাকতাড়ুয়াকে আরও কার্যকর করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।

এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না এমন আত্মবিশ্বাস থেকেই প্রত্যন্ত এলাকার কৃষকরা ক্ষেতে কাকতাড়ুয়া স্থাপন করে। চাষাবাদে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় কৃষক আগের মতো আর কাকতাড়ুয়া ব্যবহার করছে না। দিন দিন উপজেলার প্রতিটি এলাকায় কৃষকের কাছে পার্চিং ও আলোকফাঁদ পদ্ধতির ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

প্রযুক্তির উন্নতির পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব এই ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতিকে সংরক্ষণ ও পুনরুজ্জীবিত করা হলে ফসল সুরক্ষিত থাকবে এবং কৃষকরাও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button