sliderঅপরাধশিরোনাম

পিলখানা হত্যাকাণ্ড: ৭ দফা দাবি নিহত পরিবারের

পতাকা ডেস্ক: রাজধানীর পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত পরিবারের সদস্যরা সাত দফা দাবি জানিয়েছেন। শনিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। এসময় সাত দফা দাবি জানান তারা। সংবাদ সম্মেলনে নিহত এক সেনা কর্মকর্তার ছেলে সাকিব ও মেজর শাকিলের ছেলে রাকিন ছাড়াও অন্য নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্বজনরাও বক্তব্য দেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে একজন সিটিং প্রধানমন্ত্রী একটি বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে সেনা অফিসারদের হত্যা করেন। এ জন্যই আমরা শহীদ দিবস দাবি করছি। ১৫ বছর যেভাবে তদন্ত হয়েছে, তা আমরা মানি না। কারণ প্রধান হত্যাকারী (যিনি নির্দেশ দিয়েছেন) তিনি তখন গণভবনে। এ ঘটনায় যারা নির্দোষ, এখনো জেল খাটছেন, তাদের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে মুক্তি দেয়ার দাবি জানাই।’

মেজর মোসাদ্দেকের মেয়ে নাজিয়া বলেন, ‘আমাদের কষ্টের কথা যদি বলি, একই পরিস্থিতিতে এখনও যাচ্ছি। কষ্ট দূরে হয়ে যায়নি। এর পেছনে অনেক ঘটনা ছিল। আমরা তো আমাদের স্বজনদের হারিয়ে ফেলেছি। মানুষ জানুক এই হত্যাকাণ্ড কারা করেছে। কেন এত বছর পরও আমাদের মুভমেন্টে বাধা হয়।’

কর্নেল নাহিদের মেয়ে নাবিলা বলেন, ‘এটা আন্তর্জাতিক চক্রের কাজ। আন্তর্জাতিক শক্তির দ্বারাই কাজটি করা হয়েছে। আপনারা বের করবেন আসল কারণ। এটা বিদ্রোহ নয়, এটা হত্যাকাণ্ড, পরিষ্কার হত্যাকাণ্ড। আমার বাবা মারা যাননি। হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। কিছু অপপ্রচারের জন্য আমরা হেনস্তা হয়েছি। এত দিন ভয়ে কথা বলিনি, আজ নির্ভয়ে কথা বলছি।’

নিহত সেনা সদস্যদের স্বজনরা আরো বলেন, ‘১৫ বছর ধরে আমাদের একটাই দাবি, বিচার চাই। একটা স্বচ্ছ বিচার হোক। আমরা এ বিষয়ে আর লুকোচুরি চাই না। চাপ দিয়ে আমাদের মুখ বন্ধ করা হয়েছিল। বাধার মধ্যে ১৬ বছর পার করেছি।

পরিবারগুলোর সাত দাবিগুলো হলো:

১. সত্য উদঘাটনের ক্ষেত্রে আগে যেসব তদন্ত হয়েছে, সেসব তদন্তের প্রতিবেদন পাবলিক করতে হবে।
২. হাইকোর্ট ডিভিশনের রায় মোতাবেক তিন বিচারক যে ইনকোয়ারি কমিশনের কথা বলেছেন অবিলম্বে সেই ইনকোয়ারি কমিশন গঠন করতে হবে। এতে পর্দার আড়ালে রয়ে যাওয়া ষড়যন্ত্রকারীদের নাম বেরিয়ে আসবে।
৩. অফিসিয়াল গ্যাজেট করে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে এবং গ্যাজেটে নিহতদের সবাইকে শহীদের মর্যাদা দিতে হবে।
৪. ২৫ ফেব্রুয়ারি শোক দিবসকে ঘিরে দেশজুড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখতে হবে।
৫. পিলখানা ট্র্যাজেডিকে স্কুলের পাঠ্যবইয়ের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৬. এ ঘটনাকে ঘিরে যেসব সেনা কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন, তাদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে অথবা যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৭. নির্দোষ কোনো বিডিআর জওয়ানকে যেন কোনোভাবেই সাজা না দেয়া হয়।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা। বিডিআরের দরবার হল থেকে সূচনা হওয়া ওই বিদ্রোহের ইতি ঘটে নানা ঘটন-অঘটনের মধ্য দিয়ে পরদিন। পিলখানায় বিদ্রোহের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে জওয়ানরাও বিদ্রোহ করে। সেই বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button