sliderপরিবেশশিরোনাম

দেশের ৯০ ভাগ নদী নাব্যতা সংকটে ভুগছে: সবুজ আন্দোলন

বাংলাদেশের ৯০ ভাগ নদ—নদী নাব্যতা সংকটে ভুগছে বলে দাবি করেছে পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলন। ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ইং রবিবার সকাল ১০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ২য় তলার জহুর হোসেন মিলনায়তনে সবুজ আন্দোলন’র ৬ষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে “নদীর নাব্যতা সংকট দূরীকরণ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সরকার ও জনগণের করনীয় শীর্ষক আলোচনা সভা, প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপন ও গ্রিনম্যান অ্যাওয়ার্ড প্রদান” অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে সবুজ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান বাপ্পি সরদার এ কথা বলেন।

বাপ্পি সরদার বলেন, পৃথিবীর অন্যতম নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। অসংখ্য নদী বেষ্টিত বাংলাদেশ ইতিহাসের পাতায় সমৃদ্ধ জনপদ হিসেবে নদীর জন্য বিখ্যাত। নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়া আর বদ্বীপ হিসেবে ইতিহাসবিদদের কাছে এক স্বর্গরাজ্যের নাম বাংলাদেশ। সময়ের পরিক্রমায় নদীমাতৃক বাংলাদেশ অভিশপ্ত জনপদে পরিণত হয়েছে। চলতি আগস্ট মাসের ভয়াবহ বন্যা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে নদীর নাব্যতা সংকট চরম আকার ধারণ করেছে। চট্টগ্রাম বিভাগের আটটি জেলায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৩৫ লক্ষ জনগণ। দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ আন্দোলন পরিবেশ বিপর্যয় রোধে ভয়াবহতা তুলে ধরতে জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ করছে। সবুজ আন্দোলন তথ্য ও গবেষণা পরিষদ জেলা কমিটির মাধ্যমে জেলা ভিত্তিক গবেষণা চালিয়ে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক বন্যার ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে নদীর নাব্যতার সংকটকে প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশে বর্তমানে ১০০৮ টি নদী থাকলেও যার শতকরা ৯০ ভাগ নদী নাব্যতা সংকটে ভুগছে। ইতোমধ্যে দেশের শতাধিক নদী বিলীন হয়ে গেছে। ঢাকা বিভাগে ১৬৮ টি, বরিশাল বিভাগে ৯০ টি, খুলনা বিভাগে ১২৪ টি, রাজশাহী বিভাগের ১১০ টি, রংপুর বিভাগে ২৬৮ টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ১৩৫ টি, সিলেট বিভাগে.. নদী রয়েছে। সারা বাংলাদেশে ২৪১৪০ কিলোমিটার দূরে জলরাশি প্রবাহিত হয়েছে। নদীর পাড় দখল ও দূষণে জর্জরিত। জেলাভিত্তিক জরিপে দেখা গেছে শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত শতকরা ১০০ ভাগ নদী দখল ও দূষণের শিকার। সামগ্রিক অর্থে নদীর আর্থ—সামাজিক উন্নয়ন হতে পারতো বাংলাদেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি কিন্তু বর্তমানে তা গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষমতার সাথে জড়িত রাজনীতিবিদদের প্রত্যক্ষ ইন্দনে নদীর দখল বাণিজ্য পরিচালিত হচ্ছে।

বাপ্পি সরদার আরো বলেন, নদীর দখলও দূষণে পাশাপাশি জীববৈচিত্র্যও হুমকির মুখে পড়েছে। ২০১৫ সালের আইইউসিএন এর তথ্যমতে ৩১ প্রজাতির বন্যপ্রাণী দেশ থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। অসংখ্য বন্যপ্রাণী আজ হুমকির সম্মুখীন। আবাসস্থল যেমন নষ্ট হচ্ছে, ঠিক তেমনি নষ্ট হচ্ছে আবাসস্থলের গুনগত মান। যার ফলে তল্পিতল্পা গুটিয়ে হারিয়ে গিয়েছে অনেক প্রাণী। এছাড়াও প্রাকৃতিক পরিবেশ, বন নষ্ট করে গড়ে উঠেছে অনেক স্থাপনা। আর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নীরব ঘাতক গুলো ক্রমাগত আক্রান্ত করছে বাস্তুতন্ত্রকে। আজ থেকে বছর দশ আগেও চারপাশে যে জীব বৈচিত্র্যের সমাহার ছিলো, তা কি আজ আছে? বাড়ির পাশেও যে ঘন জঙ্গল ছিলো, সেই জঙ্গল কি এখনও সবুজ?

বর্তমানে অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সবুজ আন্দোলনের পক্ষ থেকে বেশ কিছু উপস্থাপনা তুলে ধরা হলো:.
১। আন্তর্জাতিক নদীতে উজানের দেশ কর্তৃক বাঁধ নির্মাণ বন্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং নদীর নাব্যতা সংকট দূরীকরণের জন্য নতুন বাজেট প্রণয়ন করে নদী খনন শুরু করা।
২। দেশের সকল নদীর সীমানা নির্ধারণ ও অবৈধ দখলদারিত্ব উচ্ছেদ করা।
৩। নদীমাতৃক অর্থনৈতিক গুরুত্ব তৈরি করতে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পিত আবাসন নীতি মালা প্রণয়ন করতে হবে।
৪। বিলুপ্তপ্রায় নদীর গতি ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি ম্যাপে যে সকল নদীর অস্তিত্ব রয়েছে তা পুনরায় খননের ব্যবস্থা করা।
৫। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বন্যপ্রাণী যাতায়াতে আন্ডারপাস করিডোর নির্মাণ করতে হবে।
৬। শক্তিশালী ও স্বাধীন বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশন বাস্তবায়নে লোকবল নিয়োগ, দোষীদের শাস্তি প্রদানে আইনগত ক্ষমতা প্রয়োগের বিধান রেখে আইন সংস্কার করতে হবে।
৭। জলাশয় ভরাট বন্ধে দেশের সকল জলাশয় চিহ্নিতকরণ, সীমানা নির্ধারণ ও খননের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
৮। পরিবেশবাদী সংগঠন, গবেষক ও পরিবেশ সাংবাদিকদের সমন্বয়ে সরকারিভাবে এস্টেক হোল্ডার বডি তৈরি করে মাসিক সেবা চালু করতে হবে।
৯। পরিবেশ বিষয়ক গবেষণায় জোরদার করতে জাতীয় বাজেটে সুনির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ করার পাশাপাশি সকল প্রকার দুর্নীতি বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে পরিবেশ সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখায় ৮ বিশিষ্ট নাগরিককে গ্রিনম্যান অ্যাওয়ার্ড—২০২৪ প্রদান করা হয়। তারা হলেন— বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ ফিরোজ জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ গোলাম সরোয়ার, বন পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টার এপিএস ও বন্যপ্রাণী গবেষক আশিকুর রহমান সমী, একুশে টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার এস এম মফিউর রহমান, এটিএন নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার ফেরদৌস রহমান, প্রাণ—প্রকৃতি বিষয়ক সাংবাদিক ও সংরক্ষণকর্মী, বেঙ্গল ডিসকাভার আমিনুল ইসলাম মিঠু, দেশ টিভির রিপোর্টার জান্নাতুল ফেরদৌস মোহনা।

অনষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড মজিবুর রহমান হাওলাদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড মোঃ জসিম উদ্দিন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোঃ ফিরোজ জামান,জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড কবিরুল বাশার, আরবান ও রিজিওনাল প্ল্যানিং বিভাগের অধ্যাপক ড আদিল মুহাম্মদ খান, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ প্লানার্সের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ গোলাম সরোয়ার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন মাতৃভূমি গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা এ বি এম হানিফ মাস্টার ,অর্থ পরিচালক মোঃ ফিরোজ আলম, সবুজ আন্দোলন মহাসচিব মহসিন সিকদার পাভেল, অর্থ পরিচালক নিলুফার ইয়াসমিন রুপা, পরিচালক উদয় খান, শেখ এনামুল হক রনি, নারী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাহিন আরা সুলতানা, সবুজ আন্দোলন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক মোরছালীন ইসলাম বাবু, অর্থ সম্পাদক আলমগীর হোসেন পলাশ প্রমুখ। এছাড়াও ছাত্র পরিষদ, নারী পরিষদ ও মহানগর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রেস বিজ্ঞপ্তি

Related Articles

Leave a Reply

Back to top button