
মাঝ দিয়ে নদী বয়ে যাওয়া জাপানের শিকোকু দ্বীপের গ্রাম নাগোরো। দেশটির অন্যান্য গ্রামের সঙ্গে এর তফাত হলো এখানে মানুষ খুবই কম। জনা ত্রিশেক মানুষের গ্রামটিতে শেষ শিশুটির জন্ম হয়েছিল ১৮ বছর আগে। শেষ দুই শিক্ষার্থী ৬ষ্ঠ শ্রেণি পাস করার পর ২০১২ সালে গ্রামটির প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দরজাও বন্ধ হয়ে যায়।
তবে সম্প্রতি শরতের এক উজ্জ্বল দিনে সুকিমি আয়োনো নামের এক নারী স্কুলটিতে শিক্ষার্থী ফিরিয়ে এনেছেন। না মানুষ নিয়ে নয়, পুতুল দিয়ে। ৭০ বছর বয়সী এ বৃদ্ধা ৪০টিরও বেশি হাতে তৈরি পুতুল বন্ধ স্কুলটির মাঠে সাজিয়ে রেখেছেন; দৌড় প্রতিযোগিতা, দোলনা আর বল ছোড়া খেলার মাধ্যমে ফিরিয়ে এনেছেন জাপানি ক্যালেন্ডারে থাকা স্কুল স্পোর্টস ডে, ‘উনদোকাই’।
পুতুলের গ্রাম বলে খ্যাত নাগোরো আর সেখানে প্রাণোচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে আয়োনোর চেষ্টার কথা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
জাপানের জনসংখ্যা দিন দিন কমে আসছে ও অবশিষ্টরা বুড়িয়ে যাচ্ছে; পরিস্থিতির ধাক্কা এখন এমনকি দুর্গম এলাকাগুলোতেও টের পাওয়া যাচ্ছে, যেখানে নি¤œ জন্মহার উৎসাহিত হচ্ছে কর্মসংস্থানের অভাব এবং সমস্যাসংকুল জীবনযাপনের কারণে।
আয়োনো এবং তার বন্ধুরা এখানে ৩৫০-এর বেশি পুতুল বানিয়েছেন; যে সংখ্যা এখান মোট জনসংখ্যার প্রায় ১০ গুণ। কাঠ আর তারের কাঠোমো দিয়ে বানানো, খবরের কাগজ ও জাপানের বিভিন্ন স্থান থেকে পাওয়া পুরনো কাপড় দিয়ে বানানো এ পুতুলগুলো নাগারোর বিভিন্ন স্থানে প্রদর্শিত হচ্ছে। এসব পুতুলগুলোর মধ্যে কোনোটি বৃদ্ধ মহিলার, যিনি পথের ধারের কবরের দিকে যাচ্ছেন; কেউ বিশ্রাম নিচ্ছেন হুইলচেয়ারে। নির্মাণ শ্রমিকরা কাজের বিরতিতে সিগারেট ধরিয়েছেন, কেউ কেউ অপেক্ষা করছেন বাস স্টপে। এক বাবা বাচ্চাকাচ্চা ভর্তি গাড়ি নিয়ে চলছেন, কোথাও কেউ গাছ ধরে ঝাঁকাচ্ছেন।
স্কুলের ভেতর থাকা পুতুলগুলোর মধ্যে কোনো কোনোটি সিঁড়ির আশপাশে ঘোরাফেরা করছে, কেউ শিক্ষকের সামনে ডেস্কে বসে পাঠ নিচ্ছে। আয়োনোর পুতুলগুলোর মধ্যে আছে উচ্ছ্বাস, মনে হচ্ছে যেন সবই জীবন্ত। যে কারণে পুতুলভর্তি শহরের কথা শুনলে যেমন অদ্ভুত মনে হওয়ার কথা, তেমনটা মনে হচ্ছে না।
চার ভাইবোনের বড় আয়োনোও ১২ বছর বয়সে বাবার সঙ্গে ওসাকা চলে গিয়েছিলেন; তার বাবা জাপানের তৃতীয় বৃহত্তম শহরটির একটি খাদ্য কোম্পানিতে কাজ করতেন। আয়োনোর বিয়েও সেখানেই হয়; দুই সন্তানকে বড়ও করেন সেখানে। কাজ সেরে তার বাবা অসুস্থ শ্বশুর আর কিডনির সমস্যায় ভোগা স্ত্রীকে দেখভাল করতে নাগোরোতে ফিরে আসেন। আর ১৬ বছর আগে আয়োনো ফেরেন তার ৯০ বছর বয়সী বাবাকে দেখভালে। তাদের বাড়ির সামনে আয়োনো কিছু লাল মুলা ও মটর বীজ রোপণ করেছিলেন। পাখির হাত থেকে বাঁচাতে এরপর সেখানে বানান বাবার চেহারার কাকতাড়–য়া। তারপর থেকেই পুরো গ্রামে নানা জাগায় বসানো শুরু হয় পুতুল।