sliderমতামতশিরোনাম

পদত্যাগ, অপসারণ নয় উৎখাত

শাহীন রাজা: পদত্যাগ বা অপসারণ নয়। স্বৈরাচার উৎখাত হয়েছে। যুবক, ছাত্র-জনতা, সেনাসদস্য সম্মিলিত হয়ে স্বৈরাচারকে উৎখাত করেছে। মূল কথা হচ্ছে, সেনা সমর্থিত গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়েই স্বৈরাচারী সরকার উৎখাত হয়েছে।
পদত্যাগ-ই কিংবা অপসারণ। এর কোনটাই নয়। মোট কথা গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে, স্বৈরশাসক উৎখাত হয়েছে ! নতুন স্বপ্ন দেখার আর কোন সুযোগ নেই।

এই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে, আগের সরকারকে অস্বীকার করা। যার ফলে আগের আমলের, সরকার ব্যবস্থাপনার সবকিছুকেই বাতিল বলে গণ্য হবে। এ কারণে, আগের সরকারের নির্বাচিত বা মনোনীত সকল পদে আসীন থাকার আর কোন সুযোগ নেই ! তা যত বড় পদই হউক না কেন। জনগণের এই অভ্যুত্থানের কারণে, স্ব-পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছেন। জনতার সরকার মনোনীত ব্যক্তি-ই হবেন এই পদে আসীন।

এখন যাঁরা ফতুয়া দিচ্ছেন তাঁদের উদ্দেশ্যে বলছি, বাংলাদেশে রাজতন্ত্র শাসন ছিল না। যার কারণে, রক্তের উত্তরাধিকারীকে আবার ক্ষমতায় বসাতে হবে। এর বাইরে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায়, শাসক যখন স্বৈরাচার হয়ে যায়। এবং স্বৈরশাসনের কারণে জনগণ দ্বারা উৎখাত হলে, তাঁর আর ফেরার সুযোগ থাকে না। অপেক্ষা করতে হয়, অনেক বছর।
বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য পালিয়ে দেশ ত্যাগ করেছেন। তাঁদের আর পদত্যাগ করার কোন সুযোগ-ই থাকে না। এমনকি সরকারের বিকল্প কোন শক্তি অপসারণ করার-ও সুযোগ পায় না।
গণ-অভ্যুত্থান ঘটে গেলে, স্বৈরাচার জনরোষের ভয়ে তড়িঘড়ি করে দেশ ছেড়ে পালায়।

২০২৪ সালের ৫ আগষ্ট অপরাহ্নে বাংলাদেশ-ও তাই হয়েছে। যুবক-যুবতি, শ্রমিক, ছাত্র-জনতা এবং সেনাবাহিনীর সম্মিলিত সংগ্রামের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশ ত্যাগ করেন। সাবেক সরকার প্রধান দেশ ত্যাগ করার সাথে, সাথে সরকার পরিচালনা’র ভার-ও চলে আসে জনতার কাছে। সম্মিলিত জনতাই ঠিক করার কথা, আগামীতে কাদের হাতে দেশ পরিচালনার ভার দেয়া হবে।

তবে এখন যাঁরা দেশ পরিচালনা করছেন তাদের বলা দরকার, তাঁরা জনতার সরকার। এবং এই সরকারে দেশের সকল শ্রেণী, পেশার প্রতিনিধি রাখাটাই ছিল উত্তম। কেননা, শুধুমাত্র জ্ঞানদীপ্ত লোক-ই নয় অভিজ্ঞতায় আলোকিত লোকের-ও প্রয়োজ জরুরী। একজনের জ্ঞান এবং আরেকজনের সামাজিক অভিজ্ঞতা। এই দুইয়ের সম্মিলনে নতুন এক অভিযাত্রা। সোনালী আলোয় আকাঙ্ক্ষার এক নতুন বাংলাদেশ।

আবারও বলছি, ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আজকের বাংলাদেশ। তেমনি একাত্তরে নয়মাস দীর্ঘ সশস্ত্র সংগ্রামের ফসল, বাংলাদেশ। দুটির কোনটাকেই বাদ দেয়ার সুযোগ নাই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি যদি মনে করে, ৫ আগষ্টের বিপ্লব থেকে সুযোগ নেবে। তাদের ভাবাটা হবে তাদের জন্য চরম ভুল।
লেখক সিনিয়র সাংবাদিক

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button