
মুন্সীগঞ্জ : গত কয়েক বছর ধরে মাওয়া হয়ে পদ্মা নদী পার হয়ে দক্ষিণবঙ্গে যেতে হতো ২৩ জেলার মানুষদের। এ বছর প্রথম ঈদযাত্রায় পদ্মা সেতু দিয়ে যাচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ।
একটি ফেরির জন্য কত দিন যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে তাদের, কখনো যানজট, তো কখনো কুয়াশা, পদ্মায় ডুবোচর তো আছেই। বছরের তিন মাস থাকে নাব্য সংকট। এরকম নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও মাঝিরঘাট পথের ফেরি রুটগুলো।
এবার পদ্মা সেতুর কারণে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার দিন শুরু। মাওয়া এলাকা থেকে সেতু দিয়ে দক্ষিণবঙ্গে পারাপার হওয়ার কারণে এমন অনেক বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি পাওয়ার আনন্দ ঝরেছে যাত্রীদের মুখে।
ঢাকা থেকে মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে টোল দিয়ে সেতু পার হয়ে নির্বিঘ্নে গন্তব্যে ছুটছেন যাত্রীরা। এতে তাদের ঈদ আনন্দ বেড়েছে কয়েকগুণ।
এদিকে, সেই আগের মতো ভিড় নেই শিমুলিয়া ঘাটে। ফেরিতে ওঠা-নামার সেই চিরচেনা প্রতিযোগিতার দৃশ্য চোখে পড়েনি। নেই সেই গাদাগাদি করে পদ্মা পারাপারের আচরণ। প্রিয়জনের মুখ দেখতে রাস্তায় দুর্বিষহ ভোগান্তি মাথায় নিয়ে বাড়ি ফেরার সেই চেনা দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। বাড়তি ঝুঁকিও নেই লঞ্চ-স্পিডবোটে পার হতে।
শুক্রবার পদ্মা সেতুর মাওয়া টোল প্লাজায় হয়ে যাতায়াতকারী বাসগুলোর একাধিক যাত্রীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, কেউ গাজীপুর, কেউবা ঢাকার বাসিন্দা। তাদের বাড়ি গোপালগঞ্জ ও খুলনায়। সকালে কুমিল্লা থেকে গুলিস্থান এসেছেন আবার পদ্মা সেতু হয়ে গোপালগঞ্জ যাচ্ছেন। এখন ৬ থেকে ৭ মিনিটেই পদ্মা সেতু পার হয়ে দিনে দিনে গন্তব্যে যেতে পারছেন তারা। কেউ কেউ এ নৌপথে চলাচলে আগে ঈদের সময় ভোগান্তির কথা ভেবে বাসা থেকে বের হওয়ার কথা চিন্তা করতে পারতেন না তারা। আজ পদ্মা সেতুর কারণে সে ভোগান্তি নেই।
আবুল কাশেম নামের পটুয়াখালির সদর এলাকার এক বাসিন্দা, যিনি সরকারি চাকরিজীবী, আক্ষেপ করে বলেন,
নদী পার হতে ফেরির অপেক্ষায় সড়কেই মৃত্যু হয়েছে অনেক রোগীকে, প্রসূতির সন্তান প্রসব হয়েছে সড়কেই। বিড়ম্বনা ও ফেরি থেকে নদীতে পড়ে যাওয়ার অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী পদ্মার পাড়ের মানুষ।
শুক্রবার সকাল থেকে ঈদযাত্রায় পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে টোলপ্লাজার সামনে কিছুটা গাড়ির জট থাকলেও বিকেল ৪টার পর তাও কমে আসে। টোল দিতে সময় লাগছে না। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই টোলের টাকা পরিশোধ করে গন্তব্যে রওয়ানা দিতে পারছে গাড়িগুলো।
অন্যদিকে ঢাকা থেকে টোলপ্লাজায় আগত মোটরসাইকেল ফিরিয়ে দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা।
সেতুর জাজিরা প্রান্তেও বিকেলে দেখা গেছে, সেতুর টোল প্লাজায় কোনো যানজট নেই। গাড়ি এলেই টোল দিয়ে সেতু পার হয়ে যাচ্ছে ঢাকামুখি গাড়িগুলো।
পদ্মা সেতুর মাওয়া পয়েন্টের উত্তর থানার ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুর মাওয়া পয়েন্টে বিকেল ৪টার পর থেকে কোনো যানজট নেই। গাড়ি নিরবিচ্ছিন্নভাবে পার হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই গরুর গাড়ি আসছে। টোল দিয়েই পার হয়ে যাচ্ছে ঢাকামুখে।