
নাটোর প্রতিনিধি : নাটোর শহরে মুখোশ, মশাল, মোটরসাইকেলসহ নাশকতার প্রস্তুতির অভিযোগে তাশরিক জামান রিফাত (২৪) নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। রিফাত নাটোর পৌর ছাত্রলীগের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সভাপতি। তিনি পৌরসভার হাফরাস্তা এলাকার মোস্তফা জামানের ছেলে।নাশকতা করার প্রস্তুতি নেওয়ার অভিযোগে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৭টায় রিফাতকে নাটোর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি পরিত্যক্ত ভবনের সামনে থেকে আটক করে পুলিশ থানায় নিয়ে যায়। এ সময় সেখানে নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশের দাবি, রিফাতসহ অন্যরা নাশকতা সৃষ্টির জন্য কেরোসিন ভেজানো বাঁশের তৈরি মশাল ও মুখোশ নিয়ে সংগঠিত হচ্ছিল।আটক তাশরিক জামান ২০২২ সালের ২৩ এপ্রিল গঠিত নাটোর পৌর ছাত্রলীগের ৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। পরে ওই কমিটি স্থগিত করা হয় বলে দলীয় সূত্র দাবী করেছে।
সদর আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল বলছেন, রিফাত বিএনপির এজেন্ট। বুধবারের অবরোধের সমর্থনে বিএনপির হয়ে নাশকতায় অংশ নিত তারা। জেলা ছাত্রলীগের নেতারা বলছেন, রিফাত ছাত্রলীগের কেউ নয়।
নাটোর সদর থানার ওসি নাছিম আহমেদ বলেন,‘মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্যে পুলিশ জানতে পারে শহরের হাফরাস্তা এলাকায় বুধবারের অবরোধের সমর্থনে গাড়িতে অগ্নিসংযোগের জন্য মশাল, মুখোশ ও গুলাল নিয়ে সংঘটিত হচ্ছে একদল যুবক। তখন ওই এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। এসময় সেখানে তিন যুবকের মধ্যে দুজন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়। সেখান থেকে রিফাতকে আটক করে পুলিশ। এসময় কেরোসিনে ভেজানো ৮টি বাঁশের তৈরি মশাল, মুখোশ ও গুলাল উদ্ধার করা হয়।আটক রিফাতের রাজনৈতিক পরিচয় জানা যায়নি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে সেখানে কী উদ্দেশে তারা একত্রিত হয়েছিলেন।
নাটোর থানা ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম আহম্মেদের নেতৃত্বে পুলিশ শহরের হাফরাস্তা এলাকায় একটি বাড়ির সামনে থেকে তাশরিককে আটক করে। পরে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে ওই বাড়ির একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে ছয়টি মশাল, তিনটি মুখোশ ও একটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করে।
এ সময় নাটোর-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম দলবল নিয়ে সেখানে হাজির হন। তিনি উপস্থিত লোকজনকে বলেন, তাশরিক বিএনপির লোক। তিনি শহরে বুধবারের (আজ) অবরোধ কর্মসূচি উপলক্ষে নাশকতা সৃষ্টির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। খবর পেয়ে সংসদ সদস্য পুলিশ ও প্রশাসনকে জানিয়ে ঘটনাস্থলে এসেছেন বলে জানান।
পুলিশ তখন হাতকড়া পরিয়ে তাশরিককে গাড়িতে ওঠায়। তখন তিনি ফেসবুক লাইভে বলেন, আমি ৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। আমি একটা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এটা তো অপরাধ হতে পারে না।
এ ঘটনার ছবি সংবলিত একটি ভিডিও, ২০২২ সালের ২৩ এপ্রিল গঠিত নাটোর পৌর ছাত্রলীগের ৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের কমিটি ও জেলা ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে তোলা তাশরিকের কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হতে শুরু করে। তাশরিকের বাবা মুঠোফোনে বলেন, তাঁর ছেলে ৭ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। সে কেন নাশকতার প্রস্তুতি নিতে যাবে? এসব ষড়যন্ত্র। দলের একটি পক্ষ তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরহাদ-বিন আজিজ বলেন, ছাত্রলীগের কোনো পৌর কমিটি নেই। ওয়ার্ড কমিটি থাকার প্রশ্নই ওঠে না। স্থগিত কমিটির সভাপতি ছিলেন কি না, তা খোঁজ নিয়ে বলতে পারবেন বলে তিনি জানান।
এদিকে তাশরিক জামান রিফাতকে সভাপতি করে ঘোষিত পৌর ছাত্রলীগের ওয়ার্ড কমিটির তালিকা পাওয়া গেছে। ২০২২ সালের ২৩ এপ্রিল ওই কমিটি অনুমোদন করেন পৌর ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি আব্দুল্লাহিল কাফী শুভ। এছাড়া কিছুদিন আগেও বর্তমান জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফরহাদ বিন আজিজের সঙ্গে একটি ছবিতে রিফাতকে দেখা যায়। তাকে আটকের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবিটি ভাইরাল হয়।