sliderউপমহাদেশশিরোনাম

পায়রা ধরতে গিয়ে ভারতের জেলে পাকিস্তানের ছাত্র

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের এক ছোট্ট গ্রামের ছেলে নবম শ্রেণির ছাত্র আব্দুস সামাদ। পাকিস্তানের কাশ্মীরে অবস্থিত ওই গ্রামের নাম তাত্রিনোট। সামাদ কবুতর পুষতেন। গত নভেম্বর মাসে পায়রাগুলোকে খাঁচা থেকে মুক্ত করেছিলেন সামাদ।

বিকেলের দিকে কিছু পায়রা ফিরে এলেও কয়েকটি নিরুদ্দেশ ছিল। তাদের খুঁজতে বেরিয়েই সমস্যায় পড়েন সামাদ। পায়রা ধরতে গিয়ে তিনি ঢুকে পড়েন ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে। আর সাথে সাথে তাকে আটক করে ভারতের সীমান্ত বাহিনী বিএসএফ।

ভারতে সামাদের বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে সীমান্ত অীতক্রমের মামলা করে তারা। তাকে নিয়ে রাখা হয় অমৃতসরের একটি জেলে। আটকের পর আট মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো সামাদের সাথে কথা বলতে পারেনি তার পরিবার।

তার গ্রামের সাধারণ মানুষেরা ওই দিন বিকেলেই খবর পান যে, সামাদ ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। তারপরেই পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তার পরিবার।

সামাদের মামা আরবাব আলি জানান, সামাদ গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে তারা একাধিকবার পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করেছেন কিন্তু সেখান থেকে কোনো সাহায্য মেলেনি। তারা একবার সামাদের গলার আওয়াজ শুনতে চান। কিন্তু সেই ব্যবস্থাটুকুও তাদের করে দেয়া হয়নি।

ওয়াশিংটনে উড্রো উইলসন সেন্টার ফর স্কলারসের দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলম্যান ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ‘এ ধরনের মামলায় সাধারণত বন্দিকে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু সেক্ষেত্রে অনেকটা সময় লেগে যায়। সেজন্যই উপযুক্ত সংস্থার কাছে দ্রুত পৌঁছানো জরুরি।’

ভারতের মানবাধিকার কর্মী রাহুল কাপূর আব্দুস সামাদের ঘটনা জেনে একটি অনলাইন পিটিশনের ব্যবস্থা করেন। গোটা দেশ থেকে স্বাক্ষর সংগ্রহ করে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়েছিলেন। তারই জেরে ভারতে পাকিস্তান দূতাবাসের কর্মীরা সামাদের সাথে কারাগারে গিয়ে সাক্ষাত করেন। গত মার্চ মাসে তারা সেখানে যান।

১৯৭৪ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। সেখানে এ ধরনের ভুল করে সীমান্ত পার করা মানুষদের হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়। হস্তান্তর শুরু হয়েছে, কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় দীর্ঘ সময় লেগে যায়।

এ মুহূর্তে পাকিস্তানের জেলে ভারতের এমন ৬২৮ জন বন্দি আছেন। অন্যদিকে ভারতের জেলে বন্দি পাকিস্তানের ২৮২ জন নাগরিক। এদের অধিকাংশই মাছ ধরতে গিয়ে সমুদ্রপথে সীমান্ত অতিক্রম করে ফেলেছিলেন।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সব ঠিক থাকলে সামাদ মুক্তি পেয়ে যাবেন। কিন্তু কতদিনে তিনি মুক্তি পাবেন, সেটাই চিন্তার। বস্তুত, ভারত ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক সম্পর্ক এখন এতটাই তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে যে, এ ধরনের হস্তান্তরে অনেক অনেক সময় লেগে যায়।

সূত্র : ডয়চে ভেলে


Related Articles

Leave a Reply

Back to top button