sliderবিবিধশিরোনাম

প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ দেশের সম্পদ রক্ষার রাজনীতি করতেন

নাগরিক স্মরণসভায় বক্তারা

তেল–গ্যাস–খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ–বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ দেশের সম্পদ রক্ষার রাজনীতি করতেন। তাঁর কাছে জীবিকার চেয়ে মানুষের জীবন অনেক বড় ছিল। তিনি নিজেকে অন্যদের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন। প্রয়াত প্রকৌশলী শহীদুল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আয়োজিত নাগরিক স্মরণসভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এই সভার আয়োজন করে তেল–গ্যাস–খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ–বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।

শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ গত ৯ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস অঙ্গরাজ্যে মারা যান। তিনি দীর্ঘদিন বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। স্মরণসভার আগে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে রাখা শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক–সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা ও সাধারণ মানুষ।

স্মরণসভায় ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘অসাধারণ মানুষদের সম্বন্ধে বলা হয়, তাঁদের জন্মই সত্য, মৃত্যু সত্য নয়। অনেক সময় জীবিকা জীবনের চেয়েও বড় হয়ে যায়। শহীদুল্লাহ ভাইয়ের কাছে জীবিকার চেয়ে জীবন অনেক বড় ছিল। তাঁর জীবন ছিল রাজনীতি। তিনি তেল–গ্যাস–খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ–বন্দর রক্ষার আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন ওই রাজনীতির কারণে।’

বাংলাদেশ যে প্রান্তিক দেশে পরিণত হয়েছে, তার কারণ সম্পদের অভাব নয় মন্তব্য করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, তার কারণ হচ্ছে সম্পদ পাচার। বাংলাদেশের সম্পদ লন্ডনে গেছে, করাচিতে গেছে, এখন বিভিন্ন দেশের রাজধানীতে যাচ্ছে। সেই যে পাচার হওয়ার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, সম্পদ রক্ষা করার যে জায়গাটা, এটা সত্যিকারের দেশপ্রেম। শহীদুল্লাহ দেশের সম্পদ রক্ষার রাজনীতি করতেন। ছাত্র–জনতার আন্দোলনের পর বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সব বামপন্থীকে এক হওয়ার আহ্বানও জানান অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

প্রকৌশলী শহীদুল্লাহর জীবনটাই সংগ্রামের ছিল বলে উল্লেখ করেন তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ–বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ। সভায় তিনি বলেন, বামপন্থী রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, পাঠচক্র—খুব কম পাওয়া যাবে যারা শহীদুল্লাহর সহযোগিতা চেয়ে পাননি। কেউ অসুস্থ হলে বা পড়াশোনার খরচ লাগলেও তিনি দিয়েছেন। আনু মুহাম্মদ বলেন, সব সময় তাঁর (শহীদুল্লাহ) নিজের জীবন ছিল অন্যদের জন্য। ব্যক্তিজীবনকে সমষ্টির সঙ্গে যুক্ত করা খুব সহজ কাজ না।
রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর স্মরণসভায় বক্তব্য দেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
রাজধানীর রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর স্মরণসভায় বক্তব্য দেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীছবি: সংগৃহীত

তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ–বন্দর রক্ষার আন্দোলন পরিচালনায় শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ অক্লান্ত উৎসাহদাতা ছিলেন বলে উল্লেখ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এম এম আকাশ। তিনি বলেন, উদ্যোগ নেওয়া হলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাঁর মরদেহ পরিবারের সদস্যদের অনুরোধের কারণে দেশে আনা সম্ভব হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আকমল হোসেন বলেন, শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ আন্দোলনের সময় কখনো আপসের কথা বলেননি। তাঁর লক্ষ্য স্থির ছিল এবং তা প্রকাশ করার ব্যাপারে ভয়ভীতি ছিল না। রাষ্ট্রের কোনো স্বীকৃতির তিনি আশা করেননি। তাঁর মরদেহ বিদেশ থেকে দেশে আনতে না পারার দুঃখ থেকে যাবে।

প্রকৌশলী শহীদুল্লাহ নিজের জন্য কোনো সম্পদ রাখেননি বলে জানান তাঁর ছোট সন্তান শাহিক মাহমুদ। তিনি বলেন, বাবা মানুষকে সততা নিয়ে চলতে বলতেন। সততাই মানুষের একমাত্র পরিচয় হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করতেন।

স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি অধ্যাপক এম শামসুল আলম, স্থপতি ইকবাল হাবিব, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদ (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা, বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনের সমন্বয়ক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী, বাংলাদেশ বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, সাংবাদিক শুভ কিবরিয়া প্রমুখ। সভাটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সভাপতি খান আসাদুজ্জামান মাসুম।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button