বাংলাদেশের পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদুতে পাহাড়িদের বাড়িঘরে আগুন ও ভাঙচুরের ঘটনায় ৩০০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে আজ শনিবার মামলা করেছে পুলিশ।
এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত সাতজন বাঙালিকে আটক করা হয়েছে।
হামলার ভয়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর যেসব মানুষজন পালিয়ে গিয়েছিলেন তাদের কেউ কেউ গ্রামে ফিরতে শুরু করেছেন। পালিয়ে যাওয়া অনেকের মধ্যে ছিলেন লংগদু সদরে তিন টিলা গ্রামের বিশ্বজিৎ চাকমা। একটি মুদি দোকানের ব্যবসা করেন তিনি।
তিনি বলেন, শুক্রবার সকালেই তার বাড়ি ও দোকান দু’টোতেই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার সময় প্রাণভয়ে জঙ্গলে পালিয়ে যান তিনি ও তার প্রতিবেশীরা।
বিবিসি বাংলাকে বিশ্বজিৎ চাকমা বলেন, “বৃহস্পতিবার থেকেই সবাই ভয় পাচ্ছিলো। কিন্তু সেনাবাহিনীর ভাইয়েরা আর পুলিশ প্রশাসন আশ্বাস দিলো কিছু হবে না। তো আমরা তাই পালিয়ে যাই নি। শুক্রবার সকালে যখন ভাত রান্না করছিলাম তখন হঠাৎ গণ্ডগোল। মিছিল করে তারা আমাদের বাড়িতে আসলো। প্রথমে আমাদের দোকানটা জ্বালিয়ে দিলো। তারপর বাড়ি। এসময় আমরা জঙ্গলে পালিয়ে যাই।”
বিশ্বজিৎ চাকমা বলছেন, হামলার ফলে যে ক্ষতি হয়েছে সেটি কিভাবে পোষাবেন সেটিই তার মূল উদ্বেগ।
লংগদুর যে চারটি গ্রামে এই হামলা হয়েছে সে গ্রামগুলো থেকে যারা পালিয়ে গিয়েছিলেন তাদের কেউ কেউ ফিরে এলেও অনেকে এখনো আশ্বস্ত হতে পারছেন না বলে তারা বাড়িতে ফেরেন নি।
ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার রাতে। দীঘিনালা-লংগদু সড়কের পাশে স্থানীয় এক যুবলীগ কর্মীর মরদেহ পাওয়া যাওয়ার পর থেকে সেখানে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
শুক্রবার নিহতের জানাজার পর স্থানীয় বাঙালিরা মিছিল বের করে এবং পাহাড়িদের বাড়ি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়।
প্রশাসন বলছে, একশোটির মতো ঘরবাড়ি ও দোকান পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, এই সংখ্যাটি আরো অনেক বেশি।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোঃ মাঞ্জারুল মান্নান বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তারা সাহায্যের ব্যবস্থা করছেন।
তিনি জানিয়েছেন, “যাদের বাড়ি পুড়ে গেছে তাদের থাকার জন্য স্থানীয় একটি কিয়াং বা উপাসনালয় এবং একটি বালিকা বিদ্যালয় খুলে দেয়া হয়েছে। তাদের খাওয়া দাওয়া ও অন্যান্য যা প্রয়োজন তা প্রশাসন থেকে সরবরাহ করা হবে।”
ঘটনার পর থেকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা দু’পক্ষকে নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। মি. মান্নান বলছেন, তারা দু’পক্ষের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।
এই ঘটনার পর পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি অভিযোগ করে যে স্থানীয় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ছত্রছায়ায় এই হামলা হয়েছে।
তবে রাঙামাটির পুলিশ সুপার সাইদ তারিকুল হাসান বলেছেন, পুলিশ সেখানে সহায়তার জন্য গিয়েছিলো।
তিনি বলেন, “আগুন যখন লাগে তখন পুলিশের লোকজন তা নেভানোর জন্য গিয়েছিলো। মানুষের জানমাল রক্ষা করা তাদের সরকারি দায়িত্ব।” বিবিসি