করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে সারাদেশের মানুষকে ঘরে অবস্থান করতে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্দেশনা উপেক্ষা করে অন্ন যোগাড় করতে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছেন অনেক দিনমজুর, রিকশাচালক ও হতদরিদ্র জনগণ। কিন্তু কলকারখানার চাকা বন্ধ থাকা, ঘর থেকে মানুষ না বের হওয়ায় এসব নিম্মবিত্ত জনগোষ্ঠীর খাবারের ব্যবস্থাও হচ্ছে না।
রাজধানীর এসব দরিদ্র ও নিম্মবিত্ত জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) সদস্য তানভীর হাসান সৈকত। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর গত ২৪ মার্চ থেকে দরিদ্র জনগণকে খাওয়ানো শুরু করেন তিনি। প্রথমদিকে ৫০ জনকে দিয়ে শুরু করলেও এখন ৫ শত দরিদ্রকে খাওয়ান ডাকসুর এই সদস্য। এছাড়াও দিনে আরো একশত মানুষের কাছে চাল, ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি পৌঁছে দিচ্ছেন তিনি।
নিজের কার্যক্রম সম্পর্কে সৈকত বলেন, প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে নিজ হাতে রান্না করি। পরে ওই খাবার রাজধানীর ভাসমান রিকশা চালক, দিনমজুরের কাছে পৌঁছে দেই। আমি শুধু খাবার না, চাল, ডাল, পেঁয়াজও বিতরণ করছি। প্রথমদিকে নিজের পকেটে থাকা টাকা দিয়ে ৫০জনকে সহায়তা করতাম। কিন্তু ধীরে ধীরে এর পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট অনেকেই সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এখন প্রতিদিন ৫ শত গরিব, অসহায় ও দুস্থ পরিবারকে সহায়তা করতে পারছি।
কার্যক্রমের আরম্ভ কিভাবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ৮ মার্চ দেশে করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেলে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে আতঙ্কিত না হয়ে মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ শুরু করি। এরপর সরকারের পক্ষ থেকে ছুটি ঘোষণার পর রাজধানীর বাসিন্দারা অনেকেই বাড়ি চলে যান। আর যারা ঢাকায় অবস্থান করেছেন তারা অতি জরুরি কাজ ছাড়া বাসা থেকে বের হচ্ছে না। এছাড়াও অনেক অসহায় মানুষ খোলা আকাশের নিচে রাস্তায় পাশে রাত্রিযাপন করছেন। সব ধরনের কাজ বন্ধ থাকায় তাদের ঠিকমত খাবার খেতেও পারছিলেন না তারা। তাদের এ অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য হয়নি আমার। এ পরিস্থিতি থেকেই তাদেরকে খাবার দেয়ার উদ্যোগ নেই।
তারপর থেকে গত এক সপ্তাহ ধর তিনি অসহায় মানুষদের কাছে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন। সৈকত কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য। ডাকসুর কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।
তিনি বলেন, শহরের কিছু শ্রমজীবী ছিন্নমূল অসহায় মানুষের খেয়ে ঘুমাচ্ছে দেখে আমি শান্তি পাই। এ কার্যক্রম প্রতিদিন চলবে। তবে এতে কেউ সহযোগিতা করতে চাইলে তাকে সুযোগ দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
এ কার্যক্রমে সহযোগী সম্পর্কে জানান, আমার বন্ধু-বান্ধব, দুই একটি সংগঠন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টাফরাসহ অনেকেই আমাকে এ কাজে সহযোগিতা করছে। সবার সহযোগিতা নিয়েই আমি এ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। এমন দুর্দিন যতদিন থাকবে এবং মানুষের সহযোগিতা পাবো ততদিন মানুষের পাশে থাকতে চাই।
নিজের দেখা পরিস্থিতি বর্ণনা করে তিনি বলেন, ‘যত দিন যাচ্ছে শ্রমজীবী, দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষগুলো আরো বেশি দুর্ভোগে পড়ে যাচ্ছে। দিন দিন এ দুর্ভোগ আরো বাড়তে থাকবে বলে মনে হচ্ছে। আমরা যারা মাঠে কাজ করছি, ইতিমধ্যেই আমরা বুঝতে পারছি মানুষ কতটা হাহাকারে আছে। মানুষের রুজি রোজগার নেই, দুমুঠো খাবার নেই, টিকে থাকার ভরসাও নেই। এক অজানা গন্তব্যের ভেতরে প্রবেশ করছে তারা।’
ইত্তেফাক