
ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার প্রতিবাদ এবং অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণবিরোধী পদযাত্রার করেছে বেশ কয়েকটি সংগঠন।
শুক্রবার (১২ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর শাহবাগে গৌরব একাত্তরের আহ্বানে ‘যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণবিরোধী পদযাত্রা’ শীর্ষক এ পদযাত্রার আয়োজন করা হয়।চেতনা বাংলাদেশ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, পূর্ণিমা ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তি এতে অংশ নেন। পদযাত্রাটি জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয়।
এর আগে শাহবাগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা যৌন হয়রানির অভিযোগ করায় আগুনে পুড়িয়ে নুসরাত জাহান রাফিকে হত্যার প্রতিবাদ এবং অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রোকেয়া হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী ইসলাম বলেন, নুসরাতের মতো নির্যাতনের ঘটনায় আমরা আর রাস্তায় দাঁড়াতে চাই না। প্রতিবাদ হয়, সেটাও শেষ হয়। কিন্তু ধর্ষকদের বিচার হয় না। আর তাই ধর্ষণের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে।
গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, ২০০৬ সাল থেকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা একের পর এক অপকর্ম করে আসছে। এই ঘটনার পর স্থানীয় কিছু ব্যক্তির ভূমিকা বিশেষ করে সোনাগাজী থানার ওসির ভূমিকা প্রমাণ করে যে, স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধ চক্র ধর্ষককে প্রশ্রয় দিয়েছিল। আমরা এ সংঘবদ্ধ চক্রের বিচার চাই। আর যারা তাদেরকে প্রশ্রয় দিচ্ছে তারা শুধু ব্যক্তিগতভাবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করছে না বরং তারা দেশের বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ড. আবদুস সামাদ বলেন, একাত্তরের জামায়াত নেতাদের সহযোগী অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌলার মত ব্যক্তিরা আজও সমাজে উপস্থিত। এমন ঘটনা দেখে আমরা শিউরে উঠি। এমনটা মোটেও কাম্য নয়। এমন ঘটনায় জড়িত সবার বিচারের পাশাপশি যারা এদেরকে আশ্রয় দেয়, মদদ দেয় তাদেরকেও বিচারের আওতায় আনতে হবে। কারণ তারাও সমান অপরাধী।
গৌরব ৭১ নামক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীনের সভাপতিত্বে নুসরাত হত্যার বিচার চেয়ে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তব্য রাখেন পূর্ণিমা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান পূর্ণিমা রানী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস, গণজাগরণ মঞ্চের নেতা বাপ্পাদিত্য বসু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী ইসলাম, রোকেয়া হল সংসদের এজিএস ফাল্গুনী দাস তন্বী প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ৬ এপ্রিল শনিবার সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। ওই সময় তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের উপর কেউ মারধর করেছে এমন সংবাদে ভবনের চারতলায় যান তিনি। সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচ ছাত্রী তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। এতে অস্বীকৃতি জানালে তার গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায় তারা।
বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুসরাত জাহান রাফি। এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন নুসরাত জাহান রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান।