sliderবিনোদনশিরোনাম

নজরুল ইসলাম বাবু মুক্তিযোদ্ধা ও গীতিকবি

নজরুল ইসলাম বাবু “সব কটা জানালা খুলে দাও না”, “একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার” গানের মত অসংখ্য কালজয়ী গানের গীতিকার তিনি। ১৯৯১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত পদ্মা মেঘনা যমুনা চলচ্চিত্রের গীত রচনার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ গীতিকার বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।

নজরুল ইসলাম বাবু ১৯৪৯ সালের ১৭ জুলাই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জের চরনগর গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিকভিটা একই উপজেলার হেমাড়াবাড়ি গ্রামে। তার পিতা বজলুল কাদের এবং মাতা রেজিয়া বেগম। পিতা বজলুল কাদেরের সঙ্গীতানুরাগ ছোটবেলা থেকেই বড় সন্তান নজরুল ইসলাম বাবুকে প্রভাবিত করে। ১৯৮৪ সালের ২৩ নভেম্বর তিনি শাহীন আক্তারকে বিয়ে করেন। তাঁদের দু’টি কন্যা নাজিয়া ও নাফিয়া। ১৯৭১ সালে তিনি দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। দেশ স্বাধীন হলে তিনি আবার লেখাপড়া, সাহিত্য ও সংগীত চর্চা শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে বিএসসি ডিগ্রী লাভ করেন।

১৯৭৩ সালে তিনি বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে গীতিকার হিসাবে তাকিাভুক্ত হন। এরপর একে একে লিখতে থাকেন দারুন সব গান, যার মধ্যে ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’ এবং “একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার” অন্যতম। “সবকটা জানালা খোলে দাওনা” গানটি তৎকালিন সময়ে বাংলাদেশ টেলিভিশন এর খবর এবং বিভিন্ন সৃজনশীল অনুষ্ঠানের সূচনা সঙ্গীতে ব্যবহৃত হত। পরবর্তীতে এই গানটি পরিচালক কাজী হায়াৎ ১৯৯২ সালে সিপাহী ছবির টাইটেলেও ব্যবহার করেছিলেন। এই গানটি ছাড়াও নজরুল ইসলাম বাবু’র লিখা দেশাত্মবোধক গানগুলোও আজও বিভিন্ন জাতীয় দিবসে গাওয়া হয়। কণ্ঠশিল্পী দিলরুবা খানের কণ্ঠে ‘দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা’ গানটিও নজরুল ইসলাম বাবুর লিখা। তিনি বাংলাদেশ গীতিকবি সংসদের প্রথম কার্যনির্বাহী পরিষদ (১৯৭৮-৭৯) এর সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

১৯৭৮ সালে সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সাথে তিনি প্রথম চলচ্চিত্রে গান লিখতে শুরু করেন। তিনি দুই পয়সার আলতা (১৯৮২), মহানায়ক (১৯৮৫), প্রতিরোধ, উসিলা, পদ্মা মেঘনা যমুনা (১৯৯০), প্রেমের প্রতিদান চলচ্চিত্রের গানের কথা লিখেছেন। বাংলাদেশের সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, সুবীর নন্দী, এন্ড্রু কিশোরের পাশাপাশি ভারতের কুমার শানু, আশা ভোঁসলে, হৈমন্তী শুক্লার মতো উপমহাদেশের জনপ্রিয় ও কিংবদন্তীতুল্য শিল্পীরাও তার লেখা গানে কণ্ঠ দিয়েছেন।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ বেতার এবং ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে গীতিকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। নজরুল ইসলাম বাবু রচিত অসংখ্য গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গানগুলো হলো ‘হাজার মনের কাছে প্রশ্ন রেখে’, ‘কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো’, ‘আমার গরুর গাড়ীতে বউ সাজিয়ে’, ‘দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা’, ‘উত্তর-দক্ষিণ পূর্ব-পশ্চিম’, ‘কাঠ পুড়লে কয়লা হয়’, ‘আমার মন কান্দে ও আমার প্রাণ কান্দে’, ‘ডাকে পাখি খোল আঁখি’, ‘আমার এ দুটি চোখ পাথর তো নয়’, ‘আমার মনের আকাশে আজ জ্বলে শুকতারা’ ইত্যাদি। আর তার গান গেয়েছেন বশীর আহমেদ, সৈয়দ আবদুল হাদী, আশা ভোঁসলে , কুমার শানু , সুবীর নন্দী, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, শাম্মী আখতার, দিলরুবা খান, বেবী নাজনীন, সুখেন্দু চক্রবর্তী, এন্ড্রু কিশোর, কুমার বিশ্বজিৎ, শুভ্র দেবসহ অনেকেই।

নজরুল ইসলাম বাবু ১৯৯১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত পদ্মা মেঘনা যমুনা চলচ্চিত্রের গীত রচনার জন্য শ্রেষ্ঠ গীতিকার বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয় তাকে নিয়ে সংকলিত স্মারক গ্রন্থ নজরুল ইসলাম বাবু স্মারকগ্রন্থ। গ্রন্থটি সংকলন করেছেন আরেক গীতিকার মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান। তাকে সহায়তা করেছেন বাবুর স্ত্রী শাহীন আক্তার, ওবায়দুর বেলাল এবং শাফাত খৈয়ম। সংকলনটিতে তাকে নিয়ে বিশ জনের স্মৃতিচারণ এবং মূল্যায়ন রয়েছে। এছাড়া বাবুর দুর্লভ কিছু আলোকচিত্র এবং পঞ্চাশটি জনপ্রিয় গান যুক্ত করা হয়েছে। নজরুল ইসলাম বাবু ১৯৯০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।

তথ্যসূত্র্যঃ উইকিপেডিয়া

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button