পিরোজপুরে জামায়াতে ইসলামীর রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত

নাছির উদ্দিন পিরোজপুর: পিরোজপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ২১ সেপ্টেম্বর শনিবার জামায়াতে ইসলামীর রুকন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ও জেলা আমীর অধ্যক্ষ তাফাজ্জল হোসাইন ফরিদ এর সভাপতিত্বে রুকন সম্মেলন শুরু হয়। জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ জহিরুল হকের সঞ্চালনায় জেলা আমীর এর উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডঃ মুয়াযযম হোসাইন হেলাল। সম্মেলনে দারসুল কুরআন পেশ করেন, ভোলা জেলার সাবেক আমীর মাওলানা ফজলুল করিম। সম্মেলনে জেলার সকল রুকনগন অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী জেনারেল মাওলানা শাহজাহান বলেন, আপনারা পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে প্রমাণ করুন যে আপনারা ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মা নন। তিনি বলেন, আগে পুলিশ গ্রেফতার করলে কেন গ্রেফতার করা হয়েছে জিজ্ঞেস করলে তারা বলতো, উপরের নির্দেশ। এখন আর উপরে নির্দেশ নেই সুতরাং এখন সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব দিয়ে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আপনাদেরকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনারা ফেসিবাদের প্রেতাত্মা নন। আর যদি সেটা না পারেন, তাহলে ছাত্র-জনতা আপনাদেরকেও ছাড় দিবে না। যেমনি করে ছাত্র-জনতা দেশকে ফ্যাসিবাদ মুক্ত করেছে তেমনি করেই সকল প্রকার ষড়যন্ত্র রুখে দিতে জনতা ঐক্যবদ্ধ আছে।
মাওলানা শাহজাহান বিগত আওয়ামী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তাদের টার্গেট ছিল একটা আলট্রা সেকুলার রাষ্ট্র কায়েম করে দেশটাকে ভারতের হাতে তুলে দেয়া। আর এই পথে প্রধান বাধা ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং হক্কানী ওলামায়ে কেরাম। আর এই বাধা অপসারণ করার জন্যই তারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আরোহণ করেই প্রথমে সেনাবাহিনীর ৫৭ জন মেধাবী অফিসারকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে। এর পরে তারা জামায়াতে ইসলামীকে নিঃশেষ করে দেয়ার জন্য জামায়াতের দেশপ্রেমিক এবং আল্লাহ ভীরু নেতৃবৃন্দকে বিচারের নামে হত্যা করে। অথচ জামায়াতের দুইজন নেতা তিনটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশসহ সারা বিশ্বকে তাদের সততা, দক্ষতা এবং যোগ্যতার প্রমাণ দেখিয়ে দিয়েছিল। তাদেরকে কোনভাবেই দুর্নীতিপরায়ণ প্রমাণ করতে না পেরে তাদের আগামীর পথে বাধা অপসারণ এর জন্যই পরিকল্পিতভাবে হত্যার পথ বেছে নিয়েছিল।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অ্যাডঃ মুয়াযযম হোসাইন হেলাল বলেন, একটি সমাজ বিপ্লবের জন্য একদল আদর্শবান মানুষের প্রয়োজন। একদল আদর্শবান মানুষ ছাড়া কোনভাবেই বিপ্লব সম্ভব নয়। তাই মাওলানা মওদুদী রাহিঃ ১৯৪১ সালে দেশ বিভক্তের আগে থেকেই মাত্র ৩৮ বছর বয়সে জামায়াত প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ভাগ হয়ার আগেই জামায়াত একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য লোক তৈরি করার কাজ শুরু করে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, দলীয়করণ , লুটপাট করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে অথচ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী শত জুলুম নির্যাতনের পরেও টিকে আছে। দেশ নতুনভাবে স্বাধীন হওয়ার পর অনেক রাজনৈতিক দল নির্বাচন নিয়ে তাড়াহুড়া করছে কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছে। জামায়াতের মূল কাজ হল মানুষের চরিত্র গঠন, জামায়াত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম এর অনুসরণ পদ্ধতিতে মানুষকে দাওয়াতের মাধ্যমে চরিত্র গঠন করে সহযোগী বানিয়ে কর্মী করে এবং রুকন তৈরি করে। এরপর অ্যাডঃ হেলাল উপস্থিত রুকনদে সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয়ে খোঁজখবর নেন। রিপোর্টসহ বিভিন্ন বিষয়ক খোঁজ খবর নিয়ে তাদের সাংগঠনিক মানের অবস্থা বোঝার চেষ্টা করেন।
মাওলানা ফজলুল করিম সূরা মারিয়াম এর ৯৬ থেকে ৯৮ আয়াতের দারস পেশ করেন। ঙ্গআল্লাহর এ কথার বাস্তব নমুনা আমরা আজকে ময়দানে দেখতে পাচ্ছি। আজ আল্লাহ মানুষের মনে জামায়াতের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি জাগিয়ে দিয়েছেন। বিগত ১৫ বছরের জুলুম নির্যাতন এবং মিথ্যাচার না হলে স্বাভাবিক কাজের মাধ্যমে এটা এত সহজে অর্জন করা যেত না।
অনুষ্ঠানে জেলা আমীর তোফাজ্জল হোসেন ফরিদ,নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রবসহ সকল উপজেলা আমীর এবং জেলা শুরা ও কর্ম পরিষদ সদস্যরা বক্তব্য রাখেন।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যক্ষ তাফাজ্জল হোসাইন অনুষ্ঠান সফল করার জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান এবং আগামী দিনে সকলে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে সাংগঠনিক মজবুতি অর্জনের চেষ্টা চালাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পিরোজপুর সংস্কৃতি কেন্দ্রের শিল্পীরা অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করে অনুষ্ঠানকে প্রাণবন্ত করে রাখেন।