sliderস্থানীয়

নাটোরে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষে সফল চাষী আলফাজুল আলম

নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফল চাষ করে সফলতা পেয়েছেন আলফাজুল আলম। বিভিন্ন চাষিদের ড্রাগন চাষ দেখে নিজেই তৈরি করেন ড্রাগনের বাগান। শহরের নিচাবাজার এলাকার আলফাজুল আলম তেবাড়িয়া রেলগেটের পাশে রেলের প্রায় ২৩ বিঘা জমি লিজ নিয়ে গড়ে তুলেছেন ড্রাগন ফলের বাগান। তার বাগানে চারাসহ প্রায় ৫০ হাজার ড্রাগন ফলের গাছ রয়েছে। এক বিঘা জমিতে তিনি ৪০০ ড্রাগন ফলের চারা রোপণ করেছেন। প্রতি বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষে খরচ হয়েছে ৬০-৭০ হাজার টাকা। তিনি প্রতিটি গাছ থেকে বছরে ৮-১০ বার ফল পান। ফুল থেকে ফল পরিপক্ব হতে ২০-২৫ দিন সময় লাগে। একটি পরিপূর্ণ ড্রাগন গাছে বছরে প্রায় ৬০-৭০ কেজি ফল আসে। প্রতি কেজি ড্রাগন ফল তিনি বিক্রি করেন ২০০-২৫০ টাকায়। সব মিলে আলফাজুল আলমের এ বাগান তৈরী করতে খরচ হয়েছে ১৭/২০ লাখ টাকা। বর্তমানে তার এ ড্রাগন বাগানে ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করছেন। এসব শ্রমিকের মধ্যে তিনভাগের একভাগ নারী এবং বেশ ক’জন প্রতিবন্ধী শ্রমিকও।
প্রতিদিন বাগান থেকে ব্যবসায়ীরা ড্রাগন ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আশা করছেন, এ বাগান থেকে প্রায় বছরে ৮/১০ লাখ টাকা আয় করতে পারবেন। তার এ বাগানে প্রকার ভেদে লাল, গোলাপি ও সাদা রঙের ড্রাগন ফল রয়েছে। বাগান দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ আসছেন। আলফাজুল আলমের বাগান দেখে নতুন বাগান তৈরিতে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকে। এছাড়াও তিনি তেবাড়িয়ায় ড্রাগন ফলের চারার একটি নার্সারিও গড়ে তুলেছেন। যেখান থেকে তিনি দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রায় এক লাখ ড্রাগন চারা বিক্রি করেছেন।
তার সাফল্যের কথা জানতে চাইলে আলফাজুল আলম বলেন, হাতেকলমে বা পুঁথিগত প্রশিক্ষণ আমার তেমন নেই। বিভিন্ন চাষির সঙ্গে কথা বলি আর সরকারি দপ্তরে গিয়ে তাদের পরামর্শ নিয়ে আমি শ্রমিকদের দিয়ে করিয়েছি। আজ বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফল চাষ করে আমি সাফল্য পেয়েছি। আমি ভবিষ্যতে আরও বিশাল পরিসরে ড্রাগনের বাগান করব। এ ফল চাষে একদিকে যেমন দেশের ফলের চাহিদা পূরণ হচ্ছে অন্যদিকে চাষি লাভবান হচ্ছেন এবং দেশে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, এ ড্রাগন ফলে প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে। ডায়বেটিসসহ নানা
রোগ-প্রতিরোগে কাজ করে। আলফাজুল আলমের ড্রাগন ফল বাগান ছাড়াও রয়েছে, আপেল কুল, থাইকুল, বাওকুল, থাই পেয়ারা, কাজি পেয়ারা, এলাচি লেবু, কলম্ব লেবু, চায়না লেবু, বেদেনা ফলসহ নানা ধরনের দেশি-বিদেশি ফল বাণিজ্যিকভাবে তিনি চাষ করেছেন।
বাগান ঘুরতে আসা নতুন উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আলম ভাইয়ের বিশাল ড্রাগন বাগান দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। তার বাগানের প্রতি গাছে গাছে ড্রাগন এসেছে। তিনি সবক্ষেতে চমৎকার পরিকল্পনা করে কাজ করেন। ভবিষৎতে আমার বড় পরিসরে ফলের বাগান করার ইচ্ছা রয়েছে। তার সহযোগিতা ও পরামর্শ নিয়ে বাগান করতে চাই।
কৃষি উদ্যোক্তা আলফাজুল আলম বলেন, ‘আমি শূন্য হাতে কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই কৃষি কাজ শুরু করি। তখন আমার একটাই স্বপ্ন ছিল, কৃষিতে নিজেকে কীভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়। আমি বসে থাকিনি, দিনরাত পরিশ্রম করেছি। আজ বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ করে সাফলতা পেয়েছি।
প্রতি বছর এ বাগান থেকে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা আয় করছি। ভবিষ্যতে বিশাল পরিসরে নতুন নতুন ফলের বাগান করার ইচ্ছা আমার রয়েছে। আমরা যদি বিদেশে গিয়ে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেতাম, তাহলে কৃষিতে আমরা আরও এগিয়ে যেতাম। সরকার যদি কৃষি উদ্যোক্তাদের জন্য বিদেশি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। তাহলে দেশে কৃষি উৎপাদন আরও বাড়বে বলে আমি মনে করি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ড. ইয়াছিন আলী জানান, আলফাজুল আলম একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি কৃষিতে ব্যাপক উৎপাদনে ভূমিকা রাখছেন। তার উৎপাদিত ফল দেশের পুষ্টি চাহিদা পুরণ হচ্ছে, অন্যদিকে বেকার অনেক যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button