পেট্টোবাংলার পরিচালাকের যোগসাজশে কর্ণফুলী গ্যাসের তিন কর্মকর্তার ব্যাপক দুর্নীতি॥ অসহায় তদন্ত কমিটি
চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : পেট্রোবাংলার এক পরিচালকের যোগসাজশে কর্ণফূলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির তিন কর্মকর্তা বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কর্ণফূলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার এ- সার্ভিসেস বিভাগের জিএম সারোয়ার আলম ও ডিজিএম অনুপম দত্ত এবং বিপনন বিভাগের জিএম গৌতম চন্দ্র কুন্ডু। এ তিন কর্মকর্তার একের পর এক অবৈধ কর্মকান্ডের কারণে কর্ণফুলী গ্যাস কর্তৃপক্ষও বিব্রত। দুদকের মামলায় কেউ কেউ গ্রেফতার হলেও কিছুতে থামছে না। কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি কর্তৃপক্ষ তাদের অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে বিভিন্ন সময় তদন্ত কমিটি করলে কমিটি তাদের বিরুদ্ধে সত্য প্রতিবেদন প্রকাশ করার চেষ্টা করলে তাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি কাজে বাঁধা দেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। তাদের দাপুটের কারণে তদন্ত কমিটিও অসহায় হয়ে পড়ছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের নিয়মনীতি অম্যান করে ৫ কোটি টাকার বিল বকেয়া থাকা অবস্থায় মোটা অংকের ঘুষ বাণিজ্যর মাধ্যমে চট্টগাম নগরীর মোহরায় একটি সিএনজি পাম্পকে পুনঃসংযোগ দেয় তারা। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ এবং জানাজানি হলে ঘটনায় জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি করেন। জড়িতরা শাস্তির ভয়ে প্রভাব বিস্তার করে তদন্ত কমিটিকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে বাঁধা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তদন্ত কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অভিযুক্ত কর্ণফুলীর ইঞ্জিনিয়ার এ- সার্ভিসেস বিভাগের জিএম সারোয়ার আলম, ডিজিএম অনুপম দত্ত এবং বিপনন বিভাগের জিএম গৌতম চন্দ্র কু-ুকে বাঁচাতে মরিয়া একটি সিন্ডিকেট। তাদের সিন্ডিকেটে রয়েছে পেট্টোবাংলার প্রভাবশালী এক পরিচালকও। ৯ মাসে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা বিল বাকি থাকায় ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম নগরীর চাঁন্দগাও থানাধিন মোহড়া এলাকার সামান্তা ফিলিং স্টেশনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। দুই বছর পর ২০২১ সালে আদালতের নির্দেশে পুনঃসংযোগ দেওয়া হয় পাম্পটিকে। কিন্তু গ্যাস বিপনন নীতিমালা ২০১৪ অনুযায়ী দেড় মাসের বিল বকেয়া থাকলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। আর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া গ্রাহক এক বছরের মধ্যে সবগুলো শর্ত মেনে পুনঃসংযোগ নিতে ব্যর্থ হলে তার সংযোগ স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। পরবর্তীতে তিনি সংযোগ নিতে চাইলে নতুন গ্রাহক হিসেবে বিবেচিত হবেন। কিন্তু শামান্তা ফিলিং স্টেশনের সংযোগ দুই বছর বন্ধ থাকলেও তার সংযোগ স্থায়ীভাবে বিচ্ছিন্ন করেনি কর্ণফুলী গ্যাস। এছাড়া পেট্রোবাংলার অধিনস্ত কোনো কোম্পানি গ্রাহকের মামলায় পরাজিত হলে তা নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ছাড়াও স্ব স্ব কোম্পানির বোর্ডকে অবগত করানোর নির্দেশনা আছে জ্বালানী মন্ত্রণালয়ের। কিন্তু শামান্তা সিএনজি পাম্পের কাছে মামলায় পরাজয়ের পর তড়িঘড়ি করে পুনঃসংযোগ দিয়েছে কর্ণফূলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কতিপয় কর্মকর্তা। পেট্রোবাংলা বলছে, নির্ধারিত সময়ের পর স্থায়ীভাবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে বিপনন যন্ত্রাংশগুলো খুলে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল কর্ণফূলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার এ- সার্ভিসেস বিভাগের জিএম সারোয়ার আলম ও ডিজিএম অনুপম দত্ত্বের। আর মামলার আপডেট পেট্রোবাংলা ও বোর্ডকে জানানোর দায়িত্ব ছিল বিপনন বিভাগের জিএম গৌতম চন্দ্র কুন্ডুর। কিন্তু এই তিনজনের কেউ তাদের দায়িত্ব পালন করেননি। বরং আদালতের উপর ভর করে তড়িঘড়ি করে পুনঃসংযোগ দেয়া হয়েছে। গত ১১ মে ঘটনাটি তদন্তে পেট্রোবাংলার জিএম (কন্ট্রাক্ট) শাহনেওয়াজ পারভেজকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি করেছে পেট্রোবাংলা। কর্ণফূলীর দুই কর্মকর্তা রইস উদ্দিন ও সুলতার আহমেদকে এতে সহযোগিতা করার নির্দেশ রয়েছে। ১৫ কর্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার কথা থাকলেও এক মাসেও তা দেয়নি তদন্ত কমিটি। অভিযোগ রয়েছে অভিযুক্ত ওই তিন কর্মকর্তাকে বাঁচাতে তৎপর রয়েছে কর্ণফূলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কতিপয় কর্মকর্তা। অভিযুক্ত এই তিন কর্মকর্তার মধ্যে সারোয়ার আলম একজনের বাসায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেওয়ার অভিযোগে দুদকের করা মামলায় জেলও খেটেছে। তাদের বিরুদ্ধে ঢাকা ও চট্টগ্রামে একাধিক বাড়ি ও গাড়িসহ কয়েক শতকোটি টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে। উন্নয়ন কর্মকান্ডের বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান থেকে কাজ পাইয়ে দিয়ে মোটা অংকের কমিশন বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনৈতিক লেনদেনের সাথেও যুক্ত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর অনিয়ম দুর্নীতির কারণে দীর্ঘ দিনের লাভজন এ প্রতিষ্ঠান ঐহিত্য হারাচ্ছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরের। বিপনন বিভাগের জিএম গৌতম চন্দ্র কুন্ডু এবং ডিজিএম অনুপম দত্তের মোবাইলে কয়েকদিন ধরে যোগাযোগ করা হলে ফোন ধরছে না এবং তাদের অফিসে কয়েকবার গেলেও কর্মস্থলে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে কর্ণফুলী গ্যাসের ইঞ্জিনিয়ার এ- সার্ভিসেস বিভাগের জিএম সারোয়ার আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে অভিযোগের বিষয়ে কোন মন্তব্য না করে অপরিচিত কোন সাংবাদিকদের সাথে কথা বলবে না বলে জানান। এ বিষয়ে কোম্পানির প্রশাসন বিভাগের জিএম ফিরোজ খান জানান, অভিযুক্দ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর পেট্টোবাংলা থেকে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে এর আগে আমাদের করার কিছু নাই।