আমির হোসেন, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধ: আমি সাধারণত প্রবাসীদেরকে নিয়ে কিছু লেখতে পারিনা, আর আমি সেইসব উড়ে যাওয়া স্বপ্ন গুলো সাজিয়ে গুছিয়ে যখন লিখতে যাই, তখনই আমার বুকের বাম পাশটায় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করি, হাতটা তখন কেপে ওঠে, অশ্রু নামক কিছু এসে মোবাইলের স্রিনটা ভিজিয়ে দেয়, লিখতে চাইলেও পারিনা, কি লিখবো, যদি প্রবাসিদের হিসাব করা হয় তবে ৫০% মানুষ আছেন যারা মাস শেষে যা টাকা বেতন পান তা থেকে কোনরকম নিজের ফ্যামিলি চালিয়ে নিতে পারলেও নিজের জন্য মাস শেষে একটা ভালো ক্রিম কেনার টাকাও পকেটে থাকেনা, ১/২/৩/৪/৫ বছরেও একবার দেশে যাবার জন্য কল্পনাও করতে পারেন না তারা, কিন্তু দেশের জন্য প্রতি রাতেই কেঁদে কেঁদে বালিশের এক পাশ ভিজিয়ে ফেলেন,
আরো ২০% আছেন যারা মূটামুটি ভালো অফিসে কাজ করেন, ভালো একটা পয়সা ইনকাম করতে পারেন, কিন্তু চাইলে দেখা যায় তারা আরো বেশিই কষ্টে আছেন, তাঁদেরকে মালিক যে পরিমাণ টাকা দেয় এর তিনগুণ কাজ উদ্দার করে নেয়, আর রুজি করে নিজের জন্য কিছু না করে দেশের ভাই-বোন মা-বাবার জন্য করতে করতে তাদের শখগুলো পুরন করতে গিয়ে, একটা সময় দেখা যায় নিজের পকেট খালি, আর এই মানুষ গুলোই একদিন সবার কাছে বেইমান হয়ে যায়,
একটা সময় নিজের আপনজনরাই বলেন, এতো এতো টাকা রুজি করে, তার কাছে অনেক টাকা আছে, আরো অনেক কিছু,
আর ২০% মানুষ আছেন, তাঁদেরকে দেখলে মনে হয়, দুনিয়ায় জন্ম নেয়াটাই তাদের মহাপাপ,
তারা দালালের খপ্পরে পড়ে এসেছেন, মাসে যা রুজি হয় তা দিয়ে নিজেই চলা কষ্ট, তার মাঝে অনেক সময় মাসের পর মাস কাজ থাকেনা ইত্যাদি,
তবে যে যে অবস্তানেই হোন, কথা কিন্তু একটা সত্য, বিদেশ অনেক অনেক টাকা আছে, আমাদের না দিকে ঠিক মতো খেয়াল না করলেও একাউন্ট কিন্তু টাকায় ফুল, এটা দেশের কিছু মানুষের ধারণা,
অনেকেই বলে, যদি ওখানে রুজি না হয় তবে চলে আসো,
প্রবাসিরা শত কস্টের পরেও কেন প্রবাস ছেড়ে যেতে চায়না, তা প্রবাসি ছাড়া কেউ বুঝতেও পারবেনা,,
আমার পরিচিত অনেকেই আছেন যারা বলেন, আমরা গেলে এই করতাম সেই করতাম, আমি তাঁদেরকে বলি, সত্যি তোমরা পারবে, আমরা পারিনি,
একটা কথা মাথায় আসেনা, প্রবাসিরাও তো আরো হাজার মানুষের মতো মানুষ,
তাদের কি ইচ্ছে হয়না নিজের যৌবনকাল টা আরো ১০ জনের মতো কাটাতে?
ইচ্ছে হয়না সকালে মায়ের বকা শুনে শুনে ঘুম থেকে উঠতে?
বাবার শাসনের বেড়াজালে থাকতে?
পছন্দ মতো একটি মেয়েকে বিয়ে করে সুন্দর একটি সংসার গড়তে?
মাঝে মাঝে বন্ধুদের নিয়ে হইচই করে বেড়াতে?
সন্ধার পর, গলির মোড়ে বন্ধুদের নিয়ে চটপটি খেতে?
হুম অনেক ইচ্ছে হয়, যা পকাশ করার মতো নয়,
কিন্তু আল্লাহ্ প্রবাসিদের মনে একটা মহল গড়ে দিয়েছেন, যার নাম ত্যাগ আর ধৈর্য্য,,
আর সেই কারণেই নিজের সব চাওয়া পাওয়া, নিজের জীবনের কোটি টাকা দামের সময় গুলো সস্তা দামে বিক্রি করে মনুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে নিজেকে সুখি মনে করে,,
পরিসংখ্যান করলে দেখা যাবে ৮০% প্রবাসির কাছে নিজের জন্য জমানো ১০ হাজার টাকাও নেই, যদি থাকে তবে হয়তো সেটা রেখেছে একটা মোবাইল কিনবে, কারো সাথে আদরের ছোট ভাইকে উপহার দেয়ার জন্য,
তারপরেও কিছু প্রবাসি আছেন, যারা সব কিছু বির্সজন দিয়ে নিজের জন্য একটা সপ্ন দেখেন, কিছু একটা চাওয়ার থাকে, জীবনের কোন একটা বাঁকে গিয়ে সেই সপ্নটা পুরণ করতে চান, কারো সেই সপ্ন পুরণ হয়ে যায়, কারো হয়না,
যার সব মুল্যবান সময়, নিজের সুখগুলো শেষ করেও নিজের দেখা সপ্নটা পুরণ হয়না,
তারা আর জীবনে কোন সপ্ন দেখেনা, দেখতে চায়ওনা,, কারণ আবার নতুন করে সপ্ন সাজাবার মতো সময় আর নেই,
সেটা মরুভূমির বালির সাথে উড়ে চলে গেছে, চাইলেই নিজের জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া সময় গুলো আর ফিরিয়ে আনতে পারবেনা,
তাই বালির সাথে উড়ে উড়ে যাওয়া প্রবাসিদের সপ্নের কথা লিখতেও পারিনা, আর বলতেও পারিনা,,